জাতিসংঘে বাংলাদেশের সরব উচ্চারণ

দৈনিক সিলেট ডট কম
এনআরবি নিউজ, নিউইয়র্ক থেকে: “বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথেই শান্তির সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিতে বৈশ্বিক পরিমন্ডলে সামনের সারিতে থেকে এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা ও শান্তি বিনির্মাণ কর্মসূচিতে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা রেখে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ”। নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সাধারণ পরিষদ হলে ‘শান্তির সংস্কৃতি’র উপর জাতিসংঘের উচ্চ পর্যায়ের ফোরামে ৭ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার প্রদত্ত ভাষণে এ তথ্য উপস্থাপন করেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন।
স্থায়ী প্রতিনিধি তার ভাষণে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করে বলেন, “জাতির পিতা আমাদের পররাষ্ট্র নীতির মৌলিক বিষয়গুলোর মধ্যে ‘শান্তির সংস্কৃতি’কে প্রোথিত করেছিলেন। আজ থেকে ৪২ বছর আগে জাতিসংঘে প্রদত্ত প্রথম বাংলা ভাষণে জাতির পিতা ‘সকলের প্রতি বন্ধুত্ব, কারো প্রতি বৈরিতা নয়’, ‘বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান’ ও ‘আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে পেশী শক্তির ব্যবহার বর্জন’ এর মতো বিষয়গুলো উল্লেখ করেছিলেন”।
শান্তির সংস্কৃতির অগ্রসরতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূমিকার কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত মাসুদ বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর নীতি-আদর্শকে তাঁর সরকার ও তাঁর রাজনৈতিক মতাদর্শের কেন্দ্রীয় নীতি হিসেবে ধারণ করেছেন। তাঁর প্রথমবারের সরকারের সময় ১৯৯৭ সালে তিনিই প্রথম জাতিসংঘে ‘শান্তির সংস্কৃতি’ ধারণাটি প্রস্তাব করেন। সেই থেকে বাংলাদেশ স্বপ্নদর্শী ও সার্বজনীন এই ‘শান্তির সংস্কৃতি’ ধারণার পূর্ণ ও কার্যকর বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এর প্রাধিকারমূলক ক্ষেত্রসমূহের উপর গৃহীত সকল ঘোষণা ও কর্মপরিকল্পনার সাথে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত রয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে একযোগে কাজ করে যাচ্ছে”।
উল্লেখ্য ১৯৯৭ সাল থেকে শুরু করে প্রতিবছরই জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে সর্বসম্মতিক্রমে ‘শান্তির সংস্কৃতি’র প্রস্তাবসমূহ পাশ হয়।
এই সভায় রাষ্ট্রদূত মাসুদ আরও জানান, ‘বাংলাদেশ শান্তি বিষয়ক শিক্ষার উপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছে এবং সে অনুযায়ী স্কুলের পাঠ্যসূচিতে শান্তি সম্পর্কিত পাঠ অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে যাতে শিক্ষার্থীগণ শৈশবকাল থেকেই এ বিষয়ে শিক্ষা পায়।’
তরুণদের মনে শান্তির সংস্কৃতির বীজ বপনের ক্ষেত্রে কতিপয় বিষয়ের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন,“স্কুলে যাওয়ার আগেই পরিবার থেকে শান্তির সংস্কৃতির শিক্ষা শুরু করা উচিত। পারিবারিক এই শিক্ষাই সমাজ থেকে দেশ, দেশ থেকে বিশ্বব্যাপী শান্তির সংস্কৃতি ও সহনশীলতার আন্দোলনকে বেগবান করতে পারে”।
তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস চরমপন্থার বিরুদ্ধে আমাদের লড়াইয়ে আমরা ‘সমগ্র সমাজ’ পদ্ধতি গ্রহণ করেছি।’
রোহিঙ্গা সমস্যার প্রতি ইঙ্গিত করে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে সীমান্তের ওপার থেকে আসা বিশাল জনগোষ্ঠী বিশেষ করে শিশু, নারী ও বৃদ্ধসহ দুর্দশাগ্রস্থ মানুষদেরকে নিয়ে যে গুরুতর চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশ মোকাবিলা করছে এর অবসানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জরুরী মনোনিবেশ প্রয়োজন।’ শান্তি ও মানবতা রক্ষার স্বার্থে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশ্ববিবেক জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলেও আশাবাদ পোষণ করেন রাষ্ট্রদূত মাসুদ।
বৃহস্পতিবার সকালে শুরু হওয়া ‘শান্তির সংস্কৃতি’র সাধারণ বিতর্ক অংশে সভাপতিত্ব করেন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি পিটার থমসন। এ সভায় কী-নোট স্পীচ প্রদান করেন নবেল লরিয়েট বেটি উইলিয়ামস।
এ দিন অপরাহ্নে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের উপর একটি প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে মডারেটর ছিলেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ও জাতিসংঘের সাবেক সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল রাষ্ট্রদূত আনোয়ারুল করিম চৌধুরী।
ইউনেস্কোর সাবেক মহাপরিচালক ও কালচার অব পিচ ফাউন্ডেশনের সভাপতি প্রফেসর ফেডারিকো মেয়র, শিশুদের প্রতি সহিংসতা বিরোধী জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধি ড. মারতা স্যানতোজ পাইজ ও ইউনিসেফের প্রতিষ্ঠান আর্লি চাইলহুড পিচ কনসোর্টিয়াম এর চেয়ারপরসন ড. রিমা সালাহ্সহ এনজিও, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিগণ এবং সদস্যরাষ্ট্রের প্রতিনিধিবর্গ এই ইন্টারেক্টিভ প্যানেল আলোচনা পর্বে অংশ নেন।
‘শান্তির সংস্কৃতি’র উপর উচ্চ পর্যায়ের এই ফোরামে উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করেন চট্টগ্রামের সন্তান জাতিসংঘের শান্তির দূত হিসেবে আজীবন দায়িত্ব পালনকারি শ্রীচিন্ময় কর্তৃক নিউইয়র্কে প্রতিষ্ঠিত ‘শ্রীচিন্ময় সেন্টার’র শিল্পীরা। এই সেন্টারের শাখা রয়েছে বিশ্বের ৩০ দেশে। লক্ষাধিক ভক্ত-অনুরক্তের প্রায় সকলেই বাংলায় গান শিখেছেন এবং অনেকেই বাংলায় কথা বলার অভ্যাসও করেছেন।