যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বাংলাদেশি প্রবেশের পথ ‘লারেদো’
দৈনিক সিলেট ডট কম
দৈনিকসিলেটডেস্ক: বাংলাদেশের অনেকেই টেক্সাসের লারেদো শহরের নাম শোনেননি। কিন্তু সেখান থেকেই অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের চেষ্টাকারী বেশিরভাগ বাংলাদেশিকে আটক করা হয়ে থাকে। গত ৬ মাসে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তের লারেদো শহর থেকে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের দায়ে ১৪০ জনের বেশি বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে গত মার্চ মাসে গ্রেফতার করা হয়েছে কমপক্ষে ২৪ জনকে।
যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত নজরদারি বিশেষ অভিযানের লারেদো সেক্টরের তত্ত্বাবধায়ক মিগুয়েল কনট্রেরাস জানান, দেশের অন্য যেকোনও সেক্টরের চেয়ে এই সেক্টরে বাংলদেশি গ্রেফতারের সংখ্যা বেশি। তবে বাংলাদেশিরা এই নির্দিষ্ট সেক্টরটি দিয়েই কেন পার হওয়ার চেষ্টা করেন তা জানা যায়নি।
কনট্রেরাস বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধী সংগঠনগুলো এই সীমান্তের চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করে। তারাই নির্ধারণ করে, কারা সীমান্ত অতিক্রম করবে, কখন করবে আর কোন পথ দিয়ে করবে। তিনি বলেন, গ্রেফতারের পরই তাদের স্বাস্থ্য ঠিক আছে কিনা তা নিশ্চিত করে সীমান্ত নজরদারি সংস্থা। দরকার পড়লে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ টেক্সাস এলাকায় আমরা তাদের চরম দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থায় ধরে থাকি। কিন্তু এখন পর্যন্ত গ্রেফতারকৃত বাংলাদেশিদের স্বাস্থ্য ভালোই ছিল।’ প্রাথমিক কাগজপত্র ঠিক করার পর গ্রেফতারকৃত অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ট্রাম্প প্রশাসন যখন ক্যাচ ‘ধরো এবং ছেড়ে দাও’ প্রক্রিয়াকে আরও কঠোর করার চিন্তা করছে ঠিক তখনই বাংলাদেশি নাগরিকদের গ্রেফতারের বিষয়টি খবরের শিরোনাম হচ্ছে। এই প্রক্রিয়ায় অবৈধ অভিবাসীদের ধরার পর অভিবাসন বিচারকের কাছে শুনানির জন্য অপেক্ষা করার সময় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। অভিবাসন আদালতে কয়েক লাখ অমীমাংসিত মামলা রয়েছে। তাই একটি মামলা শেষ হতে বছরের পর বছর সময় লাগে। এই সময়ের মধ্যে এসব ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রে নিজেদের জীবন গড়ে তোলেন। সমালোচকদের দাবি, অভিবাসন আদালতে মামলা জটের কারণে গ্রেফতার হওয়ার ভয় থাকা সত্বেও বিদেশি নাগরিকরা যুক্তরাষ্ট্রে অনুপ্রবেশ করে।
মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের মেক্সিকো সীমান্তে নিরাপত্তা বাড়ানোর মাধ্যমে অবৈধ অভিবাসন বন্ধের জন্য তিনি সামরিক বাহিনী পাঠাবেন। আর বাংলাদেশি নাগরিকদের গ্রেফতারের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কট্টর ডানপন্থী সংবাদমাধ্যম ব্রেইটবার্ট নিউজের খবরে তাদের সঙ্গে ইসলামি চরমপন্থীদের যোগসাজশের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
সীমান্ত নজরদারি সংস্থাকে উদ্ধৃত করে সংবাদমাধ্যমটির খবরে বলা হয়, বাংলাদেশি নাগরিকদের গ্রেফতারের খবরে দেখা যাচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মেক্সিকো হয়ে দক্ষিণ টেক্সাস পর্যন্ত একটি পরিষ্কার পাইপলাইন রয়েছে। ভাগ্য ভালো, এই দলটিকে ধরা গেছে। কিন্তু সন্ত্রাসে সহায়তাকারী দেশগুলো থেকে আরও কত লোক একই পাইপলাইন ব্যবহার করেছে তা জানা যায়নি।
ওয়াশিংটন ডিসির বাংলাদেশি দূতাবাস বলেছে, তারা এসব গ্রেফতারের ঘটনায় সচেতন রয়েছে আর তাদের পরিচয় নিশ্চিত করতে মার্কিন সরকারকে পূর্ণ সহযোগিতা করা হবে। দূতাবাসের মুখপাত্র শামীম আহমেদ বলেন, ‘আমরা মার্কিন আইনকে শ্রদ্ধা করি এবং এই বিষয়টি দেখার জন্য মার্কিন কর্তৃপক্ষের ওপর ছেড়ে দিয়েছি। গ্রেফতারকৃতদের বেশিরভাগই রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন। আর এজন্য ক্ষমতাসীন সরকারকে দোষারোপ করছে। কিন্তু দাবির পক্ষে তাদের কাছে কোনও দলিল নেই।’ তিনি আরও বলেন, এই মানুষগুলো তাদের জীবনকে উন্নত করতে চায়। আর এজন্য যে কোনও উপায়ে যু্ক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে মরিয়া হয়ে থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ ঘোষণা করেছে, কত তাড়াতাড়ি মামলার শুনানি শেষ করতে পারে ও কতটি মামলা নিষ্পত্তি করতে পারে তার ওপর নির্ভর করে অভিবাসন বিচারকদের মূল্যায়ন করা হবে। তবে অভিবাসন আন্দোলনকর্মীরা এই ঘোষণার সমালোচনা করে বলেন, এতে আদালতের সুবিচার বিপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেবে। আর এর ফলে নির্বাসনের ঘটনা আরও বাড়বে।
-বাংলা ট্রিবিউন