নাসির উদ্দীন ইউসুফের পক্ষে নিউইয়র্কের ৩১ বিশিষ্ট ব্যক্তির বিবৃতি
দৈনিক সিলেট ডট কম
এনআরবি নিউজ, নিউইয়র্ক থেকে : ‘বাংলাদেশের অস্তিত্ব স্বীকার করলেই রাজাকারের প্রতি ধিক্কার আর ঘৃণা প্রদর্শন করতে হবে। রাজাকারের সাথে আপসের মধ্যে কখনোই মুক্তিযোদ্ধাদের গৌরবোজ্জল ভ’মিকা খাটো করে দেখার অবকাশ থাকতে পারে না। সে আলোকেই চলচ্চিত্র পরিচালক খান আতা যে রাজাকার ছিলেন, সেটি জনমনে জাগ্রত রয়েছে এবং মুক্তিযোদ্ধা এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা ও নাট্য পরিচালক নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুর বক্তব্যে তারই প্রতিধ্বনি ঘটেছে।’ নিউইয়র্কে বসবাসরত ৩১ লেখক, সাংবাদিক, মুক্তিযোদ্ধা এবং সাংস্কৃতিক কর্মী পৃথক পৃথক বিবৃতিতে এ অভিমত পোষণ করেছেন।
২০ অক্টোবর প্রদত্ত এ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এখনো এক অসমাপ্ত গবেষণার আংশিক তথ্য প্রবাহ। সাম্প্রতিক সময়ে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময়কালীন শুধু নয় জাতিরজনক বঙ্গবন্ধুর হত্যার দিনে (পচাঁত্তরের পনেরই আগস্টে) খান আতার বিতর্কিত অবস্থানই পাকিস্তানের পক্ষে এবং বঙ্গবন্ধুর খুনীদের পক্ষের তার কর্মকান্ডের পূর্ণাঙ্গ তথ্যপূর্ণ ইতিহাস আবারো বিস্তারিতভাবে জনসম্মুখে এসেছে।’
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ক্র্যাক প্লাটুনের বীর গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা ও বরেণ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ নিউইয়র্কের অভিবাসী সাংস্কৃতিক সহযাত্রীদের এক সম্মিলনে এক প্রশ্নের সরাসরি উত্তরে এ তথ্য জানালে এই বিতর্কের সূত্রপাত হয়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ইতিহাসের দায়বদ্ধতা থেকে এই সত্যের সম্মুখীন হয়ে তিনি এ সাহসী সত্যভাষণ সামনে নিয়ে এনেছেন। আমরা তাঁর এই অবস্থানকে গৌরবের সাথে অভিনন্দন জানাই।’
‘খান আতার রাজনৈতিক স্খলন ও মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী অবস্থান এতোকাল অনেকের স্মৃতিতে সুপ্ত ছিলো আর নতুন প্রজন্মের সবার কাছে ছিলো অজানা, আর কেউ কেউ বা ছিলো তার সংগীত ও সৃষ্টিশীল কাজের অন্ধ অনুরাগী। নতুনদের জন্য এ তথ্য জানা যেমন অপ্রত্যাশিত, ঠিক তেমনি তাঁর ভক্তকূলের জন্য আবেগের টানা-পোড়েনে এ সত্যকে মেনে নেওয়াও কঠিন বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।’
‘কিন্তু ইতিহাসের নিষ্ঠুর সত্য-জ্ঞান সবার অভিপ্রেত। একাত্তর কিংবা পঁচাত্তরে তার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও মৃত্যুর পূর্বে এই বিতর্কিত অবস্থানের জন্য তিনি মর্মাহত, অনুতপ্ত কিংবা কোথাও কোন ভুল কখনোই স্বীকার করেননি’-উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে।
‘বাংলাদেশের অস্তিত্বের সাথে সম্পর্কযুক্ত এই রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনে খান আতার ধারাবাহিক বিতর্কিত অবস্থানের কথাই আমাদেরকে সবসময় স্মরণ করিয়ে দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে তার অবস্থানের কথা।’
‘খান আতাউর রহমান একাধারে সংগীত পরিচালক, চিত্রপরিচালক, গীতিকার-সুরকার, অভিনেতা ও গায়ক। কিন্তু তা সত্ত্বেও মুক্তিযুদ্ধকালে তার অবস্থান সম্পর্কে যে তথ্য জানা যায়, তা সর্বাংশে নিন্দনীয়। পাকিস্তানী চলচ্চিত্রকার এ. আর. কারদারের সহযোগী হয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে ‘দি বিট্রেয়াল’ তৈরী করে পাকিস্তানী বাহিনীর হত্যাযজ্ঞের বৈধতা দেয়া এবং ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকারী ফারুক রশিদকে সূর্যসন্তান ও বীর সেনানী বলে গান রচনার মধ্য দিয়েই তার মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অবস্থানকে সবসময় পরিস্কার করেছিলেন তিনি।’
বিবৃতিদাতারা বলেছেন, ‘সাম্প্রতিকালে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ ও সৈয়দ হাসান ইমাম মুক্তিযুদ্ধে তার ভূমিকা সম্পর্কে যেসব তথ্যাদি উপস্থাপন করেছেন, তা তার সম্পর্কে উপস্থাপিত পূর্ব অভিযোগসমূহের সত্যতা প্রতিপাদন করে। একজন মানুষের বহুমাত্রিক গুণ তার গুরুতর অপরাধকে ঢেকে দিতে পারে না। বীর মুক্তিযোদ্ধা নাট্য নির্দেশক, চলচ্চিত্রকার নাসির উদ্দীন ইউসুফ ইতিহাসের দায় থেকে আগামী প্রজন্মকে নির্ভার করেছেন। আমাদের শ্রদ্ধা ও অভিনন্দন এই গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাকে। আমাদের দ্বিগুণ সাহসের এক অভিঘাত নির্মানে যিনি আবারো আমাদের ইতিহাসের অভিযাত্রী করলেনÑতিনি নাসির উদ্দীন ইউসুফ। আমরা এই মুক্তিযোদ্ধার অসীম-সাহসী ভূমিকার পক্ষে আমাদের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করছি’।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন প্রবীন সাংবাদিক সৈয়দ মহম্মদউল্লাহ, শহীদ পরিবারের সন্তান ড. জিয়াউদ্দিন, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী তথা কন্ঠযোদ্ধা শহীদ হাসান, মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক লাবলু আনসার, মুক্তিযোদ্ধা রাশেদ আহমদ, কবি ফকির ইলিয়াস, মূলধারার রাজনীতিক মোরশেদ আলম, কম্যুনিটি এক্টিভিস্ট সউদ চৌধুরী, সরাফ সরকার, সংগীতশিল্পী শফি চৌধুরী হারুন, সাংবাদিক ও নারীনেত্রী নিনি ওয়াহেদ, লেখক-সাংস্কৃতিক সংগঠক মিনহাজ আহমদ, সাংবাদিক মাহফুজুর রহমান, আবৃত্তিকার নাট্যকর্মী মিথুন আহমেদ, সাংবাদিক ও সোস্যাল এক্টিভিস্ট মুজাহিদ আনসারী, সংগীতশিল্পী ও গণজাগরন সংগঠক আল আমীন বাব,ু অভিনেতা ও গণজাগরন সংগঠক সৈয়দ জাকির আহমদ রনি, সাংস্কৃতিক সংগঠক ও এক্টিভিস্ট মাহফুজা হাসান, সাংবাদিক শহিদুল ইসলাম, সংগীতশিল্পী স্বপ্না কাউসার, নাট্যশিল্পী গোলাম সারওয়ার হারুন, আবৃত্তিকার মাহতাব সোহেল, চিত্রশিল্পী বিশ্বজিৎ চৌধুরী, চিত্রশিল্পী সৈয়দ আজিজুর রহমান তারিফ, নাট্যকর্মী সিবলী নোমানী, আলোকচিত্রী ওবায়েদুল্লাহ মামুন, সংগীতশিল্পী কাবেরী দাস, সংগীতশিল্পী দীঠী হাসনাত, সংগীতশিল্পী জীবন বিশ্বাস, সাংস্কৃতিক কর্মী সাবিনা হাই উর্বি এবং আবৃত্তিকার হিরা চৌধুরী।