‘ফোবানা এওয়ার্ড’ সাংবাদিক ও সমাজকর্মীর হাতে
দৈনিক সিলেট ডট কম
এনআরবি নিউজ, নিউইয়র্ক থেকে : বহুজাতিক এই আমেরিকায় বাঙালির মুখ উজ্জ্বল করার পাশাপাশি আমেরিকান স্বপ্ন পূরণে বিশেষ অবদানের জন্যে দুই প্রবাসীকে ‘ফোবানা এওয়ার্ড’ প্রদান করা হলো। ৮ অক্টোবর পর্যন্ত ৩দিনব্যাপী ফ্লোরিডার মায়ামী সিটিতে ‘ফোবানা’র ( ফেডারেশন অব বাংলাদেশী এসোসিয়েশন্স ইন নর্থ আমেরিকা) ৩১তম বাংলাদেশ সম্মেলনে হাজারো প্রবাসীর বিপুল করতালির মধ্যে এই এওয়ার্ড গ্রহণ করেন ইঞ্জিনিয়ার আবু হানিফ এবং টিভি এ্যাঙ্কর তাসমিন মাহফুজ। আমেরিকায় জন্মগ্রহণকারি তাসমিন মা-বাবার সাথে ফ্লোরিডায় বসবাস করাকালে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির সাথে নিজেকে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে রাখেন। বিশেষ কৃতিত্বের সাথে জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যে অবস্থিত এ্যামরয় ইউনিভার্সিটি থেকে ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজে গ্র্যাজুয়েশনের পর লিগ্যাল স্টাডিজে মাস্টার্স করেছেন তাসমিন। এরপর জাতিসংঘে দু’বছর ইন্টার্নীশিপ করেছেন। এরপর তাসমিন সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে ুনিয়েছেন। বর্তমানে তিনি ডব্লিউডিভিএমন নিউজের এ্যাঙ্কর এবং প্রযোজক। পেশাগত দক্ষতার স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৫ সালে তাসমিনকে টিভি নিউজে অসাধারণ কৃতিত্ব প্রদর্শনের জন্যে ‘গ্র্যাসী এওয়ার্ড’ প্রদান করেছে ‘এলায়েন্স ফর উইমেন’। ইউটাহ অঙ্গরাজ্যের ‘জার্নালিজম এওয়ার্ড’ও পেয়েছেন তাসমিন। মার্কিন মিডিয়া জগতে নারী সাংবাদিকদের এই প্রতিষ্ঠানের এওয়ার্ড পাবার পর তাসমিনের কর্মপরিধি বেড়ে গেছে। তিনি যেখানেই সুযোগ পাচ্ছেন, সেখানেই বাংলাদেশকে উপস্থাপনে সচেষ্ট হচ্ছেন। তাসমিনের সাংবাদিকতার মধ্য দিয়ে প্রকারান্তরে মার্কিন মুল্লুকে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূতদের উজ্জ্বল একটি উপস্থিতির প্রকাশ ঘটছে। ফোবানা সম্মেলনে তারই বহি:প্রকাশ ঘটলো বলে সম্মেলনের কর্মকর্তারা উল্লেখ করেন। তাসমিনের বাবা চট্টগ্রামের সন্তান আব্দুল ওয়াহিদ মাহফুজ এবং মা নাজমুন পারভিনও ফ্লোরিডায় বাঙালি সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করছেন বহু বছর যাবত। এই সম্মেলনে তাসমিনের বাবা ওয়াহিদ ম্হাফুজকেও ফ্লোরিডার প্রথম ব্যবসায়ীর এওয়ার্ড প্রদান করা হয়েছে। এসব এওয়ার্ড হস্তান্তর করেছেন ফোবানার এই সম্মেলনের প্রধান অতিথি পানি সম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তাসমিন নিজের অনুভ’তি ব্যক্তকালে বলেন, ‘এ সম্মান নতুন প্রজন্মের সকলকে অনুপ্রাণীত করবে বাঙালি সংস্কৃতি লালনে। একইসাথে আমাকে আরো উদ্বুদ্ধ করবে মার্কিন মিডিয়ায় বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতায়।’
অপর এওয়ার্ডপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার আবু হানিফ হচ্ছেন মার্কিন আইটি কোম্পানীতে ৫ হাজারের অধিক বাংলাদেশীকে চাকরি পাবার উপযোগী প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্যে ‘পিপল এন টেক ইন্সটিটিউট’র প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।
এওয়ার্ড গ্রহণের পর নিজের অনুভ’তি ব্যক্তকালে ইঞ্জিনিয়ার হানিফ বলেন, ‘গত ১২ বছরের অধিক সময় যাবত বাংলাদেশী উদ্যমী যুবক-যুবতীদের কোর্স প্রদান করা হচ্ছে পিপল এন টেক ইন্সটিটিউটের ৬টি ক্যাম্পাসে। একইসাথে অনলাইনেও কোর্স গ্রহণ করেন কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, যুক্তরাজ্য এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে। ৩ মাসের কোর্স শেষে এ যাবত ৫ হাজার বাংলাদেশী উচ্চ বেতনে চাকরি পেয়েছেন আমেরিকান আইটি কোম্পানীতে। এই চাকরিতে প্রবেশের আগে বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষিত এইসব প্রবাসীরা ‘অডজব’ করছিলেন। অর্থাৎ ক্রমান্বয়ে তাদের আমেরিকান স্বপ্ন ফ্যাকাশে হয়ে পড়ছিল।’ ইঞ্জিনিয়ার হানিফ উল্লেখ করেন, ‘ঢাকায় পান্থপথ এবং গ্রীণরোডের কর্ণারে এই ইন্সটিটিউটের সম্প্রসারিত ক্যাম্পাস স্থাপন করেছি ৩ বছর আগে। বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে অভিবাসন ভিসা পাবেন-এমন লোকজনকে সেখানে কোর্স প্রদান করা হচ্ছে, যাতে তারা আমেরিকায় এসেই আইটি কোম্পানীতে চাকরি নিতে পারেন।’
উল্লেখ্য, এই সম্মেলনে আরো কয়েকজনকে ‘ফোবানা এওয়ার্ড’ প্রদান করা হয় বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্যে। এ সময় ফোবানার হোস্ট কমিটির আহবায়ক এম রহমান জহীর, সদস্য সচিব আরিফ আহমেদ আশরাফ এবং প্রধান সমন্বয়কারি আতিকুর রহমান মঞ্চে ছিলেন। সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবেক কেয়ারটেকার সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিজাম চৌধুরী, উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ী ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর এবং কালি প্রদীপ চৌধুরী। ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিনও ছিলেন সম্মেলনের বিশেষ অতিথি। উপ-মহাদেশের প্রখ্যাত শিল্পী রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমীন, ফকির আলমগীরও সম্মেলনের মধ্যমণি ছিলেন। গত এক দশকের মধ্যে এত ব্যয়বহুল সম্মেলন দেখেনি প্রবাসীরা।