সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলের মানুষ ভালো নেই

হাওরের বুকে দ্বীপ সাদৃশ্য গ্রামের বাসিন্দাগন বছরের কর্মসংস্থান না থাকায় বেকার আর সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় বর্ষায় ৬ মাস জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এই সময় নৌকা ছাড়া চলা চল করার বিকল্প কিছুই নেই।

সেই সময়টায় বেকার সময় পার করে হাওরবাসী। শুধু তাই নয় নিরাপত্তাহীনতা, ক্ষুধা, দারিদ্রতা, রোগ শোক,অশিক্ষা, গোড়ামীর মধ্যেই যুগ যুগ ধরে মুখ থুবড়ে পড়ে, কষ্টের জীবন পার করছে বংশ পরম পরায়। আর এ ভাবেই হাওর পাড়ের দরিদ্র পরিবারগুলো চালিয়ে যাচ্ছে তাদের জীবন যুদ্ধ। কিন্তু তাদের উন্নয়নে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি কোন সরকারেই অভিযোগ রয়েছে। আর এসব পরিস্থিতির শিকার হয়ে অনেকেই এলাকা ছেড়ে চলে গেছে অন্যত্র। ফলে ভাল নেই সুনামগঞ্জের হাওর পাড়ে বাসিন্দাগন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্ষায় মাছ ধরা আর শুষ্ক মৌসুমে বোরো জমি চাষাবাদ ছাড়া বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই। শুষ্ক মৌসুমে এক ফসলী বোরো ধান চাষাবাদে মহাব্যস্থ সময় পাড় করেই বর্ষায় কৃং কর্তব্য বিমূঢ় হয়ে পড়ে জেলার বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, জগন্নাথপুর, ধর্মপাশা, মধ্যনগর, দিরাই, শাল্লাসহ হাওর পাড়ের ৮০ ভাগ মানুষ। বর্ষায় চারদিকে পানিতে থৈ থৈ করে চারদিক। এসব উপজেলার গ্রামের সাথে পাশের গ্রামে চলাচলের জন্য সড়ক পথের ব্যবস্থা নেই। স্কুল,কলেজ,উপজেলা ও জেলা সরকারী অফিস আদালতে যেতে নানান বিড়াম্বনায় পড়তে হয় হাওরবাসীকে।

জসিম উদ্দিন সহ হাওর পাড়ে সচেতন মহল বলছেন, হাওরাঞ্চলের বিশাল নারী গোষ্টীকে বিভিন্ন প্রশিক্ষনের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করতে পারলে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখতে পারতো। আর সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি, পুরুষদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে না দিলে হাওরে বেকারত্বের অবসান হবে না। সরকারের উচিত হাওর পাড়ে কর্মসংস্থানের জন্য প্রয়োজনীয় দ্রুত প্রদক্ষেপ গ্রহনের।

টাংগুয়ার হাওর পাড়ে জয়পুর গোলাবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা হামিদ মিয়াসহ অনেকেই জানান, আমরা ধানসহ বিভিন্ন খাদ্যপন্য উৎপাদন করে দেশের মুল চালিকা শক্তিতে অংশিদার। অথছ যুগ যুগ ধরে আমরা হাওড় পাড়ের বাসিন্দারাই সকল সুবিধা বঞ্চিত। বর্ষায় নৌকা ছাড়া ঘর থেকে বের হতে পারি না,চিকিৎসা পাই না,ছেলে মেয়েদের ভাল স্কুলে লেখাপড়া করাতেও পারিনা। মিল কলখারকানা স্থাপিত হলে কেউই বেকার থাকতো না,কিন্তু সরকারের এই বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না।

খরচার হাওর পাড়ে রায়পুর গ্রামের বাসিন্দা জেলে রতিন্দ্র দাশ, সুবির দাসসহ অনেকেই জানান, বর্ষায় জাল দিয়ে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতে পারলেও হাওরেও এখন আর আগের মত মাছ নাই। আমরা দিন দিন ভর অসহায় হয়ে পড়ছি। কিন্তু আমাদের উন্নয়নে কোনো পদক্ষেপও দেখছি না নিতে কোনো সরকারকে।

মাটিয়ান হাওর পাড়ে বাসিন্দা জামাল মিয়া জানান, বর্ষার সময় বেকার থাকি,কাজ কর্ম নাই। ঘরে বসেই সময় পাড় করতে হয়,অনেকেই ঘাফলা খেলে,চায়ের দোকানে বসে সিডিতে ছবি দেখে,তাস খেলে, গল্প করে সময় পার করে। এভাবে আর কত দিন তাই কাজের সন্ধানে অনেকেই এলাকা ছেড়ে শহরে পাড়ি জমিয়েছে।

শনি হাওর পাড়ের কৃষক সাদেক আলী জানান,জমি চাষ করে আর আগের মত লাভ হয় না বরং লসের ভাগীদার হতে হয়,ধানের সঠিক মূল্য না পাওয়ায়। চাহিদার তুলনায় সরকারী প্রনোদনা কম।

তাহিরপুর উপজেলার হাওরবেষ্টিত দক্ষিন শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী আহমদ মোরাদ জানান, আমার ইউনিয়নটি সারা বছরেই উপজেলার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকে, এমনকি একটি গ্রামের সাথেও অপর একটি গ্রামে চলাচলের জন্যও সড়ক নেই। শুকনো মৌসুমে কোন রখমে চলাচল করতে পারলেও বর্ষায় ত নৌকা ছাড়া চলা যায় না। যার কারনে এই এলাকার মানুষের কষ্টের শেষ নেই। হাওর এলাকায় সরকারী বরাদ্দ বেশী দিলে ও সড়ক পথের ব্যবস্থা করলে হাওর পাড়ের বাসিন্দারা উপকৃত হতো।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মেহেদী হাসান মানিক বলেন, হাওর পাড়ের জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া গ্রামের বাসিন্দাদের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব সময়ই নজরদারী রাখা হয়।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন