‘অর্থপাচার রোধে ব্যাংকগুলোকে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে’

দৈনিক সিলেট ডট কম
সিলেট: বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর, বিআইবিএম নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান এস এম মনিরুজ্জামান বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রসারের সাথে সাথে বাড়ছে অর্থ পাচার। দেশের বেশির ভাগ অর্থ ব্যাংকের মাধ্যমেই পাচার হচ্ছে। আমদানি-রপ্তানীতে পণ্য ও সেবায় ওভার এবং আন্ডার ইনভয়েসিং, আমদানি-রপ্তানিতে বহুমাত্রিক ইনভয়েসিং, পণ্য ও সেবা সম্পর্কে মিথ্যা বর্ণনা উন্নয়নকে বাধাগ্রস্থ করে। একইভাবে শিপমেন্টের ক্ষেত্রেও ওভার এবং আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে অর্থ পাচার হচ্ছে। ব্যাংকগুলো যদি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করে কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করে সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসে তবে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি করা সম্ভব।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অবস ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম)- এর উদ্যোগে ‘ট্রেড সার্ভিসেস অপারেশন্স অব ব্যাংকস’ শীর্ষক পর্যালোচনা কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বুধবার সকালে ঢাকাস্থ বিআইবিএম-এর সম্মেলন কক্ষে এই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক সিলেট অফিস। ব্যাংকের প্রশিক্ষণ হলে আয়োজিত এই কর্মশালায় সরকারি, বেসরকারি এবং স্বায়ত্বশাসিত ব্যাংকের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। কর্মশালার শুরুতে সিলেট অফিসের পক্ষ থেকে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংক, সিলেট-এর নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ তারিকুজ্জামান এবং বিআইবিএম-এর পক্ষ থেকে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মহাপরিচালক মো. আব্দুর রহীম ।
কর্মশালার দ্বিতীয় পর্বে পর্যালোচনা টিমের পক্ষ থেকে ‘ট্রেড সার্ভিসেস অপারেশন্স অব ব্যাংকস’ শীর্ষক পেপার উপস্থাপন করেন বিআইবিএম-এর প্রশিক্ষণ বিভাগের পরিচালক প্রফেসর ড. শাহ মো. আহসান হাবীব। এর আলোকে বক্তব্য রাখেন মিউচুয়্যাল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের ভাইস প্রেসিডেন্ট এ টি এম নেছারুল হক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংক লিমিটেডের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহমুদুর রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংকের উপমহাব্যবস্থাপক কামাল হোসাইন, উপমহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আনিসুর রহমান, বিআইবিএম-এর সহকারী অধ্যাপক তোফায়েল আহমদ, সহকারী অধ্যাপক অন্তরা জেরীন। কর্মশালার তৃতীয় পর্বে উন্মুক্ত আলোচনা ও প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এ পর্বে আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুব-উল-আলম, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাস্টম্স ভেলুয়েশন এন্ড ইন্টারনাল অডিট কমিশনারেট-এর কমিশনার ড. মইনুল খান, বিআইবিএম-এর সুপারনিউমারারি প্রফেসর মো. ইয়াছিন আলী, সুপারনিউমারারি প্রফেসর হেলাল আহমদ চৌধুরী, বিআইবিএম-এর ড. মোজাফ্ফর আহমদ চেয়ার প্রফেসর ড. বরকত-এ-খোদা, বাংলাদেশ ব্যাংক, সিলেট-এর মহাব্যবস্থাপক জীবন কৃষ্ণ রায়। কর্মশালায় প্রশ্নোত্তর পর্বে ঢাকা এবং সিলেট-এর সরকারি, বেসরকারি এবং স্বায়ত্বশাসিত ব্যাংকের কর্মকর্তাবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন এবং বিজ্ঞ আলোচকবৃন্দ তাদের প্রশ্নের জবাব দেন। কর্মশালায় সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করেন বাংলাদেশ ব্যাংক, সিলেট-এর যুগ্ম পরিচালক মোজতবা রুম্মান চৌধুরী। কর্মশালায় বিআইবিএম-এর প্রশিক্ষণ বিভাগের পরিচালক প্রফেসর ড. শাহ মো. আহসান হাবীব ‘ট্রেড সার্ভিসেস অপারেশন্স অব ব্যাংকস’ শীর্ষক কী-নোট পেপার উপস্থাপন করেন। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ট্রেড সার্ভিসের ওপর নির্ভরশীল। প্রতিটি দেশে ট্রেড সার্ভিসের ক্ষেত্রে আলাদা রেগুলেশন রয়েছে। এক্ষেত্রে আমরাও নতুন গাইডলাইন করতে যাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে ব্যবসাভিত্তিক অর্থ পাচার বাড়ছে। তবে অর্থ পাচার প্রতিরোধে কাজ করছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফইউ)। দুই বছর থেকে ব্যাংকের সব কর্মকর্তাদের মানিলন্ডারিং বিষয়ে প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হয়েছে। এ সময় এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) খোলার ক্ষেত্রে আমদানিকারকদের সবকিছু যাচাই-বাছাই করতে ব্যাংক কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। ব্যাংকগুলোর অর্থ পাচারের কৌশল সম্পর্কে তদারকি করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ করেন। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে বিদ্যমান সমস্যান সমাধানে সরকারকে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য আহবান জানান।