যুক্তরাষ্ট্রে এসাইলাম মিললেও বাঁচতে পারলেন না আব্দুল্লাহ

দৈনিক সিলেট ডট কম
এনআরবি নিউজ, নিউইয়র্ক থেকে : দালালকে ২৫ লাখ টাকা দিয়ে বিভিন্ন দেশ
ঘুরে মেক্সিকো হয়ে দুর্গম পথে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছে ৪ মাস ডিটেনশন সেন্টারে
অবস্থানের পর স্থায়ীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের অনুমতি মিললেও বাংলাদেশী যুবক
মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ (২৯) স্বপ্নের আমেরিকায় বসতি গড়তে পারলেন না।
নিউইয়র্কে মদ্যপ চালকের গাড়ি চাপায় ৯ জুন রোববার রাত ১১টার দিকে
ব্রুকলিনের ইস্ট ১০৫ ও এভিনিউ ডি-তে তার প্রাণবায়ু উড়ে যায়। আব্দুল্লাহের
লাশবাহি কফিন ১৪ জুন শুক্রবার সন্ধ্যায় জেএফকে ত্যাগ করেছে ঢাকার উদ্দেশ্যে।
নিউইয়র্কের পুলিশ জানায়, ট্রেজার লগিং (২২) নামের ওই নারী মদ্যপ অবস্থায়
গাড়ি চালাচ্ছিলেন। এ সময় তার চার বছর বয়সী ছেলে সঙ্গে ছিল।
এক পর্যায়ে তিনি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আব্দুল্লাহর সাইকেলকে চাপা দেন। ঘটনার পরপরই
আব্দুল্লাহকে স্থানীয় ব্রুকডেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎকরা
তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় চালক লিগিংসের বিরুদ্ধে হত্যা ও মদ্যপ
অবস্থায় শিশুর জীবন বিপন্ন করে গাড়ি চালানোর অভিযোগ দাযের করা হয়েছে।
ম্যানহাটানের হারলেমে বসবাসকারী আব্দুল্লাহর চাচা বেলাল হোসেন জানান,
নোয়াখালির বেগমগঞ্জের সন্তান আব্দুল্লাহ রাজনৈতিক কারণে ২০১৭ সালে
মেক্সিকো হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন। সে সময় টেক্সাসের ডিটেনশন সেন্টারে
কাটাতে হয় ৪ মাস। রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছিলেন আব্দুল্লাহ।
ইতিমধ্যেই তা মঞ্জুর হয়েছে। শীঘ্রই গ্রীণকার্ডের আবেদন করার কথা ছিল।
কিন্তু সবকিছু তছনছ করলো নেশাগ্রস্থ ড্রাইভারের বল্গাহীন আচরণ।
ব্রুকলিনের ইস্ট নিউইয়র্কে একটি বাসায় চার বাংলাদেশি বন্ধুর সঙ্গে থাকতেন
আব্দুল্লাহ।
আব্দুল্লাহর রুমমেট আরিফুর রহমান সবুজ ও খোকন উল্ল্যাহ জানান, তারা
নিজেদের অবস্থান জানতে ‘জেনলি’ নামের একটি অ্যাপস ব্যবহার করেন। রোববার
রাতে ওই অ্যাপে তারা দেখেন, আব্দুল্লাহ একটি স্থানে দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে
অবস্থান করছেন। এতে তারা চিন্তিত হয়ে পড়েন। এরপর তারা তাকে ফোন করেন।
কোনো সাড়া না পেয়ে তারা সেখানে চলে যান। সেখানে পুলিশ তাদের জানায়,
আব্দুল্লাহ মারা গেছে।
বন্ধুরা জানান, উবারের ডেলিভারিম্যান হিসেবে কাজ করছিলেন
আব্দুল্লাহ। সর্বশেষ খাদ্য ডেলিভারির পরই মদ্যপ ড্রাইভারের নিয়ন্ত্রণহীন গাড়ি তার
প্রাণ কেড়ে নিল। তার বন্ধুরা জানান, কষ্টার্জিত অর্থে নিউইয়র্কে একটি
ফ্রাইড চিকেন রেস্টুরেন্ট দেয়ার স্বপ্ন ছিল আব্দুল্লাহর। তার চাচা ট্যাক্সি
ড্রাইভার বেলাল হোসেন আরো জানান, আব্দুল্লাহ ছিলেন ৫ ভাই-বোনের
সর্বকনিষ্ঠ। গোটা পরিবারের দায়িত্ব সে নিয়েছিল। সংসারের ভার নেয়ার
অভিপ্রায়ে সর্বস্ব খুইয়ে এসেছিল আমেরিকায়।
ড্রাইভারকে আটক করেছে পুলিশ এবং ৫০ হাজার ডলার বন্ডে জামিন দিয়েছে
ব্রুকলীনের ক্রিমিনাল কোর্ট। ঘাতক ড্রাইভারের এটর্নী জামাল জনশন
জানিয়েছেন যে, ড্রাইভিংয়ের সময় তার মক্কেল মদ্যপ ছিলেন। গাড়িটি তিনি ক্রয়
করেন মাত্র ৩দিন আগে। গাড়ির ইঞ্জিন বেল্ট এবং ব্রেকে সমস্যা ছিল বলেও মাননীয়
আদালতকে অবহিত করেন এটর্নী জনশন।
আব্দুল্লাহর নামাজে জানাযা বুধবার অপরাহ্নে ব্রুকলীনে অনুষ্ঠিত হয়। তাকে
দাফন করা হবে নোয়াখালীর গ্রামের বাড়িতে।