কানাইঘাটে নিষ্ঠুর নির্যাতনে এক যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ জুলাই ২০১৭, ১২:২৭ পূর্বাহ্ণ
কানাইঘাট প্রতিনিধিঃ কানাইঘাট দিঘীরপাড় পূর্ব ইউপির লন্তিরমাটি গ্রামে মামা এবং মামাতো ভাইদের কয়েক দফা নিষ্ঠুর নির্যাতনের পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ৭ জনের বিরুদ্ধে সিলেটের জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ৪র্থ ও আমলী আদালত-৫ এ গত ১৮ জুলাই কানাইঘাট সি.আর মামলা নং- ১৮৯/২০১৭ দায়ের করলে বিজ্ঞ আদালত দরখাস্ত মামলাটি এফ.আই.আর হিসাবে গণ্য করে আসামীদের বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন কানাইঘাট থানার অফিসার ইনচার্জকে। অভিযোগে জানা যায়, লন্তিরমাটি গ্রামের মৃত নুরুল হাসানের পুত্র আনোয়ারুল হক চৌধুরী বাড়ীতে তাহার স্বামী পরিত্যাক্ত বোন শাফিয়া বেগম চৌধুরী তার ১৯ বছরের পুত্র মিসবাউল ইসলাম ও ৭ বছরের পুত্র বুলবুলকে নিয়ে বসবাস করে আসছেন। পৈত্রিক সূত্রে শাফিয়া বেগম চৌধুরী অনেক জমিজমার মালিক। বোনের জমিজমা আত্মসাত করার লক্ষ্যে ভাই আনোয়ারুল হক চৌধুরী ও তার পুত্ররা দীর্ঘদিন ধরে শাফিয়া বেগমের ছেলে মিসবাউল ইসলামকে নিষ্ঠুর নির্যাতন করে আসছিল। মামা ও মামাতো ভাইদের কয়েক দফা শারীরিক নির্যাতনের ফলে মানসিক ভাবে মিসবাউল ইসলাম অসুস্থ হয়ে পড়ে। মিসবাউল ইসলামকে নির্যাতনের পাশাপাশি তার মা সাফিয়া বেগম চৌধুরীকেও শারীরিক ভাবে নির্যাতন করে আসছিল ভাই আনোয়ারুল হক চৌধুরী গংরা। সর্বশেষ গত ১৭ রমজান মামা আনোয়ারুল হক চৌধুরী ও তার পুত্ররা মিসবাউল ইসলামকে বাড়ীতে একটি কক্ষে বেঁধে অমানবিক ভাবে নিষ্ঠুর নির্যাতন করলে গুরুতর আহত হয়ে চরম ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে মিসবাউল ইসলামকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে গত ৬ জুলাই তার মা শাফিয়া বেগম চৌধুরী সহ আত্মীয় স্বজনরা সিওমেক হাসপাতালে মিসবাউল ইসলামকে ভর্তি করেন। সেখানে মিসবাউল ইসলাম ৭ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর কর্তব্যরত চিকিৎসকগণ তাকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দিলে ঐ দিন রাত অনুমান সাড়ে ১২টার সময় মামা আনোয়ারুল হক চৌধুরীর বাড়ীতে মিসবাউল ইসলাম মৃত্যু বরণ করে। তড়িগড়ি করে লাশ দাফনের ব্যবস্থা করলে মামা আনোয়ারুল হক চৌধুরী ও তার পুত্রদের নিষ্ঠুর নির্যাতনে মিসবাউল ইসলামের মৃত্যু হয়েছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে কানাইঘাট থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে মিসবার লাশ দাফন না করার জন্য নির্দেশ দিয়ে পুলিশি তদারকিতে রাখা হয়। মিসবাউল ইসলামের নিকটাত্মীয়দের অভিযোগ তার পিতা দর্পনগর পশ্চিম গ্রামের ফজলুর রহমানকে নানা ধরনের খুন জখমের ভয়ভীতি দেখিয়ে ১৪ জুলাই কানাইঘাট থানায় উপস্থিত করে তার পুত্রের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে মর্মে আনোয়ারুল হক চৌধুরীর পক্ষের প্রভাবশালী লোকজন একটি হলফনামায় স্বাক্ষর নিয়ে পরবর্তীতে ঐদিন বিকেল সাড়ে ৫টায় জানাজার নামায শেষে মিসবাউল ইসলামের লাশ দাফন করা হয়। মিসবাউল ইলামের পিতা ফজলুর রহমান জানিয়েছেন, নিষ্ঠুর শারীরিক নির্যাতনের কারনে তার পুত্রের মৃত্যু হয়েছে। প্রাণ নাশের হুমকির মুখে তার পুত্রের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে মর্মে থানায় তিনি স্বাক্ষর দিয়েছেন। জানাজার সময় পুত্রের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় রক্তাক্ত আঘাতের চিহ্ন দেখতে পেয়ে পরিকল্পিত ভাবে তার পুত্রকে তিলে তিলে নির্যাতন করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়ায় পুত্র হত্যার অভিযোগ এনে বাদী হয়ে আদালতে আনোয়ারুল হক চৌধুরী ও আনোয়ারুল হক চৌধুরীর পুত্র ফরিদ উদ্দিন, সায়াদ উদ্দিন, আসাদ উদ্দিন, জাকারিয়া, শিশির শিবরিয়া, কিবরিয়ার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন বলে মিসবাউল ইসলামের পিতা জানান। এব্যাপারে কানাইঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল আহাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আদালতে দায়েরকৃত মামলার কপি আমি এখনও হাতে পাই নি। পাওয়ার পর তদন্ত পূর্বক আসামীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।