মুহিত চৌধুরী একজন সৃজনশীল সাহিত্যিক
দৈনিক সিলেট ডট কম
সাঈদ চৌধুরী: মুহিত চৌধুরী একজন সৃজনশীল সাহিত্যিক। উন্নয়ন সাংবাদিকতায় বিশ্বাসী সামাজিক মূল্যবোধ সম্পন্ন লেখক। লেখালেখির প্রায় প্রতিটি অঙ্গনে রয়েছে তার সরব পদচারনা। তিন দশকের বেশি সময় ধরে যুক্ত আছেন সাহিত্য-সাংবাদিকতায় সাথে। লিখেছেন অনেক কবিতা, প্রবন্ধ, গল্প, উপন্যাস ও নাটক।
মুহিত চৌধুরীর প্রকাশিত গ্রন্থ গুলো হচ্ছে- প্রতিশোধ নেব না (নাটক), সানাই কথা বললো না (কবিতা), নির্লেজ্জর লজ্জা (কবিতা), আমেরিকায় বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি (গবেষণা), যদি ভালোবাসা মরে যায় (কবিতা), সহজ হজ্জ্ব গাইড (ধর্ম বিষয়ক), ফিরে আসা (উপন্যাস), কসম সিনাই পর্বতের (কবিতা), পাখি গেলে পোকার বাস (গীতি সংকলন), বাংলাদেশে অনলাইন সাংবাদিকতা (প্রবন্ধ), এইঘর এই মন (উপন্যাস)।
অনলাইন নিউজ পোর্টাল দৈনিক সিলেট ডটকম ও মাসিক বিশ্ববাংলার সম্পাদক কবি মুহিত চৌধুরীর একজন ভাল সংগঠক।সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের তিনি প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।২০১৪ সালে তার হাতেই এই ক্লাবের জন্ম।
বাংলাদেশ বেতার সিলেটের একজন প্রসিদ্ধ গীতিকার ও নাট্যকার তিনি। এ পর্যন্ত কয়েক শতাধিক গান লিখেছেন। তার লেখা গানগুলো নিয়ে ২০১০ সালে প্রকাশিত হয় ‘পাখি গেলে পোকার বাস’ শিরোনামে গীতি সংকলন। বেতার ও টিভিতে তার অনেকগুলো নাটক প্রচারিত হয়েছে।
মুহিত চৌধুরী রচিত গীতি সংকলন প্রসঙ্গে বিশিষ্ট গবেষক প্রফেসর নন্দলাল শর্মা বলেছেন, ’সিলেট হল গানের স্বপ্নরাজ্য। এই রাজ্যে এখনও বিচরন করছেন মরমী ফকির। সংসার বিবাগী না হয়েও অনেকে মরমী রাজ্যে বিচরণ করে আমাদের সংগীত জগতকে সমৃদ্ধ করেছেন। একুশ শতকে এসেও মরমী গানের ধারা সিলেটে সজীব ও প্রবাহমান। এ ধারার একজন উল্লেখযোগ্য গীতিকবি মুহিত চৌধুরী। কবি গীতিকার-ঔপন্যাসিক-নাট্যকার-গবেষক ও সম্পাদক নানা পরিচয় তার। দীর্ঘকাল ধরে তিনি গান লিখেছেন। মরমীগান, পল্ল্লীগীতি আধুনিক প্রভৃতি বিচিত্র ধরনের গান তিনি সমান দক্ষতায় লেখেন।
১৯৯৪ সালে প্রকাশিত মুহিত চৌধুরীর একটি কবিতার কয়েকটি লাইন ছিল – ”অনেক কবিতা লেখা হয়েছে/ আসুন আমরা এবার নজরুলের মতো কবিতা লিখি/ ওমরের মতো কবিতা লিখি,/ নেলসন ম্যান্ডেলার মতো কবিতা লিখি/ এবং অগ্নিকন্যা সুকীর মতো কবিতা আবৃত্তি করি”
পরে অবশ্য সুকীর নাম তার কবিতা থেকে প্রত্যহার করে নিয়েছেন।মিয়ানমারের সেনাবাহিনী কর্তৃক রোহিঙ্গা মুসলমানদের প্রতি অমানবিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে কোন প্রকার ব্যবস্থা না নিয়ে রাষ্ট্রিয় মদদ দেয়ায় একজন মানবতাবাদী কবি হিসেবে তিনি তা করেছেন। আর এজাতীয় গুনের স্বীকৃতিও পেয়েছেন তিনি।১৯৯৫ সালে মানবতাবাদী কবিতা লিখে যুক্তরাষ্ট্রের ’দ্যা ন্যাশনাল লাইব্রেরী অব পোয়েট্রি’ থেকে এডিটর চয়েজ এওয়ার্ড লাভ কেরেছেন।
ভালো সাহিত্যিক হতে হলে ভালো পাঠক হতে হয়। মুহিত চৌধুরী প্রচুর পড়াশোনা করেন। সাহিত্যে আবার উপলব্দিবোধ না থাকলে কোনো পাঠই কাজে আসে না। এই উপলব্ধিবোধ থেকেই সচেতনতা সৃষ্টি হয়। মুহিত চৌধুরীর বোধশক্তি প্রখর। অল্প বয়স থেকে লেখালেখি শুরু করেছেন তিনি। তখনকার লেখায়ও শিল্পবস্তুর অন্তরের সৌন্দর্য অতি সহজে প্রত্যক্ষ করা যায়। তার শব্দ প্রয়োগ চমৎকার আর রচনায় সরলতা লেখক হিসেবে দায়িত্বশীলতার পরিচায়ক। লেখায় তিনি পাঠকের বোধগম্যতার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করেন।
একজন ডাক্তার সবগুলো রোগ সম্পর্কে কম বেশি জ্ঞান রাখেন। এরপরও স্পেশালিস্ট বলতে একটা কথা থাকে। মুহিত চৌধুরী সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় কাজ করেন। যদিও কবি হিসেবেই তিনি সমধিক পরিচিত। তবে সাহিত্যে কোনটাকে আধিক্য দেবেন, তাকেই সেটি নিশ্চিত করতে হবে। স্পেশাল ব্যাপারটা একজন ডাক্তারের সিকিৎসা সেবায় বিশেষ অবদান রাখতে সক্ষম। সাহিত্যিকদের মধ্যেও এধরনের বিশেষত্ব থাকা চাই।
সাহিত্য ও সামাজিকতা সমান্তরালে চালিয়ে যাওয়া সহজ নয়। মুহিত চৌধুরী তা করেন। এখানেই তিনি ব্যতিক্রম। যদিও তা একে অন্যের পরিপূরক। কিন্তু সব লেখকের পক্ষে তা হয়ে ওঠেনা। সাংবাদিকতায়ও সামাজিকতার বিষয়টি তিনি ধরে রেখেছেন।আর উন্নয়ন সাংবাদিকতায় তিনি আজীবন বিশ্বাসী।সরকারী বেসরকারী সকল উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ডে তাকে সামনের কাতারে দেখা যায়।ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সৃষ্টিশীল কর্মকান্ডে সব সময় ইতিবাচক মানসিকতা লালন করেন তিনি।
মুহিত চৌধুরী নিজের চিন্তাগুলোকে শুধু মলাটবদ্ধ করে জনগনের মাঝে পৌঁছে দেওয়াকে যথেষ্ট মনে করেন না। এর মাধ্যমেই তিনি স্বপ্ন দেখেন সমাজ পরিবর্তনের। যুদ্ধের মাধ্যমে রাষ্ট্র বদল বা নতুন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব, কিন্তু সমাজ বদলের যুদ্ধের প্রকৃতি ভিন্ন। তার রণাঙ্গন যেমন সমাজ-বাস্তবতার উপরি কাঠামোয় ছড়ানো, তেমনি সমাজ মানসের অন্দর জুড়েও বিস্তৃত। স্বভাবতই কাজটা কঠিন। সমাজ বিকাশের জন্য চাই অবাধ জ্ঞানচর্চা, উচ্চতর গবেষণা ও সৃজনশীলতার মুক্ত পরিবেশ। আর পুরোনো অভ্যাসের অচলায়তনকে চ্যালেঞ্জ করে নতুন কথা বলার মতো মানুষের প্রয়োজন। সাহসী ভাবুক, চমকে দেওয়ার মতো নতুন চিন্তকের প্রয়োজন। কবি মুহিত চৌধুরী তাদেরই একজন।
আজ ২ নভেম্বর কবি মুহিত চৌধুরীর জন্মদিনে জানাই অফুরান শুভ্ছো।সৃষ্টিশীল কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে তিনি শতায়ু হোন।