গ্রীণকার্ডধারী বাংলাদেশী ঢুকতে পারলেন না আমেরিকায়
দৈনিক সিলেট ডট কম
এনআরবি নিউজ, নিউইয়র্ক থেকে : গ্রীণকার্ড সমর্পণে বাধ্য হলেন ‘ইসলামিক ব্যাংক বাংলাদেশ’র ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর তাহের আহমেদ চৌধুরী (৫৬)। গ্রীণকার্ডের শর্ত অনুযায়ী তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস না করায় অভিবাসন দপ্তরের কর্মকর্তারা তাকে লসএঞ্জেলেস এয়ারপোর্ট থেকেই ঢাকায় ফেরৎ পাঠিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কঠোর অভিবাসন নীতির বাস্তবায়নের শিকারদের মধ্যে এর আগেও অন্তত: ৯ বাংলাদেশীকে ভিসা থাকা সত্বেও যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে দেয়া হয়নি। অভিবাসন দপ্তরের উদ্ধৃতি দিয়ে চলতি সংখ্যা ‘সাপ্তাহিক ঠিকানা’ (বুধবার বাজারে এসেছে) এ সংবাদ প্রকাশ করেছে।
সন্দ্বীপের সন্তান তাহের আহমেদ চৌধুরী ইনফরমেশন টেকনোলাজিতে মাস্টার্স করেছেন জাহাঙ্গিরনগর ইউনিভার্সিটি থেকে। এরপর তিনি ইসলামিক ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডে তথ্য-প্রযুক্তি ডিপার্টমেন্টের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। আর এরইমধ্যে ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক বোনের সূত্রে তিনি গ্রীণকার্ড পেয়েছেন। প্রতি বছরই একবার করে যুক্তরাষ্ট্রে এসে ১০/১২ দিন অবস্থান করে গ্রীণকার্ড টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হলেও ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর নীতির কারণে এবার তা সম্ভব হলো না।
তাহের জানান, ‘লাসভেগাসের সিসকো লাইনের একটি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের চিঠিও ছিল। সে অনুযায়ী ২০ জুন লসএঞ্জেলেস এয়ারপোর্টে নামি। সে সময় এয়ারপোর্ট ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা আমার গ্রীণকার্ড ভালো করে পরখ করার পর জানান যে, আমি তো সারা বছরই বাংলাদেশে থাকি। তাই গ্রীণকার্ডের প্রয়োজন নেই। তারা আমার গ্রীণকার্ড ও বাংলাদেশী পাসপোর্ট আটক করে একটি একটি নোটিশ হাতে দেন। সে অনুযায়ী আমাকে এক বছর যুক্তরাষ্ট্রে কাটাতে হবে। এরপরই গ্রীণকার্ড ও পাসপোর্ট ফেরত দেয়া হবে। কিন্তু আমি তাদের জানাই যে, আমাকে দু’সপ্তাহের মধ্যেই ঢাকায় ফিরতে হবে। চাকরিতে জয়েন করা জরুরী। এর জবাবে কর্মকর্তারা আমাকে বলেন যে, ঢাকায় ফিরতে হলে গ্রীণকার্ড সারেন্ডার করতে হবে এবং এজন্যে প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতার জন্যে ইমিগ্রেশন এটর্নীর সহায়তা নিতে হবে।’
অভিবাসন কর্মকর্তাদের দেয়া নোটিশ হাতে নিয়ে এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে তার স্বজনের সাথে পরামর্শক্রমে কম্যুনিটি লিডার মমিনুল হক বাচ্চুর সাহায্যে একজন এটর্নীর সাথে কথা বলেন তাহের। এরপর যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে ২২ জুন ‘বি-১ বি-২’(B-1 ‘Visitor for Business’ Visa. Typically these visas are issued as joint B-1 business visit visa and B-2 ‘Visitor for Pleasure’ (i.e. Tourist) visa.) ভিসায় তাহের বাংলাদেশে ফিরে গেছেন। তার গ্রীণকার্ড বাতিল করা হয়েছে।
তাহেরের মত আরো ৩ বাংলাদেশী ভিসা থাকা সত্বেও লসএঞ্জেলেস এয়ারপোর্ট অতিক্রম করতে সক্ষম হননি। জেএফকে, ডালাস এয়ারপোর্টেও গত দু’মাসে আরো ৫ বাংলাদেশীকে একইভাবে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে।
গত ২৮ মার্চ মোহাম্মদ জাকির হোসেন (৪৫) নামে এক বাংলাদেশি ব্যবসায়ীকে শিকাগো এয়ারপোর্টে অবতরণের পরই বাংলাদেশে ফিরিয়ে দেয়া হয়। তারও বিজনেস ভিসার মেয়াদ ছিল ২০১৯ সাল পর্যন্ত। শিকাগোতে বাংলাদেশের অনরারী কন্সাল জেনারেল মনির চৌধুরী এ প্রসঙ্গে জানান, জাকির হোসেন ঢাকা থেকে ক্যাথে প্যাসিফিক এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে হংকং পৌঁছান ২৮ মার্চ। একইদিন কানেকটিং ফ্লাইটে শিকাগো ও’হেয়ার এয়ারপোর্টে আসেন। ইমিগ্রেশন লাইনে দাঁড়ানোর পর কাস্টমস অফিসার তার সফরের উদ্দেশ্য জানতে চান।
এর আগেও কয়েক দফা তিনি যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন একই ভিসায়। কিন্তু এবার কী ধরনের ব্যবসার জন্যে এসেছেন সে সব তথ্য কাস্টমস অফিসারের সন্তুষ্টি অর্জনে সক্ষম না হওয়ায় সাথে সাথে তার ভিসা বাতিল করে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে আরেকটি ফ্লাইটে উঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
এ ধরনের পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে অনেক বাংলাদেশী যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে যেতেও স্বাচ্ছন্দবোধ করেন না। বিশেষ করে, গ্রীণকার্ডধারীর অনেকেই গত ৬ মাসে বাংলাদেশ সফরের টিকিট বাতিল করেছেন বলে এয়ারলাইন্স থেকে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য যে, যে ৬ মুসলিম রাষ্ট্রের নাগরিকদের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসন কঠোর নীতি জারি করেছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ না থাকলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অঘোষিত একটি নির্দেশ দেয়া হয়েছে সকল মুসলিম রাষ্ট্রের নাগরিকদের নন-ইমিগ্র্যান্ট ভিসা প্রদানের সতকর্তা অবলম্বনের জন্যে।