অস্ট্রেলিয়ায় ‘অদৃশ্য’ বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করবে টেসলা
দৈনিক সিলেট ডট কম
দৈনিকসিলেটডেস্ক: অস্ট্রেলিয়ার বিদ্যুৎ শক্তির ঘাটতি কমাতে নতুন উদ্যোগ নিচ্ছেন হাই-টেক কোম্পানি টেসলার প্রধান নির্বাহী ইলোন মাস্ক। এক ‘অদৃশ্য’ বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির পরিকল্পনা করেছেন তিনি। একে অদৃশ্য বলা হচ্ছে, কারণ বড় একটা জায়গাজুড়ে আলাদা একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের দরকার হবে না এর জন্য।
২৭ ফেব্রুয়ারি, মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যম বিজনেস ইনসাইডার স্টেট অব সাউথ অস্ট্রেলিয়ার বরাত দিয়ে জানায়, এই ভার্চুয়াল পাওয়ার প্ল্যান্ট তৈরির জন্য টেসলার পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে দেশটির সরকার।
১০০ দিনে পৃথিবীর বৃহত্তম ব্যাটারি
গত বছরের নভেম্বরে বাজি ধরে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ব্যাটারি তৈরি করেছিলেন ইলোন মাস্ক। দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ায় ১০০ দিনের কম সময়েও বিশ্বের সবচেয়ে বড় ব্যাটারি তৈরি করে দিয়েছে তার গাড়ি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান টেসলা।
প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট দ্য ভার্জের প্রতিবেদন অনুযায়ী এই ব্যাটারিকে বলা হচ্ছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি। এর ক্ষমতা ১০০ মেগাওয়াট। এই ব্যাটারি তৈরিতে খরচ হয়েছে ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি।
এর আগে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ইলোন মাস্ক অস্ট্রেলীয় সফটওয়্যার উদ্যোক্তা মাইক ক্যানন-ব্রুকেসের সঙ্গে বাজি ধরে এই শত মেগাওয়াট লিথিয়াম ব্যাটারি বানানোর পরিকল্পনা করেন।
সে সময় বাজিতে মাস্ক জানিয়েছিলেন, বায়ুশক্তি থেকে চার্জ হতে সক্ষম এই ব্যাটারি ১০০ দিনে বানিয়ে দেবে তার প্রতিষ্ঠান টেসলা। যদি তা না পারে তবে এর জন্য কোনো অর্থ পরিশোধ করতে হবে না।
মাস্ক আরও জানিয়েছিলেন, টেসলা যদি এই সময়সীমা অতিক্রম করে তাহলে ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার লোকসান গুনতে হবে প্রতিষ্ঠানটিকে।
উল্লেখ্য, অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ অঞ্চলে বিদ্যুৎতের নিরবচ্ছিন্ন সংযোগের অভাব রয়েছে। আর এই সমস্যা মোকাবেলায় ব্যাটারি তৈরির এই পরিকল্পনা অনুমোদন করে দেশটির কর্তৃপক্ষ।
সাম্প্রতিক পরিকল্পনা
দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার বিদ্যুতের ঘাটতি কমাতে ইলোন মাস্কের নতুন পরিকল্পনাটিও চমকপ্রদ। ২৫০ মেগাওয়াটের ‘ভার্চুয়াল পাওয়ার প্ল্যান্ট’ তৈরি করবেন তিনি। কিন্তু একে ভার্চুয়াল বা অদৃশ্য কেন বলা হচ্ছে?
কারণ এই পরিকল্পনা অনুযায়ী দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার ৫০ হাজার বাড়িকে সংযুক্ত করা হবে। পরিকল্পনার প্রথম পর্যায় ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার ১,২০০টি বাড়িতে স্থাপন করা হচ্ছে একটি করে ৫ কিলোওয়াট সোলার প্যানেল সিস্টেম এবং ১৩.৫ কিলোওয়াট-আওয়ার টেসলা পাওয়ারওয়াল ব্যাটারি। সোলার প্যানেলের সৃষ্ট বিদ্যুৎ এই ব্যাটারিতে জমা থাকবে। ২০১৯ সাল পর্যন্ত এই প্রকল্প অনুযায়ী কাজ চলবে। প্রকল্পের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পর্যায় শেষে মোট ৫০ হাজার বাড়িতে এই সোলার প্যানেল এবং ব্যাটারি স্থাপন করা হবে।
ইলোন মাস্কের ধারণাটি এমন-প্রতিটি বাড়িই নিজের প্রয়োজনের একটা বড় অংশের বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবে। বাকি বিদ্যুৎ ন্যাশনাল গ্রিড থেকে নিতে পারবে। যদি সেই বাড়ির প্রয়োজনের অধিক বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে সোলার প্যানেলটি, তাহলে তা ন্যাশনাল গ্রিডে যোগ হবে। ফলে দেশের সার্বিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে অবদান রাখতে পারবে প্রতিটি বাড়ি। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি বাড়িই একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অংশ হিসেবে কাজ করবে, তাই একে বলা হচ্ছে অদৃশ্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র বা ভার্চুয়াল পাওয়ার প্ল্যান্ট।
প্রকল্পের শেষে এই ৫০ হাজার বাড়ি নিজেদের প্রয়োজনের চাইতেও ৫০ শতাংশ বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। এই প্রকল্পে অংশ নেওয়ার জন্য বাড়ির মালিককে কোনো ফি প্রদান করতে হবে না। বরং তাদের বাড়ির সোলার প্যানেলের উৎপন্ন বিদ্যুৎ দিয়েই এই প্রকল্পের খরচ মিটিয়ে নেওয়া হবে। এই প্রকল্পে অংশগ্রহণ না করলেও বাড়ির মালিকরা নিজের খরচে টেসলার সোলার প্যানেল এবং পাওয়ারওয়েল ব্যাটারি ক্রয় করতে পারবে।
ইউরোপের কনসাল্টিং ফার্ম ফ্রন্টিয়ার ইকোনমিকসের এক হিসাব বলছে, টেসলার এই ভার্চুয়াল পাওয়ার প্ল্যান্ট ব্যবহারে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার বিদ্যুৎ খরচ কমে যাবে ৩০ শতাংশ।
প্রকল্পটি আসলেই উপকারী হবে কি না তা সময়ই বলবে। তবে অস্ট্রেলিয়ার সরকারের থেকে এত বড় একটি কনট্রাক্ট পাওয়াটা টেসলার জন্য যথেষ্টই লাভজনক।
সূত্র: Business Insider