চোরাই পথে আসছে গরু, কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত সরকার
অবৈধ পথে আসা ভারতীয় গরু-মহিষকে ঘিরে সুনামগঞ্জের মধ্যনগর ও দোয়ারাবাজার উপজেলার বিভিন্ন বাজারে পশুর হাটগুলোতে চলছে রমরমা রশিদ বাণিজ্য। অপরদিকে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। একই সাথে বাংলাদেশ থেকে পাচার হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। আবার চোরাই পথে এই গরু আনতে গিয়ে গত এক বছরে নিহত হয়েছে দুইজন এছাড়াও আহত হয়েছে অর্ধশত মানুষ। শুধু তাই নয় চোরাই পথে গরু আনার সময় সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনী বিজিবি বাধাঁ দিলে চোরাকারবারিরা তাদের উপর হামলার চালানোর ঘটনা ঘঠেছে।
জানা গেছে, সুনামগঞ্জ সীমান্তের চিহ্নিত চোরাকারবারিরা রাতের আধারে ভারত থেকে নিয়ে আসছে গরু। পরে মধ্যনগর উপজেলার মহেশখলা বাজার গরুর হাটসহ আশপাশের গরুর হাটে ও দোয়ারাবাজার উপজেলার বোগলা বাজার, বাংলাবাজার, লক্ষীপুর, লিয়াকতগঞ্জ, বালিউরা, শ্রীপুর, নরশিংপুরসহ সীমান্ত এলাকার বিশ্বম্ভরপুর, ছাতক, তাহিরপুর, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার বিভিন্ন বাজারের গরুর হাটে তুলে বৈধতা নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠাচ্ছে একটি সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের কয়েকশ সদস্য ক্রেতা-বিক্রেতা সেজেই চালাচ্ছে রশিদ বাণিজ্য। গরু-মহিষ ভারতীয় হলেও প্রশাসনের উদাসীনতার কারণে ইজারাকৃত পশুর হাটের রশিদেই পাচ্ছে বৈধতা। যে কারণে এসব পশু আটক করতে ব্যর্থ হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অথচ, হাটগুলো সরকারীভাবে ইজারা দেয়া হয় প্রতি বছর। এসব হাটগুলো বন্ধ হলে আর আইনশৃংখলাবাহিনী কঠোর হলে সকল অনিয়ম বন্ধ হবে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাগনের কাছ থেকে জানা গেছে, দোয়ারাবাজার উপজেলায় বোগলাবাজার, বাংলাবাজার, লক্ষীপুর, লিয়াকতগঞ্জ, বালিউরা, শ্রীপুর, নরশিংপুর পশুর হাটগুলোর মধ্যে বাংলাবাজার, বোগলাবাজার ও নরশিংপুর পশুর হাট যেন সোনার হরিণ। এসব বাজারের ইজারা মূল্য দেড় থেকে তিন কোটি টাকা। চোরাকারবারীদের প্ররোচনায় ভারত থেকে চোরাই পথে গরু আন্তে গিয়ে মৃত্যুর মুখে পড়েছে সীমান্ত এলাকার মানুষ। অনেক সময় ভারতীয় বিএসএফের গুলিতে মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ভারত থেকে চোরাই পথে গরু আনার সময় প্রতিদিনেই সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনী বিজিবি আটক করছে। বিজিবি বাধাঁ দিলে চোরাকারবারিরা বিজিবির উপর হামলা চালালোর ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও গরু আনার কাজে ১০-১৫ বছরের শিশুদের প্রতি গরু ৫০ টাকা দিয়ে চোরাকারবারিরা সীমান্ত এলাকা থেকে এনে বসতবাড়িতে রাখে। বাড়িতে রাখার জন্য প্রতি গরু ১ শত থেকে ২ শত টাকা দেয় বাড়ির মালিককে।
সুনামগঞ্জ-২৮ বিজিবি জানিয়েছে, গত অক্টোবর মাস থেকে চলতি বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সাড়ে ৬ কোটি টাকার গরু ভারত থেকে আসার পথে বিজিবি আটক করেছে। তবে বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে কম হলেও ৪০-৫০ কোটি টাকার গরু বাংলাদেশে এসেছে বলে জানিয়েছেন সীমান্ত এলাকা বাসিন্দারা।
একাধিক সুত্র, স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা চিনাকান্দি, বাগবেড়, কারেন্টের বাজার গরুর হাটে ৪০-৫০ ভাগ, দোয়ারাবাজারের বোগলা,বাংলাবাজার, লক্ষীপুর, লিয়াকতগঞ্জ, বালিউরা,শ্রীপুর,নরশিংপুর, মধ্যনগর উপজেলার মহেশখলা বাজার গরুর হাটে ভারতীয় গরুর উপস্থিতি ৯০ ভাগ।
দোয়ারাবাজার সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা নাজিম উদ্দীন জানান, আমাদের উপজেলার গরুর হাটগুলোতে দেশি পশুর ক্রয়-বিক্রয় না থাকলেও রাতের অন্ধকারে ভারত থেকে অবৈধ পথে আসা গরু-মহিষের রশিদ বিক্রিই তাদের মূল ব্যবসা। ভারতীয় গরু-মহিষ সীমান্ত অতিক্রম করে প্রবেশ করলেই রশিদের মাধ্যমে তা দেশি পশুতে রূপান্তরিত হয়। বোগলাবাজার রশিদ বিক্রির শীর্ষে থাকলেও বর্তমানে সেই স্থান দখল করেছে বাংলা বাজার পশুর হাট।
মধ্যনগর উপজেলার মহেশখলা বাজার এলাকার বাসিন্দা জহির মিয়া জানান, রাতের আধারে বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে ভারত থেকে চোরাই পথে গরু আনছে চিহ্নিত চোরাকারবারীরা। এনে দিনে মহেষখলা গরুর হাটে বিক্রি করছে। আবার রাতে সুবিধা মত পাচারও করছে। সম্প্রতি রাতের চোরাই পথে গরু আনার সময় বিজিবি টহল দলের সদস্যরা বাধাঁ দেয়ার বিজিবির উপর হামলা চালিয়েছে গুরুত্বর আহত করে বিজিবি সদস্যদেরকে চোরকারবারিরা।
সুনামগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট রেজাউল করিম জানান, দোয়ারাবাজার উপজেলার বোগলা বাজার গরুর হাট ও মধ্যনগর উপজেলার মহেষখলা গরুর হাটের বিষয়ে এ বছর কিছু করার নেই। তবে আগামী বছর থেকে এই দুটি গরুর হাট ইজারা না দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ গ্রহন করা হবে। তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে।