নিউইয়র্কে ‘সাপ্তাহিক ঠিকানা’র ব্যতিক্রমী ‘আনন্দ-সমাবেশ’

দৈনিক সিলেট ডট কম
এনআরবি নিউজ, নিউইয়র্ক থেকে : একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে মার্কিন প্রবাসীদের সংগঠিত করার পাশাপাশি প্রবাসী বাংলাদেশীদের সমৃদ্ধি ও কল্যাণে অবিস্মরণীয় ভ’মিকা পালনরত অবস্থায় মৃত্যুবরণকারি ১২ ব্যক্তিত্বের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা এবং আমেরিকার ২৪১তম স্বাধীনতা বার্ষিকীর আমেজে প্রবাসীদের ঐক্যের স্লোগান উচ্চারিত হলো সমস্বরে। ২ জুলাই রোববার নিউইয়র্ক সিটির এস্টোরিয়া পার্কে ১২ শতাধিক প্রবাসীর এ সমাগম ঘটায় উত্তর আমেরিকায় বাংলা ভাষায় সর্বাধিক প্রচারিত ‘সাপ্তাহিক ঠিকানা।’ ২৮ বছরে পদার্পণকারি সাপ্তাহিক ঠিকানার এ আয়োজনে বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার প্রতিনিধিত্বকারি ব্যক্তি ছাড়াও নতুন প্রজন্মের উপস্থিতি ছিল লক্ষ্যনীয়।
সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের সবুজ পাসপোর্ট ইস্যুর পরই মূলত: মার্কিন মুল্লুকে বাঙালির পদার্পণ ঘটে। সত্তরের দশকে যে ক’জন বাঙালি নিউইয়র্কে বসতি গড়েন তার অন্যতম ছিলেন ইব্যাহিম চৌধুরী, নূরল হক চুবানী, হাজী মনির, কাজী জাকারিয়া, শেখ ওয়াহিদুর রহমান। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে আরো অনেকের সাথে এই প্রবাসীরাও নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসিতে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেন। শরনার্থীদের জন্যে তহবিল সংগ্রহও করেন তারা। এরপর ডা. আসাদ খান, রানী কবীর, ড. আলমগীর, শ্রীচিন্ময়, এনামুল মালিক, রতন বড়ুয়া, শহীদ কাদরীর মত প্রবাসীরা বাংলাদেশী-আমেরিকানদের সংগঠিত করার মধ্য দিয়ে আমেরিকান স্বপ্ন পূরণে সচেষ্ট ছিলেন। নতুন প্রজন্মের বাংলাদেশী এবং একবিংশ শতাব্দিতে যুক্তরাষ্ট্রে বসতি গড়া বাংলাদেশীদের অনেকেই এসব মহৎ প্রাণের বাঙালির কথা জানেন না। ‘
‘অতীতকে ভুলে সামনে এগুনো যায় না, অতীতের বর্ণাঢ্য অভিজ্ঞতায় ভবিষ্যত সম্ভাবনাকে অর্জন করা সহজ হয়’ বলে মন্তব্য করেন ব্যতিক্রমধর্মী এই আয়োজনের উদ্যোক্তা ঠিকানা পত্রিকার সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি ও সাবেক এমপি এম এম শাহীন। ‘ঠিকানার আনন্দ-সমাবেশ’ শীর্ষক ব্যানারের পাশেই ঝুলছিল ১২ মহৎ প্রাণের বাঙালির ছবি সম্বলিত ব্যানার। তার সামনে দাঁড়িয়ে কম্যুনিটির অপরাপর নেতারাও দৃপ্ত প্রত্যয়ে উচ্চারণ করেন, ‘দলীয় বিভাজনের উর্দ্ধে উঠতে হবে আমেরিকান স্বপ্ন পূরণের স্বার্থে। একইসাথে সকলকে আরো জোরালোভাবে মূলধারার রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়তে হবে। বৃটিশ পার্লামেন্টের মত মার্কিন কংগ্রেসেও বাঙালির আসন ছিনিয়ে নিতে এর বিকল্প ন্ইে।’
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এস্টোরিয়া পার্কের এ সমাবেশে এম এম শাহীন বলেছেন, ‘ঠিকানা পত্রিকা সামনের দিনগুলোতে প্রবাসীদের বিশ্বস্ত সহযোগী হিসেবে তার দায়িত্ব অব্যাহত থাকবে।’
এ সময় বিশিষ্টজনদের মধ্যে ছিলেন শিল্পপতি ও সমাজসেবী জহির, ঠিকানা সম্পাদক লাবলু আনসার, আমেরিকা-বাংলাদেশ এলায়েন্সের চেয়ারপার্সন এম এ সালাম, ফোবানার যুগ্ম মহাসচিব ও নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকারিয়া চৌধুরী, রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী মইনুল ইসলাম, বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকার সাবেক সভাপতি এমাদ চৌধুরী, সেক্টর কমান্ডার ফোরামের যুক্তরাষ্ট্র শাখার সভাপতি রাশেদ আহমেদ, আমেরিকা বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আবু তালেব চৌধুরী এবং সাংগঠনিক সম্পাদক ওসমান চৌধুরী, বাংলাদেশ সোসাইটির বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান এম আজিজ, বাংলাদেশ সোসাইটির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট রহিম হাওলাদার, সহ-সভাপতি আব্দুল খালেক খায়ের, কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম ভ’ইয়া, সাংস্কৃতিক সম্পাদিকা মনিকা রায়, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ও বাংলাদেশ সোসাইটির বোর্ড অব ট্রাস্টির সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন, আলী ইমাম, জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের সেক্রেটারি মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সৈয়দ বসারত আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দিন দেওয়ান, বিএনপি নেতা সৈয়দ জুবায়ের আলী, নিউইয়র্ক স্টেট আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি শাহীন আজমল, বিএনপি নেতা পারভেজ সাজ্জাদ, জহীর মোল্লাহ, আজাদ বাকির, ডেমক্র্যাট এডভোকেট মজিবর রহমান, যুক্তরাষ্ট্র যুবদলের সেক্রেটারি আবু সাঈদ আহমেদ, যুক্তরাষ্ট্র ছাত্রদলের সেক্রেটারি মাজহারুল ইসলাম জনি, কম্যুনিটি লিডার আব্দুস শহীদ, রানা ফেরদৌস, খান’স টিউটোরিয়ালের প্রেসিডেন্ট নাঈমা খান, বঙ্গবীর এম এ জি ওসমানী স্মৃতি পরিষদের সভাপতি আলহাজ্ব নজমুল চৌধুরী, এটর্নী পেরী ডি সিলভার, কম্যুনিটি এ্যাক্টিভিস্ট খন্দকার ফরহাদ, হা
সানুজ্জামান হাসান, চলচ্চিত্রকার ও সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের আবুল বাশার, শো টাইম মিউজিকের আলমগীর খান আলম, বরিশাল বিভাগীয় সমিতির সভাপতি লুৎফর রহমান লাতু, প্রখ্যাত কন্ঠশিল্পী স্বপ্না কাউসার, শাহ মাহবুব এবং কাউসার আহমেদ প্রমুখ।
সকাল ১১টায় শুরু হয়ে সন্ধ্যা ৭টায় শেষ হওয়া এই ‘আনন্দ-সমাবেশ’-শুরু হয় তরমুজ পরিবেশনের মধ্য দিয়ে। ভরদুপুরে পরিবেশন করা হয় ‘প্রিমিয়াম সুইটস’র সুস্বাদু খাবার। অপরাহ্নে পানি-জুইসের পর পান-সুপারিও বাদ যায়নি। সম্প্রীতির আমেজে শিশু-কিশোরদের বিভিন্ন প্রতিযোগিতার পাশাপাশি মহিলারাও মেতে ছিলেন নানা আয়োজনে। সবশেষে বিজয়ী নারী ও শিশুদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন অতিথিরা।