গ্রীণকার্ডের পথ সুগম করতে সিনহা বাংলাদেশকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন
দৈনিক সিলেট ডট কম
এনআরবি নিউজ, নিউইয়র্ক থেকে: ‘যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের অভিপ্রায়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন। সেটি এখনও মঞ্জুর হয়নি বলে বাংলাদেশের বিচার ববস্থা তথা সরকারের বিরুদ্ধে নানা কল্প-কাহিনী রটাচ্ছেন। বাংলাদেশে আইনের শাসন নেই-এই বিষয় আমেরিকান অভিবাসন কর্মকর্তা/জজ যদি বিশ্বাস করেন তাহলে খুব সহজে তার আবেদন মঞ্জুর হবে অর্থাৎ গ্রীণকার্ড পেয়ে যাবেন। ক্ষমতাসীন সরকার এবং সরকারী দলের বিরুদ্ধে এ ধরনের অপপ্রচারনার মধ্য দিয়ে ইতিপূর্বে অনেকে গ্রীণকার্ড পেয়েছেন। রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে ভিসা নেয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রে এসে এর আগেও অনেকে একই পন্থায়স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ পেয়েছেন কিংবা এখনও বিবেচনাধীন রয়েছে’-এসব তথ্য প্রকাশ করা হয় নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সংবাদ সম্মেলন থেকে। ৩০ সেপ্টেম্বর রোববার অপরাহ্নে জ্যাকসন হাইটসে তিতাস পার্টি হলের এ সংবাদ সম্মেলন থেকে মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকারিয়া চৌধুরী আরো বলেন, ‘ব্যক্তিস্বার্থে এস কে সিনহা বাংলাদেশকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর অপচেষ্টা চালিয়েছেন। এটা দেশদ্রোহিতার সামিল। এ জন্যে তার বিরুদ্ধে মার্কিন আদালতে মামলার প্রস্তুতি চলছে। বাংলাদেশেও মামলা হওয়া উচিত।’
২৯ সেপ্টেম্বর শনিবার বিকেলে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে ‘নাশনাল প্রেসক্লাব’র ছোট্ট একটি কক্ষে নিজের লেখা ‘এ ব্রোকেন ড্রীম: রুল অব ল, হিউম্যান রাইটস এন্ড ডেমোক্র্যাসি’ নামক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে সাবেক এই বিচারপতি বলেছেন, ‘যে দেশের প্রধান বিচারপতির কোন নিরাপত্তা নেই, সে দেশে সাধারণ নাগরিকের অবস্থা কী-তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন দল ও সরকারের অন্যায়-অবিচারের প্রতিবাদ করলে অথবা ন্যায়ের পথে থাকলে তার রেহাই নেই। সত্য কথা লিখে ২ থেকে ৩ শত সাংবাদিক দেশত্যাগের পর আমেরিকায় রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন।’
এস কে সিনহার এহেন মন্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে প্রদত্ত বক্তব্যে মহানগর আওয়ামী লীগের মুখপাত্র ও অন্যতম যুগ্ম সম্পাদক নূরল আমিন বাবু বলেন, ‘নিউইয়র্কের একটি টিভি ও দুটি প্রিন্ট মিডিয়া সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এসব মিডিয়ার শীর্ষ কর্মকর্তারা একাত্তরের ঘাতক হিসেবে ফাঁসিতে ঝুৃলা মীর কাশেম আলীর ভাই মীর মাসুম আলীকে সাথে নিয়ে বিপুল অর্থ ব্যয়ে বিতর্কিত এই বই প্রকাশ করেছে। ইতিমধ্যেই এসব মিডিয়াকে সরকারের সকল অনুষ্ঠানে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ২৮ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে তার স্পষ্ট প্রকাশ ঘটেছে। এখন সময় হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত এবং বাংলাদেশের ইমেজ প্রশ্নে আপসহীন প্রবাসীদেরও ঐসব মিডিয়া বর্জন করার।’ সংবাদ সম্মেলন থেকে অভিযোগ করা হয় যে, গত বছর সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্জিনিয়ায় অবস্থানকালে আমরা এসব মিডিয়ার নামোল্লেখ করে বিস্তারিত অবহিত করা সত্বেও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমদাদ চৌধুরী ঐসব মিডিয়ার সাথে দহরম-মহরম অব্যাহত রেখেছেন। শুধু তাই নয়, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের ক্রোড়পত্র, প্রধানমন্ত্রীর নাগরিক সংবর্ধনার বিজ্ঞাপণ এবং সেই সংবর্ধনা অনুষ্ঠান সম্প্রচারের অনুমতিও দিয়েছিলেন। এই দুই কর্মকর্তার জামাত-শিবির প্রীতি সর্বমহলে ধীকৃত হচ্ছে।’
সংবাদ সম্মেলন থেকে বিচারপতি এস কে সিনহার ষড়যন্ত্র সম্পর্কে প্রতিটি দেশপ্রেমিক প্রবাসীকে সজাগ থাকার উদাত্ত আহবান জানানোর পাশাপাশি মার্কিন রাজনীতিকদেরকেও বাংলাদেশের প্রকৃত ঘটনাবলি অবহিত করার আহবান জানানো হয়।
এস কে সিনহা নিউজার্সিতে বসবাস করছেন তার ভাইয়ের বাড়িতে। সেটি ২ লাখ ৮০ হাজার ডলারে ক্রয় করা হয়েছে গত জুন মাসে। অভিযোগ উঠেছে যে, সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার টাকায় তা ক্রয় করা হয়েছে এবং এ টাকা তিনি পেয়েছেন জামাত-শিবিরের কাছে থেকে।’
সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দের মধ্যে আরো ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মাসুদহোসেন সিরাজি, আবুল হুসেন এবং আলহাজ্ব আব্দুল কাদের মিয়া, যুগ্ম সম্পাদক সুব্রত তালুকদার, মাহফুজ আহমেদ, উপদেষ্টা হাজী জাফরউল্লাহ, কুইন্স আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মতিউর রহমান চৌধুরী এবং সমীরুল ইসলাম বাবলু। যুক্তরাষ্ট্র স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি দরুদ মিয়া রনেলও ছিলেন সেখানে।
এদিকে জানা গেছে, বই প্রকাশের অনুষ্ঠানে প্রদত্ত বক্তব্য/মন্তব্যের মধ্য দিয়ে এস কে সিনহা নিজের স্বার্থে বাংলাদেশের সুনাম ধ্বংসের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন। বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার স্বাধীনতাকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়ে বাংলাদেশের সরকার ও ক্ষমতাসীন দলকে বিব্রত করেছেন। সামনের নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে ক্ষতিগ্রস্ত করার ফাঁদ পেতেছেন। এজন্যে তার বিরুদ্ধে আমেরিকায় মামলার উদ্যোগ নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক নিজাম চৌধুরী। একটি ল’ ফার্ম ভাড়া করা হয়েছে এ মামলা পরিচালনার জন্যে।
এদিকে খ্যাতনামা একজন মার্কিন এটর্নী নাম গোপন রাখার শর্তে এ সংবাদদাতাকে জানান, ‘যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় তাকেই প্রদান করা হয়, নিজ দেশে যে ব্যক্তির নিরাপত্তা নেই এবং দেশে ফিরলেই তাকে বর্বরোচিত আচরণের শিকার হবার আশংকা রয়েছে। এজন্যে যারাই রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার আবেদন করেন তারাই সরকারের বিরুদ্ধে অথবা ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে জঘন্যতম অভিযোগ উত্থাপন করেন। অর্থাৎ যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, সে দলের সমর্থকরাও যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের অভিপ্রায়ে নিজের পরিচয় গোপন করে বিরোধী দল অথবা মতবাদের লোক হিসেবে উপস্থাপন করেন। কেউ কেউ মুসলমান হয়েও হিন্দু অথবা খ্রিস্টান কিংবা বৌদ্ধ হিসেবে আবেদন করেন।’ ‘এস কে সিনহার বর্তমান কথাবার্তাও সে ধরনের একটি পরিক্রমা’-মন্তব্য নিউইয়র্কের ঐ এটর্নীর।