ব্রিটেনে বসবাসরত দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্মের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতরা ইংরেজি বলতে পারে না— সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের এমন মন্তব্যে ক্ষোভে ফেটে পড়েছে যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশি কমিউনিটি। কমিউনিটির শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ একে ভিত্তিহীন ও অপমানজনক বলে মন্তব্য করেছেন এবং অবিলম্বে বরিস জনসনের প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
দ্য টেলিগ্রাফ টিভি চ্যানেলে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বরিস জনসন বলেন, “আমার শাসনামলে দেখেছি, লন্ডনের কিছু অংশে বাংলাদেশি কমিউনিটির দ্বিতীয় বা তৃতীয় প্রজন্ম ইংরেজিতে কথা বলত না। সেটা ছিল লজ্জাজনক।”
তার এই মন্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশি কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। তারা বলেছেন, দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্মের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতরা যুক্তরাজ্যেই জন্মগ্রহণ করেছে এবং ব্রিটিশ শিক্ষা ব্যবস্থার অংশ হিসেবে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ইংরেজিই তাদের শিক্ষার মাধ্যম। তাই তারা ইংরেজি বলতে পারে না— এমন দাবি ‘ডাহা মিথ্যা’ ছাড়া আর কিছু নয়।
ইনস্টিটিউট ফর ফিসকাল স্টাডিজের তথ্য অনুযায়ী, ১৫ বছর বয়সে গণিত ও ইংরেজি জিসিএসই পরীক্ষায় একসময় ব্রিটিশদের তুলনায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতরা ১০ শতাংশ পয়েন্ট পিছিয়ে থাকলেও বর্তমানে তারা পাঁচ শতাংশ পয়েন্ট এগিয়ে আছে।
বাংলাদেশ হাইকমিশনের শিক্ষাগত কৃতিত্ব পুরস্কারের তথ্যও এ বাস্তবতাকে তুলে ধরে। ২০০৬ সাল থেকে প্রতি বছরই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শিক্ষার্থীদের অসাধারণ জিসিএসই ও এ লেভেল ফলাফলের স্বীকৃতি দিয়ে আসছে হাইকমিশন।
জনসনের মন্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কমিউনিটির কাউন্সিলর, সাংবাদিক ও কর্মীরা। তারা বলেছেন,
“বরিস জনসনের উচিত দ্রুত বাংলাদেশি কমিউনিটির কাছে ক্ষমা চাওয়া। তার মিথ্যা ও লজ্জাজনক মন্তব্য শুধু কয়েকজন মানুষকে নয়, বরং ব্রিটেনে বাংলাদেশের চার প্রজন্মের কঠোর পরিশ্রম, শিক্ষাগত অর্জন এবং সংহতির ঐতিহ্যকে অসম্মান করেছে।”
তারা আরও বলেন, “একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে এমন বিভ্রান্তিকর বক্তব্য প্রচার করা অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি যেন তার মন্তব্য প্রত্যাহার করে নেন এবং এর ফলে কমিউনিটির মধ্যে সৃষ্ট গভীর আঘাতের জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চান।”