জামিন মঞ্জুরের পর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা, সহসাই মুক্তি মিলছে না খালেদার
দৈনিক সিলেট ডট কম
দৈনিকসিলেটডেস্ক: বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হাইকোর্ট থেকে জামিন মঞ্জুরের পর জানা গেল গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন গ্রহণ করে হাজিরা পরোয়ানা (পিডব্লিউ) জারি করেছে কুমিল্লার একটি আদালত। একই সঙ্গে তাকে ২৮ মার্চ ওই আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এতে কিছুটা স্পষ্ট বেগম খালেদা জিয়ার সহসায় মুক্তি মিলছে না।
সোমবার বিকেলে কুমিল্লার আমলি আদালত-৫–এর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মুস্তাইন বিল্লাহ ওই আদেশ দেন। হাজিরা পরোয়ানা ইতিমধ্যে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। কুমিল্লার কোর্ট পরিদর্শক সুব্রত ব্যানার্জি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানতে চাইলে সুব্রত ব্যানার্জি বলেন, ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জগমোহনপুর এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করা হলে আগুনে পুড়ে আটজন যাত্রী নিহত হন। এ মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আদালত আগেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। সোমবার গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর কুমিল্লার আদালতে খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে আবেদন করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিকেলে আদালতের বিচারক তার বিরুদ্ধে প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট জারি করেন। একই সঙ্গে ২৮ মার্চ তাকে কুমিল্লার আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। হাজিরা পরোয়ানার কপি বিকেল সাড়ে তিনটায় কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে কপি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হবে।
এর আগে বহুল আলোচিত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ে কারা অভ্যন্তরে থাকা খালেদা জিয়ার চার মাসের জামিন মঞ্জুর করে হাইকোর্ট। সোমবার দুপুর আড়াইটায় হাইকোর্ট এ রায় দেয়।
খালেদা জিয়ার করা জামিন আবেদনের ওপর শুনানি শেষে সোমবার দুপুরে এ বিষয়ে আদেশের দিন ধার্য ছিল।
সোমবার আদালতের কার্যক্রম শুরুর পর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের হাইকোর্ট বেঞ্চ খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন মঞ্জুর করে তাকে চার মাসের জামিন দেন।
অবশ্য গতকাল রবিবারই এই আবেদনের আদেশ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিশেষ আদালতের রায়ের নথি হাইকোর্টে না পৌঁছায় আদালত আদেশের জন্য আজকের দিন নির্ধারণ করেন। পরে গতকাল রবিবার দুপুর ১২টার দিকে নিম্ন আদালত থেকে রায়ের নথি হাইকোর্টে এসে পৌঁছে।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয়। এরপর পুরান ঢাকার পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারকে বিশেষ কারাগার ঘোষণা দিয়ে খালেদা জিয়াকে সেখানে রাখা হয়।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আপিল দায়ের করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। এর পরই গত ২২ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় নিম্ন আদালতের দেওয়া সাজার বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার করা আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে জামিন আবেদনের ওপর শুনানির জন্য ২৫ ফেব্রুয়ারি দিন ঠিক করেন। সেইসঙ্গে স্থগিত করেন খালেদা জিয়ার অর্থদণ্ড।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বিকেলে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি হয়। শুনানি শেষে খালেদা জিয়ার মামলার নথি নিম্ন আদালত থেকে হাইকোর্টে এসে পৌঁছানোর পরই আদেশ দেওয়া হবে বলে জানানো হয়।
এ মামলায় মোট আসামি ছয়জন। তার মধ্যে তিনজন পলাতক। এই তিনজন হলেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী এবং বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
২০১০ সালের ৫ আগস্ট খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপপরিচালক হারুন-আর রশিদ। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ খালেদা জিয়াসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়।
মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন, মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।