খালেদা জিয়ার ঘটনাবহুল কারাভোগ, মুক্তি অনিশ্চিত
দৈনিক সিলেট ডট কম
দৈনিকসিলেটডেস্ক: বহুল আলোচিত চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ২৮ মার্চ বিশেষ আদালতে হাজিরের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। মঙ্গলবার রাজধানীর ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ জজ ৫ নম্বর আদালতের বিচারক ড. আখতারুজ্জামান এ নির্দেশ দেন।
এব্যাপারে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল সাংবাদিকদের বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে বিশেষ জজ ৫ নম্বর আদালতে খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে হাজির করার বিষয়ে শুনানি হয়। শুনানি শেষে বিচারক তাকে ২৮ মার্চ আদালতে হাজিরের নির্দেশ দেন।
এদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি’র চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত চেয়ে দুদকের আবেদন শুনানি শেষে জামিন বহাল রেখে অধিকতর শুনানির জন্য পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়েছে চেম্বার জজ আদালত। মঙ্গলবার উভয় পক্ষের শুনানি শেষে চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এ আদেশ দেন। এতে করে খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন বহাল থাকল। তবে পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি চলবে।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, চেম্বার জজ জামিন স্থগিত করেননি। শুনানির জন্য আপিল বিভাগে পাঠিয়েছেন। এতে করে তার (খালেদা জিয়া) জামিন বহাল থাকল।
এর আগে মঙ্গলবার সকালে খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত চেয়ে আবেদন করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও রাষ্ট্রপক্ষ। আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ আবেদন করা হয়। সোমবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চার মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ খালেদা জিয়ার জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হাইকোর্ট থেকে জামিন মঞ্জুরের পর জানা গেল গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন গ্রহণ করে হাজিরা পরোয়ানা (পিডব্লিউ) জারি করেছে কুমিল্লার একটি আদালত। একই সঙ্গে তাকে ২৮ মার্চ ওই আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এতে কিছুটা স্পষ্ট বেগম খালেদা জিয়ার সহসায় মুক্তি মিলছে না। সোমবার বিকেলে কুমিল্লার আমলি আদালত-৫–এর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মুস্তাইন বিল্লাহ ওই আদেশ দেন। হাজিরা পরোয়ানা ইতিমধ্যে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। কুমিল্লার কোর্ট পরিদর্শক সুব্রত ব্যানার্জি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানতে চাইলে সুব্রত ব্যানার্জি বলেন, ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জগমোহনপুর এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করা হলে আগুনে পুড়ে আটজন যাত্রী নিহত হন। এ মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আদালত আগেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
সোমবার গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর কুমিল্লার আদালতে খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে আবেদন করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিকেলে আদালতের বিচারক তার বিরুদ্ধে প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট জারি করেন। একই সঙ্গে ২৮ মার্চ তাকে কুমিল্লার আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। হাজিরা পরোয়ানার কপি বিকেল সাড়ে তিনটায় কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে কপি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হবে।
‘কুমিল্লার মামলায় খালেদা জিয়া জামিন না পেলে কারাগার থেকে মুক্তি পাবেন না’ বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেলারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম। মঙ্গলবার দুপুরে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে হাইকোর্টের চেম্বার জর্জ আদালত জিয়া অরফানেজ দূর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে হাইকোর্ট বেঞ্চ চার মাসের জন্য জামিন মঞ্জুর করলে সরকার পক্ষ থেকে জামিন বাতিলের আবেদন করেন। কিন্তু চেম্বার জজ হাইকোর্টের জামিন বহাল রেখে, আবেদনটি পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য আদেশ দেয়। আর এই আদেশের পর এক প্রতিক্রিয়ায় অ্যাটর্নি জেলারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম উপরোক্ত মন্তব্য করেন।
প্রসঙ্গত, গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয়। এরপর পুরান ঢাকার পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারকে বিশেষ কারাগার ঘোষণা দিয়ে খালেদা জিয়াকে সেখানে রাখা হয়। একদিকে জামিন জন্য আইনী লড়াই অন্যদিকে বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তারি, এই বাস্তবতায় আপাদত খালেদা জিয়ার ঘটনাবহুল কারাভোগ হয়তো দীর্ঘ হবে, ফলে মুক্তি অনিশ্চিতই থাকছে।