নিউইয়র্কে বিপা ও শিল্পকলা একাডেমির অনবদ্য পরিবেশনা
দৈনিক সিলেট ডট কম
এনআরবি নিউজ, নিউইয়র্ক থেকে : ‘এ মাটি নয় জঙ্গিবাদের-এ মাটি মানবতার’ কোরাসে বাঙালির হাজার বছরের সংগ্রামী ইতিহাসের ধারাবিবরণী উপস্থাপন করলেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীরা। নাচ আর গানে কেবলই ধ্বনিত হলো হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে বাঙালির স্বাধীনতার অবিস্মরণীয় ঘটনাবলী এবং মাতৃভাষার জন্যে বাঙালিদের বুকের রক্ত বিলিয়ে দেয়ার প্রসঙ্গও গোটা পরিবেশকে ভিন্ন এক আমেজে আবিষ্ট করে। একাত্তরের উত্তাল দিনগুলোতে স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের গানগুলোর সাথে শিল্পীদের অভিনয়-শৈলী সকলকে মুগ্ধ করে। প্রবাস-প্রজন্মে বাঙালি সংস্কৃতি লালন ও বিকাশে কর্মরত ‘বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব পারফর্মিং আর্টস’ তথা বিপার শিল্পীরাও ‘দিবে আর নিবে মিলাবে মিলিবে’ শীর্ষক এ অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন করে উপস্থাপনেও সক্ষম হন।
জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশন এবং নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কন্স্যুলেটের যৌথ উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্র সফররত ‘বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক গ্রুপ’র ১০ শিল্পীর বিশেষ এ নৃত্যানুষ্ঠান হয় ‘বন্ধন : ফেস্টিভ্যাল অব কালচার’ ব্যানারে গত ১৫ অক্টোবর রোববার সন্ধ্যায় নিউইয়র্ক সিটির কুইন্স প্যালেসে।
বিপার কর্মকর্তা এ্যানী ফেরদৌসের নির্দেশনায় শেখ সিরাজুল ইসলাম এবং জিয়াসমীন আহমেদের অনবদ্য উপস্থাপনায় সন্ধ্যা ঠিক ৭টা ০১ মিনিটে শুরু এ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী তার শুভেচ্ছা বক্তব্যে বলেন, ‘এখানে আমি কিছু সুখবর দিতে চাই। সারাবিশ্বে সবচেয়ে পরিচিত সিডনী অপেরা হাউজের চেয়েও আকর্ষণীয় অপেরা হাউজ হচ্ছে ঢাকায় হাতিরঝিলে। গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগ্রহে এই অপেরা হাউজ নির্মাণের জন্যে ৬ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে।’ সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে এই ওপেরা হাউজ নির্মাণের মধ্য দিয়ে বাঙালি সংস্কৃতি চর্চায় নয়া মাত্রা যোগ হবে এটি বলার অপেক্ষা রাখে না।’ লাকী আরেকটি সুখবর দিয়েছেন যে, নিউইয়র্ক, লন্ডন, নয়াদিল্লী এবং কলকাতায় বাংলাদেশ কালচারাল সেন্টার নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াও চলছে জোরেসোরেই।
বাঙালিরা সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন মুক্তিযুদ্ধকে ত্বরান্বিত করেন। আজ তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মাতৃভাষার জন্যে বাঙালির আত্মত্যাগের দিন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে পরিণত হয়েছে। সে আলোকে রাজধানী ঢাকায় স্লোগান উঠেছে ‘সব মানুষের মাতৃভাষা রক্ষা করবে বাংলাদেশ’। লাকী বলেছেন, ‘রাজনীতি যার যার-বঙ্গবন্ধু সবার’-এই স্লোগান ধারণ করেই মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে দীপ্ত প্রত্যয়ে ধাবিত হতে হবে।’
শিল্পকলার মহাপরিচালক বলেছেন, সকল জেলায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নিজস্ব মিলনায়তনের পর ৪৯০ উপজেলায় শিল্পকলা একাডেমির শাখা চালু করা হয়েছে। অর্থাৎ সারাদেশেই সংস্কৃতি চর্চায় নেতৃত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি।
প্রবাস প্রজন্মে বাঙালি সংস্কৃতি বিকাশে বিপার কর্মতৎপরতার প্রশংসা করে লাকী বলেন, নতুন প্রজন্ম যাতে বাঙালি স্বত্তার সাথে জড়িয়ে থাকেন সে ব্যাপারে সকলকে সজাগ থাকতে হবে। তাহলেই বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম এই জনগোষ্ঠির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সর্বত্র সমুন্নত রাখা সম্ভব হবে।
অনুষ্ঠানে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন এবং কন্সাল জেনারেল শামীম আহসানও শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। এ অনুষ্ঠান আয়োজনে সর্বাত্মক সহায়তা করেছে বিপা ও তার কর্মীরা।
সফররত শিল্পকলা একাডেমির এই টিম পরিবেশন করে ‘হাজার বছরের বাংলাদেশ’ নৃত্যনাট্য। এতে অংশ নেন অনিক বসু, কস্তুরী মুখার্জি, এ বি এম শহীদুল ইসলাম, স্মীতা দেব, নাজনীন আলম জুই, অন্তু মজুমদার, ঐন্দ্রিলা শরাবতী তিথি এবং মুনমুন বিশ্বাস।
অনুষ্ঠান শুরুতে বিপার শিশু-শিক্ষার্থীরা সমবেত কন্ঠে সঙ্গীত পরিবেশন করে। নেতৃত্ব দেন নিলুফার জাহান। এরপর বিপার কর্মকর্তা ও কন্ঠশিল্পী সেলিমা আশরাফ প্রথমে সমবেত কন্ঠে এবং পরবর্তীতে বেশ কটি জনপ্রিয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন। বিপার শিক্ষার্থী শিল্পীরা গানের সাথে চমৎকার নৃতেও অংশ নেয়।
উপচে পড়া দর্শক-¯্রােতার এ অনুষ্ঠানে মূলত: বাঙালি আর বাংলার জয়গান ধ্বনিত হয় বিভিন্ন অবয়বে।