নিউইয়র্কে সাংবাদিক আড্ডায় ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি খোকন
দৈনিক সিলেট ডট কম
এনআরবি নিউজ, নিউইয়র্ক থেকে : প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আশরাফুল আলম খোকন বললেন, ‘বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট দুই ব্যক্তির মালিকানাধীন কোম্পানীকে দিয়ে দেয়া হয়েছে বলে যে খবর নিউইয়র্কের গণমাধ্যমে এসেছে, তা সত্য নয়, সম্পূর্ণ ভুল।’
১৪ মে সোমবার রাতে নিউইয়র্কে ‘খ্যাতিমান সাংবাদিক নঈম নিজাম ও পীর হাবিবুর রহমান’ দুই বন্ধুর সাথে সোমবারের আড্ডা’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সমাবেশে খোকন এ প্রসঙ্গের অবতারণা করেন নিউইয়র্কে বাংলাদেশীদের পরিচালনাধীন একটি টেলিভিশনের এক অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট দুই ব্যক্তি-মালিকানাধীন কোম্পানীকে দিয়ে দেয়া হয়েছে বলে প্রচারের পরিপ্রেক্ষিতে। উল্লেখ্য, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও এর আগে ঢাকায় একই অভিযোগ করেছেন। প্রবাসে জামাত-শিবির পন্থি মিডিয়ায় বাংলাদেশের ইতিবাচক সংবাদকেও কৌশলে নেতিবাচক হিসেবে উপস্থাপনের মাধ্যমে সহজ-সরল প্রবাসীদের নতুন করে যাতে বিভ্রান্ত করা না হয়, সেজন্যে খোকন ঐ তথ্যকে পুরোপুরি মিথ্যা ও ভুল বলে সরকারের পক্ষ থেকে একটি ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেন। এই আড্ডায় নিউইয়র্ক হতে প্রকাশিত ও প্রচারিত গণমাধ্যমগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তা ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার বিশিষ্টজনেরা অংশ নেন। বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক এবং নিউজ টোয়েন্টিফোর টিভির সিইও নঈম নিজাম এবং পূর্ব-পশ্চিম ওয়েব পোর্টালের প্রধান সম্পাদক পীর হাবিবুর রহমান নিউইয়র্ক সফরে রয়েছেন এবং তাদের উদ্যোগেই বাংলাদেশ ও প্রবাসের সমসাময়িক বিষয়ে খোলামেলা মতবিনিময়ের অভিপ্রায়ে এই অনুষ্ঠান হয় জ্যাকসন হাইটসে একটি পার্টি হলে। সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক হাসানুজ্জামান সাকী।
ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি খোকন উল্লেখ করেন, ‘রাষ্ট্রের কিছু কোম্পানী থাকে, যেমন বিটিসিএল (ইঞঈখ ড়ৎ ইধহমষধফবংয ঞবষবপড়সসঁহরপধঃরড়হং ঈড়সঢ়ধহু খরসরঃবফ ), টেলি টক -এগুলো রাষ্ট্রীয় কোম্পানী। ঠিক একইভাবে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটও রাষ্ট্রীয় একটি কোম্পানী। তাই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট একই কোম্পানী দ্বারাই পরিচালিত হবে। কোন ব্যক্তি মালিকানায় যাবার কোন সুযোগ আসলে নেই।’
বাংলাদেশের কোন কোন টিভি চ্যানেলের টক শো’র সমালোচনা করে খোকন আরো বলেন, ‘টক শো’র সকল হোস্টই যদি একই মতের হন, তাহলে সেখানে ভিন্নমত পোষণের সুযোগ কোথায়?’ ‘রাষ্ট্রীয় কিছু মিমাংসিত বিষয় রয়েছে, সেগুলো নিয়ে যদি কথিত ঐসব টক শো-তে বিভ্রান্তিকর তথ্য উপস্থাপন করা হয় এবং ঐ টক শো-তে যদি ভিন্নমতের কেউ না থাকেন, তাহলে ঐ ভয়ংকর মিথ্যাগুলোই সহজ-সরল মানুষকে গ্রাস করতে পারে। টক শো-গুলোতে যদি বলা হয় যে, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হননি, জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হয়নি, পাকিস্তানী হায়েনারা ভারতীয় বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। এমন জঘন্য অপপ্রচারের জবাব কে দেবে?’ ‘আসলে বাংলাদেশের অধিকাংশ মিডিয়ার একটি ধারণা হচ্ছে যে, সরকারের বিরুদ্ধে বললেই টক শো-টি জনপ্রিয় হবে। আর এভাবেই ইতিহাস বিকৃতির ঘটনাবলির উদ্ভব হচ্ছে।’ এমন একটি টক শো’-তে আমি টেলিফোনে অংশ নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার থেকে বিরত হবার আহবান জানালে ঐ টক শো’র একজন হোস্ট ‘শাক দিয়ে মাছ ঢাকার’ অপচেষ্টা হিসেবে বললেন, ‘আগে জানতাম যে প্রধানমন্ত্রী অফিসের কেউ টিভি কিংবা টক শো দেখেন না। তারা উত্তর পাড়ার রিপোর্ট অনুযায়ী কাজ করেন। কিন্তু এখন দেখছি প্রধানমন্ত্রী অফিসের লোকজনও টিভি শো দেখেন। এমন কথা বলে পরিস্থিতি ভিন্নখাতে নিলেও আমার প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে কিছুই বলা হয়নি।’
এ আড্ডায় নঈম নিজাম বলেছেন, ‘বাংলাদেশে এখন এক শ’ থেকে দেড় শতজনের মত ব্যবসায়ী রয়েছেন, যারা ঋণ খেলাপি নন। তারা হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিচ্ছেন। এই ধারাক্রম গতিশীল রাখতে আইনের শাসন বহাল রাখতে সকলকে সোচ্চার থাকতে হবে।’
নঈম নিজাম উল্লেখ করেন, ‘আমাদের জাতিরজনক, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, আমাদের সংবিধান, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা-এসব মিমাংসিত ইস্যুর সাথে আপস করা চলবে না। এগুলোকে সমুন্নত রেখে সাংবাদিকতা করতে হবে। তাহলেই আটলান্টিকের উভয় পাড়ের সাংবাদিকতা জনগণের জন্যে কল্যাণ বয়ে আনতে সক্ষম হবে।’ নঈম উল্লেখ করেন, ‘বাংলাদেশে কথা বলার মানুষ কমে যাচ্ছে। কম মানুষই যথাস্থানে যথাযথ বক্তব্য উপস্থাপন করতে পারেন। এভাবেই সবকিছু কমে আসছে।’ ‘আগের মত উদারতার সাথে সাংবাদিকতার জায়গাও কমে যাচ্ছে। এখন অনেক কঠিন সময় পার করেই আমাদের কাজ করতে হচ্ছে’-মন্তব্য নঈম নিজামের।
পীর হাবিবুর রহমানও অভিন্ন ভাষায় বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার মাধ্যমে সমাজকে সঠিক দিক-নির্দেশনার আহবান জানান।
এতে অংশগ্রহণকারি গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের মধ্যে ছিলেন সাপ্তাহিক ঠিকানার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক এম এম শাহীন, সাপ্তাহিক বাঙালির সম্পাদক কৌশিক আহমেদ, প্রখ্যাত ফটো সাংবাদিক লুৎফর রহমান বিনু, বিএফইউজের সাবেক সভাপতি মঞ্জুর আহমেদ, বাংলাদেশ প্রতিদিনের উত্তর আমেরিকা সংস্করণের নির্বাহী সম্পাদক লাবলু আনসার, সাপ্তাহিক বর্ণমালার সম্পাদক মাহফুজুর রহমান, বাংলা পত্রিকার সম্পাদক আবু তাহের, সাপ্তাহিক বাংলাদেশ’র সম্পাদক মাহমুদ খান তাসের, মুক্তকন্ঠের সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সেলিম, আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সেক্রেটারি শহিদুল ইসলাম, সাপ্তাহিক ঠিকানার সাবেক নির্বাহী সম্পাদক জাবেদ খসরু, অভিনেত্রী রেখা আহমেদ, লুৎফুন্নাহার লতা, ডেমক্র্যাটিক পার্টির নেতা মোর্শেদ আলম, শহীদ পরিবারের সন্তান ফাহিম রেজা নূর, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা হাকিকুল ইসলাম খোকন, মুক্তিযোদ্ধা সুব্রত বিশ্বাস ও মুকিত চৌধুরী, কম্যুনিটি এ্যাক্টিভিস্ট আনিসুর রহমান মিঠু, খন্দকার ফরহাদ, হেলাল মাহমুদ, জাসদ নেতা নূরে আলম জিকু প্রমুখ।