বিপদাপদ জীবনের অংশ। মুমিন বিপদাপদে হতাশ হয় না। তারা বিপদাপদে মহান আল্লাহর ওপর ভরসা করে, তার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে এবং রাসুল (সা.)-এর অনুসরণ করে। বিপদাপদে মুমিনের করণীয় সম্পর্কে বিবরণী উল্লেখ করা হলো।
ধৈর্যধারণ করা : মুমিনরা বিপদাপদে ধৈর্যধারণ করে। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।’ (সুরা বাকারা ১৫৩) হুযাইফা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম (সা.) কোনো কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হলে নামাজে মশগুল হয়ে যেতেন। (আবু দাউদ ১৩১৯)
আল্লাহর সিদ্ধান্তে খুশি থাকা : বিপদাপদ মহান আল্লাহর পরীক্ষা। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘যারা তাদের কোনো বিপদাপদ দেখা দিলে বলে, আমরা সবাই আল্লাহরই জন্য এবং আমাদের তার কাছেই ফিরে যেতে হবে।’ (সুরা বাকারা ১৫৬)
দোয়া করা : উম্মে সালামা (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যে বান্দার ওপরই কোনো মসিবত আসে, সে যদি বলে, ‘আমরা আল্লাহর এবং আমাদের তারই কাছে ফিরে যেতে হবে। হে আল্লাহ! আমার মুসিবতে আমাকে প্রতিদান দিন এবং আমাকে তার চেয়ে উত্তম বিনিময় দান করুন।’ তবে আল্লাহ অবশ্যই মুসিবতে তাকে উত্তম প্রতিদান দেবেন।
উম্মে সালামা (রা.) বলেন, আবু সালামা (আমার স্বামী) মারা গেলে আমি রাসুল (সা.)-এর নির্দেশনা মোতাবেক এ আমল করি। ফলে আল্লাহতায়ালা আমাকে তার চেয়ে উত্তম জীবনসঙ্গী দান করেন। পরবর্তী সময়ে রাসুল (সা.)-এর সঙ্গেই উম্মে সালামা (রা.)-এর বিয়ে হয়। তিনি মুমিনদের মা হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেন।
হতাশ না হওয়া : কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘যখন তারা উভয়ে গুহার মধ্যে ছিল, তখন সে তার সঙ্গীকে বলেছিল, চিন্তা কোরো না, আল্লাহ আমাদের সঙ্গে আছেন।’ (সুরা তওবা ৪০) রাসুল (সা.) হিজরতের সময় সওর গুহায় আত্মগোপন করেন। ওই দিকে কাফেরদের অনুসন্ধান দল গুহার মুখ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। আবু বকর (রা.) তাদের পা দেখতে পাচ্ছিলেন। ফলে তার চেহারায় উদ্বেগের চিহ্ন ফুটে উঠেছিল। এমন কঠিন মুহূর্তেও হতাশ না হয়ে নবী (সা.) তাকে বলেছিলেন, আল্লাহ আমাদের সঙ্গে আছেন।
আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখা : কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে, আল্লাহই তার (কর্ম সম্পাদনের) জন্য যথেষ্ট।’ (সুরা তালাক ৩)
রাত যত গভীরই হোক, সকাল হবেই। সূর্যোদয় ঘটবেই। বিপদ যত কঠিনই হোক, স্থায়ী হবে না। বিপদ চলে যাবে। শান্তি আসবেই। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘প্রকৃতপক্ষে কষ্টের সঙ্গে স্বস্তিও থাকে। নিশ্চয় কষ্টের সঙ্গে স্বস্তিও থাকে। (সুরা ইনশিরাহ ৫-৬)
দান-সদকা করা : আলি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহর পথে খরচ করার ব্যাপারে তাড়াতাড়ি করবে (অর্থাৎ মৃত্যু অথবা রোগ-শোক হওয়ার আগে)। কেননা দান-সদকায় মুসিবত দূর হয়। (মিশকাতুল মাসাবিহ)
