নবীগঞ্জে সৃষ্ট বিরোধ শালিসে নিঃস্পত্তি, উভয় পক্ষকে ৫০ লাখ জরিমানা

নবীগঞ্জের আনমনু ও তিমিরপুর গ্রামের ৩ দিনব্যাপী সংঘর্ষের ঘটনাটি শালিসে নিষ্পত্তি হয়েছে। শনিবার সকাল ১১টায় জে কে হাইস্কুল প্রাঙ্গনে অনুষ্টিত শালিস বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সাবেক এমপি আলহাজ্ব শেখ সুজাত মিয়া।

এতে উপস্থিত ছিলেন শালিস বোর্ডের উপদেষ্টা সিলেট মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারী হবিগঞ্জ-১ আসনের দলীয় মনোনিত এমপি প্রার্থী মোঃ শাহাজাহান আলী, সিলেট মদন মোহন কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ আবু ফতেহ ফাত্তাহ, সফিকুর রহমান পারছু, হযরত শাহ জালাল (রঃ) মসজিদের পেশ ইমাম মাওঃ আরসদ আলী, উপজেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ মতিউর রহমান পিয়ারা, উপজেলা জামায়াতের আমীর মাওঃ আশরাফ আলী, অধ্যাপক আব্দুল হান্নান, উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক সরফরাজ চৌধুরী, উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান শেফু, সাবেক পৌর মেয়র আলহাজ্ব ছাবির আহমেদ চৌধুরী, হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি এক্সপ্রেস সম্পাদক ফজলুর রহমান, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মজিদুর রহমান, সিলেট কল্যাণ সমিতির সেক্রেটারী এডভোকেট আবুল ফজল, হবিগঞ্জ আইনজীবি সমিতির সহ-সভাপতি এডভোকেট মুদ্দত আলী, বিশিষ্ট শালিস বিচারক সাবেক চেয়ারম্যান আ.ফ.ম ফখরুল ইসলাম, সাবেক চেয়ারম্যান আশিক মিয়া, চেয়ারম্যান সৈয়দ খালেদুর রহমান, ছালিক মিয়া, সাদিকুর রহমান শিশু, সাবেক চেয়ারম্যান মুক্তাদির চৌধুরী, নুর উদ্দিন (বীরপ্রতীক), সাবেক চেয়ারম্যান মাসুদ আহমদ জিহাদী, সাবেক চেয়ারম্যান বজলুর রহমান, আব্দুল বারিক রনি, বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক শিহাব চৌধুরী, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অলিউর রহমান অলি, সাংঘটনিক সম্পাদক সাহিদ তালুকদার, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মুশাহিদ আলম মুরাদসহ নবীগঞ্জ-বাহুবল থেকে আগত বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক সংগঠনের শালিক বিচারকবৃন্দ। সভাপতি স্বাগত বক্তব্য প্রদান করে শালিস বৈঠক শুরু করলে উভয় পক্ষ তাদের জবানবন্দি প্রদান করেন। এক পর্যায়ে ২১ সদস্য একটি বোর্ড গঠন করা হয়। দীর্ঘ সময় উক্ত বোর্ড সার্বিক দিক আলোচনা পর্যালোচনা করে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে বিচারের রায় ঘোষনা করেন। রায় ঘোষনা পুর্বে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন জামায়াতের মনোনিত এমপি প্রার্থী মোঃ শাহাজাহান আলী, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান শেফু ও সাবেক মেয়র ছাবির আহমদ চৌধুরী। পরে সভার সভাপতি আলহাজ্ব শেখ সুজাত মিয়া রায় ঘোষনা করেন। এতে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে নবীগঞ্জকে সুন্দর ও শান্তির শহর গড়ে তোলতে আশপাশ গ্রাম থেকে কমপক্ষে ৫ জন করে বিশিষ্টজনদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হবে। উক্ত কমিটির নবীগঞ্জে সার্বিক আইনশৃংখলাসহ এ ধরনের দলবদ্ধভাবে দাঙ্গ-হাঙ্গামারোধ কল্পে কাজ করবেন। ভবিষ্যতে ব্যক্তিগত বিরোধকে পুজিঁ করে দলবদ্ধভাবে যারা এধরনের সংঘর্ষে লিপ্ত হবেন তাদেরকে ২০ লাখ টাকা মুচলেকা (অফেরত যোগ্য) জামানত প্রদান করতে হবে। অন্যতায় উক্ত কমিটি সম্মিলিতভাবে দুস্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে ব্যবস্থা নিবেন। এছাড়া ঘটনায় উভয় পক্ষের ৫০ লাখ টাকা জামানত বাজেয়াপ্ত করা হয়। এরমধ্যে নিহত দু’ পরিবারকে ১০ লাখ করে মোট ২০ লাখ টাকা প্রদান করা হবে। বাকী ৩০ লাখ টাকার মধ্যে আনুসাষাঙ্গিক ব্যয়সহ ক্ষতিগ্রস্থদের অবস্থা বিবেচনা করে প্রদান করা হবে। এ জন্য এডভোকেট আবুল ফজলকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া বিরোধপুর্ণ উভয় পক্ষকে একেঅপরের সাথে বুক মিলিয়ে বিষয়ের সমাপ্তি ঘটনানো হয়। এ সময় সভাপতি সাবেক এমপি শেখ সুজাত মিয়া সাংবাদিক আশাহিদ আলী আশা’কে উদ্দেশ্য করে বলেন, তোমাকে নবীগঞ্জ ছাড়তে হবে। সাংবাদিকতা করো নিজ এলাকায় অবস্থান করে করবেন। কারণ তোমার বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে বলে সতর্ক করে দেয়া হয়। পরে মোনাজাতের মাধ্যমে শালিস বৈঠকের সমাপ্তি ঘটে।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে ৩ দিন ব্যাপী ভয়াবহ সংঘর্ষে ২ জন নিহত ও অসংখ্য মানুষ আহত হন, এছাড়া হাসপাতাল, মাছ বাজারসহ বহু দোকানপাট ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় একাধিক মামলা হয়। উভয় পক্ষের গ্রাম গুলো পুরুষ শুন্য হয়ে পড়ে। এরমধ্যে প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় একটি শালিস প্রক্রিয়া শুরু হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে উঠে। ধীরে ধীরে একটি শক্তিশালী শালিস বোর্ড গঠন করে উভয় পক্ণের কাছ থেকে ২৫ করে ৫০ লাখ টাকা জামানত নিয়ে শনিবার সকাল ১১ টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত শালিসের মাধ্যমে সমাপ্ত হয়।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন