বাংলাদেশ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার নিশ্চিত করেছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
প্রকাশিত হয়েছে : 9:08:39,অপরাহ্ন 19 July 2019
দৈনিকসিলেটডটকম:পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষায় সরকার বদ্ধপরিকর। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে অনুপ্রাণিত বাংলাদেশ সর্বস্তরের মানুষের ধর্মীয় অধিকার বজায় রাখতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
ড. মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ ধর্মীয় বহুত্ববাদ ও সংখ্যালঘুদের অধিকার নিশ্চিত করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে ‘ধর্মীয় স্বাধীনতায় অগ্রগতি’ শীর্ষক তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলনের শেষ দিনে দেওয়া বক্তব্যে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেনপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে যেকোনো অজুহাতে যেকোনো ধরনের সহিংসতা ও বৈষম্যের প্রতি কীভাবে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করছে এবং বাংলাদেশে চরমপন্থার উত্থান সফলভাবে রোধ করেছে তা বিস্তারিত তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এর ফলে বাংলাদেশের আর্থ-সামজিক ক্ষেত্রে অসাধারণ উন্নতি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এছাড়া, অসাম্প্রদায়িকতা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পাশাপাশি ধর্মীয় সহিষ্ণুতার প্রসার এবং সব ধর্মের মধ্যে মানিয়ে নেয়ার মনোভাব সৃষ্টি করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় স্লোগান ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’ প্রচলন করেছেন বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সারাবিশ্বে টেকসই শান্তি ও স্থিতির স্বার্থেই সকলকে সংকল্পবদ্ধ হতে হবে। সহনশীলতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ সর্বক্ষেত্রে জাগ্রত রাখতে হবে। ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নয় মানবতাকে প্রাধান্য দিতে হবে। তাহলেই সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন-পরিক্রমা ত্বরান্বিত হবে।
শুধু ওয়াশিংটন ডিসিতে নয়, আঞ্চলিক পর্যায়েও এ ধরনের ধর্মীয় স্বাধনতা সম্মেলন করার পরামর্শ দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, শিগগির বাংলাদেশ এই সম্মেলনের হোস্ট হতে আগ্রহী। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবসময় বিশ্বাস করেন যে, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার এবং সে চেতনায় সবকিছু হচ্ছে বাংলাদেশে। সকল ধর্ম এবং জাতি-বিশ্বাসের মানুষ কোন ধরনের ভয়-ভীতি ছাড়া নিরাপদে মর্যাদার সাথে জীবন-যাপন করতে সক্ষম হয়-এমন একটি পরিবেশ তৈরির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের আন্তরিক এই উদ্যোগের অংশিদার হতে পেরে বাংলাদেশও গৌরববোধ করছে।
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের নৃশংসতা প্রসঙ্গে ড. মোমেন বলেন, জাতির পিতাকে সপরিবারে নিষ্ঠুরভাবে হত্যার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা চলেছে। ধর্মের নামে উগপন্থিরা বাংলাদেশকে একটি জঙ্গিরাষ্ট্রের তকমা দিতে চেয়েছিল। কিন্তু ওরা পারেনি। বঙ্গবন্ধু কন্যার সাহসী নেতৃত্বে বাংলাদেশ পুনরায় একাত্তরের চেতনায় ফিরেছে। ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা নিরাপদে-নির্বিঘ্নে তাদের ধর্ম-কর্ম সম্পাদনে সক্ষম হচ্ছেন। নানা প্রতিবন্ধকতা সত্বেও বাংলাদেশের ধর্মীয়-সম্প্রীতি আজ সর্বমহলে প্রশংসিত হচ্ছে। ধর্মের কারণে কেউ যাতে বিমাতাসূলভ আচরণের শিকার না হন, ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে কেউ যাতে সহিসংসতা চালাতে না পারে সেজন্যে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করা হয়েছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে। দেশে দেশে সন্ত্রাসবাদ এবং জঙ্গিবাদে লিপ্তরা শুধু একটি ধর্ম-বিশ্বাসী লোক নয়, তারা বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণ-গোত্রের মানুষ। অর্থাৎ ওরা মানবতার শত্রু। ওদেরকে প্রতিহত করতে বিবেকসম্পন্ন সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
বাংলাদেশে ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য মার্কিন সরকার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ধন্যবাদ জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন।
এসব মানুষকে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য মিয়ানমারের ওপর চাপ বৃদ্ধি করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
রোহিঙ্গা সংকট সমাধান এবং মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে চালানো নৃশংসতার জন্য দায়ী অপরাধীদের জবাবদিহি আদায়ে দৃঢ় অবস্থানে থাকার কথা পুনরায় ব্যক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স তার দেশের এ অবস্থান তুলে ধরেছেন। সেই সঙ্গে তিনি মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
পেন্স মূল বক্তব্য দেন বলে শুক্রবার এক সংশোধিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন বৈঠকে যোগ দেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও’র আমন্ত্রণে ৪০ জন পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ ১০৬ দেশের প্রতিনিধি বৈঠকে অংশ নেন।
বৈঠকে পম্পেও জোর দিয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতির শীর্ষ অগ্রাধিকার হিসেবে রয়েছে সবার জন্য ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।
মার্কিন সংবিধানে প্রতিফলিত হওয়া চিন্তা, বিবেক ও ধর্মের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে তিনি যৌথ প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন সম্মেলনের ফাঁকে হাঙ্গেরি, ইরাক, বাহরাইন ও মাল্টার পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ইউএনবি