ইতিহাস ও কিংবদন্তির মহাস্থানগড়

বগুড়ার মহাস্থানগড় বাংলার সর্বপ্রাচীন জনপদ। ইতিহাস বলছে, আড়াই হাজার বছর আগে গড়ে ওঠা সমৃদ্ধ জনপদের পুণ্ড্রর্বধনের রাজধানী পুণ্ড্রনগর কালক্রমে মহাস্থানগড় হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। ১৫ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত মহাস্থানে এখন পর্যন্ত ছোট-বড় ৩২টি প্রত্নস্থানের সন্ধান পাওয়া যায়। পর্যটনস্থলগুলোর মধ্যে প্রত্ন জাদুঘর, পরশুরামের রাজপ্রাসাদ, শাহ সুলতানের মাজার, বেহুলার বাসরঘর উল্লেখযোগ্য।

মহাস্থানে ফুলের বাগানে ঘেরা প্রত্ন জাদুঘরে ঢুকতেই চারপাশে দেখা যাবে প্রাচীনকালের অলংকৃত পাথর, স্তম্ভের পাদবেদি, কালো পাথরের স্তম্ভসহ অসংখ্য নিদর্শন। নানা সময়ের মুদ্রা, গহনা, দেব-দেবীর মূর্তি, আসবাবসহ অসংখ্য পোড়ামাটির ফলক সংরক্ষিত রয়েছে এখানে। স্থানীয় ইতিহাস ও কিংবদন্তিগুলোর যোগসূত্র আবিষ্কারে এই জাদুঘর পরিদর্শন বড় ভূমিকা রাখছে। জাদুঘরের পাশেই রয়েছে গোবিন্দ ভিটা। শব্দগতভাবে এটি দেবতা বিষ্ণুর আবাস।

মহাস্থানগড়ে আবিষ্কৃত প্রাচীন সভ্যতার অন্যতম এক নিদর্শনের নাম রাজা পরশুরামের রাজপ্রাসাদ। রাজা পরশুরাম এ অঞ্চলের শেষ সনাতন ধর্মাবলম্বী রাজা বলে জানা যায়। শাহ সুলতান বলখীর সঙ্গে এক যুদ্ধে তাঁর মৃত্যু হওয়ার পর এলাকায় মুসলমানদের আধিপত্যের সূচনা ঘটে। এই রাজার সঙ্গে নানা কিংবদন্তি জড়িয়ে আছে। যেমন, জিয়ৎকূপের কিংবদন্তি। বলা হয়, শাহ সুলতান বলখীর সঙ্গে যুদ্ধের সময় নিহত সৈনিকদের এই কূপের জলের সংস্পর্শে এনে জীবিত করা হতো। পরে শাহ সুলতান বলখীর ঈগল পাখি এসে কূপে এক টুকরো গোমাংস নিক্ষেপ করলে কূপের গুণ নষ্ট হয়। পরে পরশুরাম পরাজিত হন। বাবার মৃত্যুর সংবাদ শুনে রাজা পরশুরামের মেয়ে রাজকন্যা শিলাদেবী করতোয়া নদীতে ডুবে আত্মাহুতি দেন। তার ডুবে যাওয়ার আশপাশের অঞ্চলটি শিলাদেবীর ঘাট হিসেবে পরিচিত। সেখানে হিন্দুধর্মের লোকেরা প্রতিবছর পুণ্যস্নান করেন। সাধক শাহ সুলতান বলখীর মাজারও রয়েছে এখানে। কিংবদন্তি আছে, তিনি মাছের পিঠে চড়ে এসেছিলেন। তাঁর মাহিসওয়ার পদবি সেই কিংবদন্তির সাক্ষ্য দেয়। তাঁর মাজারে সব ধর্মের মানুষের সমাগম ঘটে।

চাঁদ সওদাগর মনসা দেবীর পূজা করলেন না বলে দেবী তাঁর ছেলে লখিন্দরকে বিয়ের রাতে দংশন করল। লখিন্দরের স্ত্রী বেহুলা, লখিন্দরকে ভাসিয়ে দেওয়া ভেলায় চড়ে জীবলোকের ওপারে পৌঁছান। অনুপম সব কীর্তি স্থাপন করে স্বামীকে জীবনে ফিরিয়ে আনেন। মনসামঙ্গলের এই গল্প সবার জানা। মহাস্থানগড়ের অন্যতম আকর্ষণ ‘বেহুলার বাসরঘর’ নামে পরিচিত একটি প্রত্নস্থল। লখিন্দরের বাবা চাঁদ সওদাগরের বাণিজ্যিক জাহাজ যে কালীদহে ডুবে যায়, সেই কালীদহ সাগরও রয়েছে এখানে।

আরও রয়েছে ভাসু বিহার, মানকালীর ঢিঁবি, বৈরাগীর ভিটাসহ এত পর্যটনস্থল যে, পর্যটকদের জন্য একদিকে ঘুরে দেখা কঠিন। মহাস্থানগড়ের তিন কিলোমিটার দূরে গড়ে উঠেছে পাঁচ তারকা হোটেল মমইন। বগুড়া-রংপুর মহাসড়কের পাশে গোকুলে অবস্থিত টিএমএসএসের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এটি। এ ছাড়া বগুড়া শহরে একাধিক হোটেল ও মোটেল রয়েছে যেগুলোর কক্ষপ্রতি ভাড়া ২০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন