নিউইয়র্কে ঈদ আড্ডায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ছড়িয়ে দেয়ার তাগিদ

দৈনিক সিলেট ডট কম
এনআরবি নিউজ, নিউইয়র্ক থেকে : বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিস্তৃতভাবে ইংরেজীতে প্রকাশের ওপর গুরুত্বারোপ করা হলো বিশিষ্টজনদের অনানুষ্ঠানিক ঈদ-পরবর্তী আড্ডায়। কারণ, এখন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর সুদূর প্রসারি পরিকল্পনা অনুযায়ী বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের দীর্ঘ পথ বেয়ে একাত্তরের মার্চে তা চ’ড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছার ওপর প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সম্বলিত ইতিহাস আন্তর্জাতিক ভাষায় প্রকাশিত হয়নি। এ প্রক্রিয়া অবলম্বনের ক্ষেত্রে কালক্ষেপনের অবকাশ নেই বলেও মন্তব্য করা হয়। বলা হয়, নিউইয়র্কসহ বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ অনেক সিটিতে ঘাপটি মেরে থাকা একাত্তরের পরাজিত শক্তি এবং তাদের চেলা-চামুন্ডারা নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।
৫ জুন বুধবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্কে চ্যানেল আই অফিসে প্রাণবন্ত এ আড্ডার আয়োজন করেন যুক্তরাষ্ট্র সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা রাশেদ আহমেদ। আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা-সাংবাদিক লাবলু আনসারের স ালনায় এ আড্ডায় অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় বন্ধু ড. পার্থ ব্যানার্জি, বাংলাদেশ সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য ও প্রকাশনা সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ শাহজাহান মৃধা, জাতিসংঘে বাংলাদেশের ফার্স্ট সেক্রেটারি (প্রেস) নূরএলাহি মিনা। বিশিষ্টজনদের মধ্যে ছিলেন কন্ঠযোদ্ধা রথীন্দ্রনাথ রায় এবং শহীদ হাসান, যুক্তরাষ্ট্র সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের সেক্রেটারি ও মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল বারি, সংগঠনের সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবুল বাশার চুন্নু এবং হারুন ভ’ইয়া, যুব সম্পাদক ও ডেমক্র্যাটিক পার্টির তৃণমূলের সংগঠক ফাহাদ সোলায়মান, নারী বিষয়ক সম্পাদক সবিতা দাস, সাংস্কৃতিক সম্পাদক উইলি নন্দি, প্রচার সম্পাদক শুভরায়, জ্যাকসন হাইটস বাংলাদেশী বিজনেস এসোসিয়েশনের সেক্রেটারি কামরুজ্জামান কামরুল, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হাজী এনাম, প্রেসক্লাবের সেক্রেটারি শহীদুল ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ মো. আবুল কাশেম, সাংগঠনিক সম্পাদক কানু দত্ত, ফটো-সাংবাদিক শাহ জে চৌধুরী, বাংলাদেশ সোসাইটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক মনিকা রায়, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন তবলা বাদক তপন মোদক, প্রবাসের খ্যাতনামা কন্ঠশিল্পী শাহ মাহবুব, বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের প্রিয়কন্ঠ পাপিমন, প্রিয়াঙকা।
ঈদ-উত্তর প্রীতি-ভোজ ছিল মূল লক্ষ্য, কিন্তু উপস্থিতি বাড়তে থাকায় আলোচনায় আসে বাংলাদেশ এবং মুক্তিযুদ্ধ। ভারতীয় বন্ধু পার্থ ব্যানার্জি সাম্প্রতিক সময়ে আমেরিকার খ্যাতনামা লেখক-সাংবাদিক-বিজ্ঞানী-দার্শনিক-রাজনীতিক-অর্থনীতিবিদের সাথে নানা কারণে বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনার পর নিজ থেকেই তাগিদ অনুভব করছেন যে ইংরেজী ভাষায় আরো বেশী লেখালেখি হওয়া দরকার বাঙালির অবিস্মরণীয় উত্থান নিয়ে। গত সাড়ে ৪ দশকে যা হয়েছে, তা কোনক্রমেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আস্থার স্থান করে নিতে পারেনি বলেও মানবাধিকার সংগঠক ড. পার্থ উল্লেখ করেন। নিজেদের ভাষায় নিজেদের মধ্যে বাংলাদেশ অভ’দয়ের ইতিহাস সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। তথ্য-প্রযুক্তির সুযোগ নিয়ে তা ছড়িয়ে দিতে হবে সকল ভাষার মানুষের কাছে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ মিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি নূরএলাহি মিনা জানান, ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবসের স্বীকৃতি আদায়ের পথে আমরা অনেকটা ্এগিয়েছি। সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে জাতিসংঘে। সে কাজ করতেই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সবিস্তারে আন্তর্জাতিক বন্ধুদের কাছে উপস্থাপন করতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রবাসীদেরও গুরুত্ব অপরিসীম। বিশেষ করে বাংলাদেশী আমেরিকানরা নিজ নিজ সিনেটর-কংগ্রেসম্যানের কাছে এ নিয়ে দেন-দরবার করতে পারেন।
বাংলাদেশে সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের পক্ষ থেকেও নিরন্তরভাবে চেষ্টা চালানো হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট ও স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে-এ কথা জানান মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান মৃধা। এ সময় উল্লেখ করা হয় যে, নিউইয়র্কে বেশ কটি মিডিয়া হাউজে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসই শুধু বিকৃতির অপচেষ্টা চলছে না, একইসাথে মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে সহ তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চরিত্র হননের সংঘবদ্ধ একটি চেষ্টা সক্রিয় রয়েছে। অতি সম্প্রতি নিউইয়র্কের একটি গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপণের লেবাসে বাংলাদেশের জাতিরজনক এবং তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ঔদ্ধত্ব প্রদর্শন করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলকে সজাগ থাকার উদাত্ত আহবানও উচ্চারিত হয়েছে।
দ্বিতীয় পর্বে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি জাগানিয়া সঙ্গীত পরিবেশন করেন রথীন্দ্রনাথ রায়। জনপ্রিয় সব গানে অংশ নেন শহীদ হাসান, শাহ মাহবুব, সবিতা দাস, পাপিমন, মনিকা রায় প্রমুখ।