‘আমি জয়ী হলে বাংলাদেশ জয়ী হবে’
দৈনিক সিলেট ডট কম
এনআরবি নিউজ, নিউইয়র্ক থেকে : মার্কিন কংগ্রেসে একজন বাংলাদেশীর বিজয়ে আরেকটি সম্ভাবনা তৈরী হয়েছে নিউইয়র্কের মিজান চৌধুরীকে ঘিরে। কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্ট-৫ থেকে মিজান রহমান লড়ছেন বর্তমান কংগ্রেসমান গ্রেগরী মিক্স (ডেমক্র্যাট) এর বিরুদ্ধে। গত ২০ বছর অর্থাৎ ১৯৯৮ সাল থেকে টানা ১০ টার্ম যাবত নির্বাচিত হয়ে আসা অফ্রিকান-আমেরিকান গ্রেগরী মিক্স-এর বিরুদ্ধে বিবিধ অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্ত ছাড়াও এলাকার মানুষের সাথে সম্পর্কহীনতার ফসল ঘরে তুলতে চান মিজান। এমন প্রত্যাশা শুধু বাংলাদেশীদেরই নয়, আফ্রিকান-আমেরিকান, হিসপ্যানিক, হেসিয়ান, চায়নিজসহ দক্ষিণ এশিয়ানদের। কারণ, সচেতন ভোটাররা চান না যে, তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি অনিয়ম-অপকর্মে লিপ্ত হউক। এলাকাবাসীর সমস্যা সমাধানে যার ন্যূনতম আগ্রহ নেই-এমন ব্যক্তিকে ব্যালটে ধরাশায়ী করার মধ্যে অন্য রকমের এক আনন্দ রয়েছে। গ্রেগরী মিক্সকে সেভাবেই সরিয়ে দেয়ার স্লোগান উঠেছে নিউইয়র্ক সিটিতে সবচেয়ে বেশী বাংলাদেশী অধ্যুষিত জ্যামাইকা, রিচমন্ডহীল, কুইন্স ভিলেজ, ওজনপার্ক, সেন্ট আলবেন্স, লোরেলটন, ভ্যালি স্ট্রিম, হলিস, জ্যামাইকা এস্টেট, রোচডেল ভিলেজ, এবং এলমন্ট এলাকায়। নতুন প্রজন্মের বাংলাদেশীসহ দক্ষিণ এশিয়ানরা স্বেচ্ছায় কাজ করছেন মিজানের পক্ষে। ফোন ব্যাংক ছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুমুল আলোচনা চলছে ২৬ জুন মিজানকে ভোট প্রদানের জন্যে। সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ভোট গৃহিত হবে ডেমক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী বাছাইয়ের নির্বাচন তথা প্রাইমারিতে।
১৯ জুন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসে ‘মীট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে মিজানের নির্বাচনী প্রচার কমিটির চেয়ারপার্সন ফখরুল আলম এবং ক্যাম্পেইন ম্যানেজার এটর্নী সোমা সাঈদ এসব তথ্য উপস্থাপন করেন।
এ সময় লিখিত বক্তব্য উপস্থাপনকালে মিজান চৌধুরী বলেন, ‘এই নির্বাচনী এলাকায় রেজিস্টার্ড ডেমক্র্যাট ভোটারের মধ্যে কমপক্ষে ১৫ হাজার রয়েছেন বাংলাদেশী-আমেরিকান। গত দুই টার্মের প্রাইমারিতে বিজয়ী গ্রেগরী মিক্স পেয়েছেন ২০১৪ সালে ৮ হাজার এবং ২০১৬ সালে ৭০৫০ ভোট। অর্থাৎ অন্য কোন কম্যুনিটির ভোটেরও প্রয়োজন নেই প্রাইমারিতে জয়ী হতে। এতদসত্বেও চীনা, ভারতীয়, শ্রীলংকান, পাকিস্তানী, জ্যামাইকান, গায়নিজ, আফ্রিকান, মেক্সিকান, হেসিয়ানরাও মিক্সকে ঠেকাতে মাঠে নেমেছেন।
মিজান উল্লেখ করেন, ডেমক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী বাছাইয়ের এই নির্বাচনে কার্ল আচিলে নামক আরেক শ্বেতাঙ্গ রয়েছেন। তবে তার কোন তৎপরতা নেই। অর্থাৎ মাঠ এখন আমার পক্ষে। ২৬ জুন মঙ্গলবার সকলে কেন্দ্রে গেলেই বাংলাদেশের বিজয় হবে। মিজান বারবার বলেন, ‘ব্যক্তি মিজান নয়, এটি হচ্ছে বাংলাদেশীদের নির্বাচন। জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হবার এমন সম্ভাবনা খুব কময়েই এসে থাকে। কারণ, এ এলাকাটি ডেমক্র্যাটদের। যোগ্যতাসম্পন্ন অনেক লোক থাকলেও এবার মাঠে নামেননি।’
মিজান বলেন, ‘বেকারত্ব হ্রাসে আমার বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা রয়েছে। স্বল্প আয়ের মানুষদের আবাসন ব্যবস্থার পাশাপাশি চিকিৎসা-সুবিধায় সুদূর প্রসারি পরিকল্পনা রয়েছে। যার মধ্য দিয়ে সকলেই স্বাস্থ্যসেবা পাবেন। অভিবাসীদের অধিকার ও মর্যাদার প্রশ্নে আমি সবসময় সোচ্চার থাকবো। বিশেষ করে, ট্রাম্প প্রশাসনের গণ-বিরোধী ও অভিবাসন-বিরোধী সকল পদক্ষেপ রুখে দিতে কার্পণ্য করবো না।
মিজান বলেন, বিচার ব্যবস্থায় সংস্কার সাধনের মধ্য দিয়ে কারাগারে কয়েদীর সংখ্যা হ্রাসের পরিকল্পনাও রয়েছে। ছোট-খাটো তথা মামুলি অপরাধীদের কারাগারে রেখে জাতীয় তহবিলের অপচয় রোধ করতে হবে।
মিজান বলেন, ব্যক্তিগতভাবে একজন অভিবাসী হওয়ায় সবকিছু আমার নখদর্পণে। তাই বাংলাদেশীদের অধিকার সুরক্ষণায় আমি কাজ করবো সকলের সমর্থনে।
বাংলাদেশী মিডিয়ার অকুন্ঠ সমর্থনের প্রশংসা করেন মিজান। বলেন, জ্যামাইকান, গায়নিজ, পাকিস্তানী, মেক্সিকান, স্প্যানিশ এবং মূলধারার মিডিয়া থেকে অকুন্ঠ সমর্থন পাচ্ছি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রিসহ নিউইয়র্কে আসার পর আমেরিকান স্বপ্ন পূরণের স্বার্থে আইটি স্কুলে ভর্তি হন এবং দিনে কাজ করে সন্ধ্যায় ক্লাস নেন। এভাবেই নিজেকে কর্পোরেট ওয়ার্ল্ডে কাজের যোগ্য করেন। গত ১৮ বছর যাবত কাজ করছেন একটি কোম্পানীর শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা হিসেবে। সে অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েই অভিবাসী সমাজের কল্যাণে কাজ করবেন বলে অঙ্গিকার করেন মিজান।
মীট দ্য প্রেসে ক্যাম্পেইন কমিটির কর্মকর্তাগণের মধ্যে আরো ছিলেন এডভোকেট মজিবর রহমান, আনোয়ার হোসেন, আজহারুল হক মিলন প্রমুখ।
এর আগে মিজান রমজানের প্রায় প্রতিটি ইফতার মাহফিলেই অংশ নেন। এগুলো ছিল বিভিন্ন দেশের মুসলিম সম্প্রদায়ের। পাশাপাশি মন্দির, গীর্জাতেও গমন করছেন।
নিজের নির্বাচনী এলাকা তথা জ্যামাইকায় সবচেয়ে বড় ঈদ জামাতে বক্তব্যের সময় মিজান চৌধুরী বলেন, “আপনারা আমাকে একবার সুযোগ দিন। আমি প্রমাণ করবো সিডি-ফাইভ (কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্ট-৫) এলাকায় দ্রুত উন্নয়ন আর কর্মসংস্থানে ব্যবস্থা হয়।’’ তিনি সাধারণ মানুষের কাছে দোয়া এবং ভোট চান। সাধারণ সকলেই তাকে সমর্থন প্রদান করেন।
উত্তর আমেরিকায় নবীনতম পত্রিকা ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’র পক্ষ থেকেও মিজানকে সমর্থন ব্যক্ত করা হয়েছে।
এদিকে কম্যুনিটি ফার্স্ট-এর নেতৃবৃন্দ মিজান চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাকে সমর্থন প্রদান করেন। জ্যামাইকায় তার প্রধান নির্বাচনি অফিসে গত ১৬ জুন তারা এক বৈঠক শেষে মিজানের প্রতি উদাত্ত সমর্থন জানান। তারা বলেন, ‘আমরা কম্যুনিটির জন্য এমন একজন প্রার্থী চাই যিনি সাধারণ মানুষের হয়ে কাজ করবেন। ২৬ জুনের নির্বাচনে মিজান চৌধুরীকেই আমরা যোগ্য প্রার্থী বলে মনে করছি। তাকে বিজয়ি করা এখন আমাদের সবার কাজ।’
এ সময় ক্যাম্পেইন ম্যানেজার এটর্নি সোমা সাঈদ এবং আইটি পরিচালক শেখ গালিব রহমান উপস্থিত ছিলেন। পরে সকলে এক ফটোসেশনে অংশ নেন।
এদিকে নিউইয়র্কে শিখ সম্প্রদায়ের শির্ষ নেতৃবৃন্দ মিজানকে বিজয়ি করার জন্য তাদের সম্প্রদায়ের প্রতি আহবান জানান।
শিখ গুরুদোয়ারায় গত ১৭ জুন সকালে পৌঁছলে সম্প্রদায়েরর শীর্ষ নেতৃবৃন্দ তাকে স্বাগত জানান। পরে মিজান চৌধুরী শত শত শিখ ধর্মপ্রাণ মানুষের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, ‘সিডি ফাইভ এলাকায় যিনি কংগ্রেসম্যান তিনি কখনোই সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করেন না। তার নামও কেউ বলতে পারেন না। কারণ কারো সঙ্গেই তার কোন যোগাযোগ নেই। তিনি কম্যুনিটিতে ২০ বছর ধরে আছেন। অথচ তাকে কেউ পাশে পান না। যে কারণে এই ডিষ্ট্রিক্টে বেকারত্বের সংখ্যা বেড়েছে ব্যাপকভাবে। বাসস্থান সমস্যা প্রকট। মানুষ চায় নিরাপত্তা আর নিজের কর্মসংস্থান। আমরা একটি টেকনোলজি পার্ক করে এই বেকারত্ব দূর করতে পারি। নির্বাচিত হয়ে আমি আপনাদের জন্য কাজ করবো।’
রিচমন্ড হিল এ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মিজান চৌধুরী বলেন, আমি সাধারণ অবস্থান থেকে উঠে আসা মানুষ। আমি নির্বাচিত হয়ে আপনাদের মাঝেই থাকবো। তাই আপনারা একজন যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিন। যিনি মানুষের জন্য কাজ করবেন। যিনি নির্বাচিত হয়ে মানুষ থেকে দূরে চলে যায় তাকে চিনে রাখার এটাই সময়। টাইম ফর চেঞ্জ।’
এদিকে রিচমন্ড হিলসহ বিভিন্ন মন্দির ও চার্চে মিজান চৌধুরী ধর্মপ্রাণ মানুষের সঙ্গে মিলিত হন এবং মতবিনিময় করেন। তারা আগামী দিনে মিজানকে তাদের যোগ্য প্রার্থী হিসেবে সমর্থন জানান।
ওজনপার্কে গত ১৮ জুন রাতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আয়োজিত ঈদ পুনর্মিলনি অনুষ্ঠানে মিজান চৌধুরী প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, তরুণ ও যুবকদের জন্য আমরা টেকনোলজি পার্ক নির্মাণ করার উদ্যোগ নেব। এটি আমার অন্যতম ওয়াদা। আপনারা এগিয়ে আসলে এই সম্প্রদায় উজ্জিবিত হবে। আগামী দিনের নতুন নেতৃত্ব বের হয়ে আসবে। পরে ছাত্র লীগের পক্ষ থেকে তাকে সংবর্ধনা দেয়া হয়।
জ্যাকসন হাইটস-এর একটি রেস্টুরেন্টে সিলেট মৌলভিবাজার জেলা সমিতি মিজান চৌধুরীর সমর্থনে এক সভার আয়োজন করে। এ সময় কমিটির সকল সদস্য উপস্থিত থেকে তাকে সমর্থন জানান। মিজান চৌধুরী বলেন, ‘আমি মনে করি গোটা বাঙালি জাতি এই নির্বাচনে লড়ছে। আমি আপনাদের প্রতিনিধি হয়ে উন্নয়নের কাজ করতে চাই। আপনারা আমাকে সমর্থন দিলে গোটা কম্যুনিটি উপকৃত হবে।’
প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য, এই নির্বাচনী এলাকার ৮০% এর বেশী ভোটার হলেন ডেমক্র্যাট। অর্থাৎ দলীয় মনোনয়ন পেলেই ৬ নভেম্বরের চ’ড়ান্ত নির্বাচনে জয়ী হবার পথ সুগম হয়।