গ্রন্থালোচনাঃ সেলিম-যে গল্পের শুরু আছে শেষ নেই
দৈনিক সিলেট ডট কম
নজরুল ইসলাম বাসন: নতুন বই যখন বাজারে আসে অথবা নতুন কোন তথ্যের যখন সমারোহ হয়, তখন তা জানার আগ্রহ অনেকেরই থাকে। লন্ডন এমনিতেই জ্ঞান বিজ্ঞান আর উন্নতির বলা যায় একেবারে সারা বিশ্বের কেন্দ্র বিন্দু। প্রাচ্যের খ্যাতিমান অক্সফোর্ড আর হাজার বছরের পুরনো লন্ডন কিংসক্রসের আর অক্সফোর্ডের সেন্ট্রাল লাইব্রেরী বই এর জন্য বিখ্যাত, যেখানে প্রবেশ করা মাত্রই বিশ্বের এমন কোন বই নেই যা পাওয়া যাবেনা। সেন্ট্রাল লাইব্রেরি একেবারে ছিম ছাম-বই আর বই। রাজ্যের সকল বই-যেখানে বই হাতে নিয়ে স্টাডি করতে মন চাইবে। সময় কিভাবে চলে যাবে বুঝে উঠা দায়। তার উপর সহযোগিতার জন্য কিউরেটর আর লাইব্রেরি সহযোগিদের সহযোগিতা আপনার পড়ার আর জানার আগ্রহকে আরো বাড়িয়ে তুলবে। সেন্ট্রাল লাইব্রেরির ক্যাটালগে চোখ বুলাতেই আটকে গেলো এক জায়গায়-আমাদের শেষ ঠিকানা, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। লেখক ব্রিটিশ বাংলাদেশি। লন্ডন প্রবাসি।amar priyo suridh. ফেসবুকের মাধ্যমে সেলিম আহমেদের নতুন বই নির্বাচিত কলামের সংবাদ জেনেছিলাম।সুদৃশ্য সুন্দর মোড়কের বইয়ের ছবি দেখেছিলাম, আগ্রহ ছিলো পড়ার। এর মধ্যে লন্ডনের লাইব্রেরিতে একই লেখকের শেষ ঠিকানা নামের বই পেয়ে আগ্রহের মাত্রা আরো বেড়ে গেলো। nirbachito kolam niye selim nijei hajir potrika office. Tokhon dui duie char -ja amake ek nimishei niye jay boiyer govire.
০২) বইটি হাতে নিয়েই এক ধরনের কম্পন অনুভুত হলো। বইয়ের প্রচ্ছদে সেলিম আহমেদ আল্লাহ এবং নবীজীর ক্যালিগ্রাফি দিয়েছেন-অথচ ইংরেজবাবুদের লাইব্রেরিতে সেই বই যত্নের সাথেই পাওয়া গেলো। এতো প্রাঞ্জল, এতো অল্প কথায়, আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের বাস্তবতার সাথে মিলিয়ে পারলৌকিক এবং বিশেষ করে কবরের জীবনের প্রতি লেখক এতো দারুনভাবে পাঠককে মন্ত্রমুগ্ধের মতো নিয়ে গেছেন-বইটি না পড়লে বুঝতেই পারতামনা। ekhanei amar dekha O jana priyo selimer krititto।
আলেম ওলামাগণ হরহামেশাই ওয়াজ মাহফিলে কবরের জীবন নিয়ে অনেক কথাই বলেন, আলোকপাত করেন। কিন্তু এমন সহজ সরল আর প্রাঞ্জল ভাষায় পাঠকের মনকে ছুয়ে যেতে পারে- বইটি না পড়লে উপলব্ধি করা যাবেনা।
ইংরেজি পাঠকদের জন্য দুরুদ শরীফের ইংরেজি তর্জমা বইয়ের বাড়তি পাওনা। বইয়ের নামাযের অংশে চমৎকারভাবে একটি ভাষণের সারাংশ শিরোনামে জিব্রাইল আলাইহিওয়াসাল্লামের ইস্যুতে এতো সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন-সত্যি অসাধারণ।
আর মক্কা শরীফের হাজরে আসওয়াদ চুমো দেয়ার ঘটনার বর্ণনা-হজ্ব ও উমরাহ কারীদের জন্য উপকারে আসবে সন্দেহ নাই।
বইটির লক্ষণীয় বিষয় হলো গতানুগতিকতার বাইরে প্রচলিত প্রথা ভাঙ্গার এক সূক্ষন কৌশল লক্ষণীয়-অনেকের কাছে বিশেষ করে প্রকাশক আর বুদ্ধা লেখকদের কাছে সমালোচিত হতে পারে। কিন্তু তা উতরে গেছে বইয়ের প্রকাশক সেই কৈফিয়ত দিয়ে রেখেছেন। বইয়ের মুখবন্ধে লেখক সম্পর্কে সুন্দর আলোচনা করেছেন আজকের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডঃ আবদুল মোমেন।
০৩) শেষ ঠিকানা বই পড়ার পর নির্বাচিত কলাম বইটি পড়ার আগ্রহ বেড়ে গেল আরো বেশী মাত্রায়। তবে নির্বাচিত কলাম বইটি বেশ বড় এবং অনেক লেখা, যা সময় সুযোগ নিয়েই পড়তে হয়। তারপরেও একবার হাতে নিলে সূচীপত্র উল্টালেই আপনি আটকে যাবেন বইয়ের পাতায়। একের পর এক রহস্য আর সময়ের প্রেক্ষিতে সময়ানুযায়ী ঘটনা সমূহের রিপোর্ট আর বিশ্লেষণ। অনেকগুলো রাজনৈতিক যেমন আছে, তেমনি আছে ঐতিহাসিক, সমসাময়িক (তখনকার)তো আছেই। মজার ব্যাপার হলো রাষ্ট্রীয় নীতি নির্ধারনী, ডিপ্লোম্যাসি, সামাজিক, অর্থনৈতিক সব বিষয়ই বইটিতে স্থান পেয়েছে দারুনভাবে। মুখবন্ধে বলা হয়েছে এটি প্রথম পর্ব। তিন পর্বের দ্বিতীয় পর্ব ছাপার জন্য তৈরি। প্রথম পর্বে বিখ্যাত সাংবাদিক আব্দুল গাফফার চৌধুরী,রাজনীতিবিদ আ স ম আব্দুর রব, একটি পতাকার জন্ম, একটি দেশের জন্ম, সিরাজুল আলম খানের সাথে সরাসরি কথোপকথন- বইটির অনন্য এক বিশেষত্ব। বিশেষ করে, অনেকেই একমত হবেন, আমাদের জানামতে, সিরাজুল আলম খান এখন পর্যন্ত কারো সাথে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সরাসরি কথা বলেননা, কোন সাক্ষাতকারও দেননা।তার মুখ যেন তালা হয়ে আছে ৭২ এর পর থেকে। কিন্তু কেন? এই প্রথম সিরাজুল আলম খান এই বইয়ের লেখকের সাথে সেসব নিয়ে আলোকপাত করেছেন।এমন কিছু এবস্ট্রাক্ট তথ্য বইয়ে রয়েছে, যা আপনাকে ভাবিয়ে তুলবে।
বইয়ের মধ্যে অযাচিত কোন তথ্যের সমারোহ নেই। ঐতিহাসিক তথ্যগুলোতে লেখকের নিজস্ব কোন মতামত নেই, যা আছে সবই ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের জবানীতে। এটাই লেখকের আরো এক বিশেষত্ব।
বইয়ে বেশ কিছু বিজ্ঞান মনস্ক আধুনিক লেখাও রয়েছে, যা অনেক নতুন তথ্যের অবতারনা করা হয়েছে। জঙ্গিবাদ শেখ হাসিনার ভিতর বাইরের শত্রু লেখাটি বেশ মুন্সিয়ানা রয়েছে, রেফারেন্স এবং তথ্যসম্বলিত, সময়ের সাথে মানিয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধুর সাথে মধ্যরাতের কথোপকথন-সুন্দর এক রম্যরচনা এবং ম্যাসেজ ক্লিয়ার। বইয়ের একটি কলাম পড়লে মনে হবে লেখক বুঝি এই দল করে, অপর কলামে গেলেই ভুল ভেঙ্গে যাবে, মনে না এই দল, আবার আরেক কলামে গেলেই মনে হবে কোন দলই করেনা, এক সময় মনে হবে বামপন্থী, আবার মনে হবে ডান বাম মধ্য-এই ম্যাজিকটাই লেখকের বড় ক্রেডিট।
ডেমোক্রেসি মেইড ফ্রম বাংলাদেশ, গার্মেন্টস, দুই নেত্রীর জাদুর বাক্স- এক কথায় অসাধারণ উপস্থাপনা, যা পাঠক মাত্রই আনন্দ চিত্তে এক নিমিষেই পড়ে নিবেন।
বইয়ের শেষ দিকে ছবির এলবাম-লেখককে পাঠকের সামনে জীবন্ত করে তুলেছে।
বইয়ের ছাপা এবং প্রচ্ছদ উন্নতমানের। দাম সাশ্রয়ী মূল্যের- যা অকল্পনীয়। তবে বইটি বেশ ভারী। প্রকাশনী সংস্থার সেদিকে আরো মনোযোগি হওয়া উচিত।