সমাজে অশান্তি সৃষ্টিকারীদের পরিণতি

মহান আল্লাহর দরবারে সবচেয়ে নিকৃষ্ট কাজ হলো পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করা। মানব সমাজে অশান্তির বীজ বপন করা জঘন্য গুনাহগুলোর একটি। এই কাজটি কেউ করে পেশিশক্তি ও অস্ত্রের জোরে, কেউ আবার করে কূটবুদ্ধির জোরে। তাদের চেহারা, পোশাক ও কথাবার্তায় মুমিনরা প্রথমে বুঝতেই পারে না যে তারা মূলত ফিতনা সৃষ্টিকারী।

তারা মানুষে মানুষে ঝগড়া সৃষ্টি করে নিজেদের ফায়দা লোটে। সব মহলে ভালো সেজে সব সময় উপকারভোগী হয়। পবিত্র কোরআনে এসব দুষ্টলোকের ব্যাপারে মুসলমানদের সতর্ক করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, মানুষের মধ্যে এমন আছে, পার্থিব জীবন সম্পর্কিত যার কথাবার্তা তোমাকে চমত্কৃত করে, আর সে ব্যক্তি তার অন্তরে যা আছে সে সম্পর্কে আল্লাহকে সাক্ষী রাখে অথচ সে ব্যক্তি খুবই ঝগড়াটে।

আর যখন সে ফিরে যায়, তখন জমিনে প্রচেষ্টা চালায় তাতে ফাসাদ করতে এবং ধ্বংস করতে শস্য ও প্রাণী। আর আল্লাহ ফাসাদ ভালোবাসেন না। আর যখন তাকে বলা হয়, ‘আল্লাহকে ভয় করো’ তখন আত্মাভিমান তাকে পাপ করতে উৎসাহ দেয়। সুতরাং জাহান্নাম তার জন্য যথেষ্ট এবং তা কতই না মন্দ ঠিকানা। (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ২০১৪-২০৬)

তাফসিরবিদদের মতে, এই আয়াতে মুনাফিকের আচরণ সম্পর্কে মুমিনদের সতর্ক করা হয়েছে। মহানবী (সা.)-এর সময়ে আখনাস ইবনে শুরাইক নামক এক ব্যক্তি অত্যন্ত বাকপটু ছিল। সে মহানবী (সা.)-এর দরবারে হাজির হয়ে কসম খেয়ে নিজেকে মুসলমান বলে প্রকাশ করত, কিন্তু দরবার থেকে উঠে গিয়েই নানা রকম বিবাদ-বিসংবাদ, অন্যায়-অনাচার এবং আল্লাহর বান্দাদের কষ্ট দেওয়ার কাজে আত্মনিয়োগ করত। (তাফসিরে মাআরেফুল কোরআন)

এই কাজগুলো করত মূলত বাকপটুতা, কূটবুদ্ধির মাধ্যমে। আবার কিছু লোক পেশিশক্তির মাধ্যমে দুনিয়ায় নৈরাজ্য সৃষ্টি করে।

পবিত্র কোরআনে তাদের ব্যাপারেও সতর্ক করা হয়েছে এবং তাদের শেষ পরিণতির কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আল্লাহর সঙ্গে দৃঢ় অঙ্গীকারে আবদ্ধ হওয়ার পর তা ভঙ্গ করে, যে সম্পর্ক অক্ষুণ্ন রাখতে আল্লাহ আদেশ করেছেন তা ছিন্ন করে এবং পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে বেড়ায়, তাদের জন্য আছে অভিসম্পাত এবং আছে মন্দ আবাস।’ (সুরা : রাদ, আয়াত : ২৫)

এই আয়াত দ্বারা বোঝায় পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টিকারীদের বাহ্যিকভাবে খুব প্রভাবশালী ও সুখী মনে হলেও বাস্তবে তারা আল্লাহর দরবারে অভিশপ্ত। কারণ পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও নাশকতা করা জঘন্যতম পাপ। আর যদি তা মানুষ হত্যার পর্যায়ে চলে যায়, তাহলে তো আরো ভয়ংকর বিষয়। পবিত্র কোরআনে কোনো নিরপরাধ মানুষ হত্যা করাকে গোটা মানবতাকে হত্যার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘এ কারণেই আমি বনি ইসরাঈলের ওপর এই আদেশ দিলাম, যে ব্যক্তি কাউকে হত্যা করা কিংবা জমিনে ফাসাদ সৃষ্টি করা ছাড়া যে কাউকে হত্যা করল, সে যেন সব মানুষকে হত্যা করল। আর যে তাকে বাঁচাল, সে যেন সব মানুষকে বাঁচাল। আর অবশ্যই তাদের নিকট আমার রাসুলগণ সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ নিয়ে এসেছে। তা সত্ত্বেও এরপর জমিনে তাদের অনেকে অবশ্যই সীমা লঙ্ঘনকারী।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৩২)

হাদিসের ভাষায় কোনো নিরপরাধ মুসলিমকে হত্যা করাকে কুফরির পর্যায়ের পাপ বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, নবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, কোনো মুসলিমকে গালি দেওয়া ফাসেকি কাজ (জঘন্য পাপ) আর কোনো মুসলিমকে হত্যা করা কুফরি। (বুখারি, হাদিস : ৭০৭৬)

তাই মুমিনের উচিত সব ধরনের নৈরাজ্য থেকে নিজেকে দূরে রাখা। মানুষের ক্ষতি করার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে এসে উপকারের চেষ্টা করা, অন্যথায় সাময়িক এই পৈশাচিক আনন্দ স্থায়ী বিষাদের কারণ হবে।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন