বাবা-বাবা বলে মিনতি করলেও দয়া হয়নি মেম্বারের (ভিডিও)
দৈনিক সিলেট ডট কম
দৈনিকসিলেটডেস্ক:ছাগল চুরির অপবাদ দিয়ে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় এক আওয়ামী লীগ নেতার কার্যালয়ে দুই যুবককে হাত-পা বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। নির্যাতনের সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তা ভাইরাল হয়।
নির্যাতনের পর দুই যুবককে পুলিশে দেওয়া হয়। এরপর তাদেরকে ছাগল চুরির মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৩১ ডিসেম্বর (থার্টিফার্স্ট নাইট) রাতে সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি আলাউদ্দিন হাওলাদারের কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। আলাউদ্দিন হাওলাদার কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার।
গতকাল বৃহস্পতিবার ফতুল্লার কুতুবপুর ইউনিয়নের এক যুবকের ফেসবুক আইডি থেকে দুই যুবককে নির্যাতনের ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। এরপর ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে যায়। নির্যাতনের শিকার নাঈম (২৫) কুতুবপুর ইউনিয়নের মুসলিমপাড়া এলাকার আব্দুর রব মাস্টারের ছেলে এবং অপরজন একই এলাকার বাসিন্দা রাতুল (৩০)।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ১২ ডিসেম্বর শাহী মহল্লা এলাকার শফিকুল ইসলামের দুটি ছাগল চুরি হয়। পরে শফিকুল থানায় অভিযোগ দেন। একই সঙ্গে কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার আলাউদ্দিনের কাছে বিচার দেন তিনি। এরই সূত্র ধরে গত ৩১ ডিসেম্বর রাতে নাইম ও রাতুলকে ছাগল চুরির অপবাদ দিয়ে নিজের কার্যালয়ে নিয়ে আসেন মেম্বার আলাউদ্দিন। পরে দুই যুবককে বেঁধে ফেলা হয়।
এরপর আলাউদ্দিন মেম্বারের উপস্থিতিতে হাত-পা বেঁধে দুই যুবককে গণপিটুনি দেন কয়েকজন ব্যক্তি। এ সময় ২০ থেকে ৩০ লোক উপস্থিত ছিলেন। গণপিটুনির একপর্যায়ে ছাগল চুরির কথা স্বীকার করেন দুই যুবক। পরে আহত অবস্থায় দুই যুবককে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়।
মেম্বারের কার্যালয়ে দুই যুবককে গণপিটুনির ঘটনার ভিডিও গতকাল স্থানীয় এক যুবকের ফেসবুক থেকে পোস্ট করা হলে ভাইরাল হয়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা করেছেন অনেকেই।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, আলাউদ্দিন মেম্বারের উপস্থিতিতে তার কার্যালয়ে হাত-পা বেঁধে দুই যুবককে বেধড়ক পেটাচ্ছেন কয়েকজন। এ সময় নির্যাতন থেকে বাঁচতে বাবা-বাবা বলে কাকুতি-মিনতি করছেন দুই যুবক। বাবা-বাবা বলে কাকুতি-মিনতি করলেও তাদের মন গলেনি। আশপাশে থাকা লোকজন দৃশ্যটি দাঁড়িয়ে দেখছিল। তাদের বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি কেউ।
নাঈম ও রাতুলের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ জানায়, ১২ ডিসেম্বর শাহী মহল্লা এলাকার শফিকুল ইসলামের বাড়ি থেকে দুটি ছাগল চুরি হয়। পরে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে মুন্সিগঞ্জ থেকে ছাগল উদ্ধারসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১ জানুয়ারি তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
তবে আলাউদ্দিন হাওলাদার মেম্বার জানিয়েছেন, সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়ি এলাকা থেকে ছাগল উদ্ধার করা হয়েছিল। আর দুই যুবককে তার কার্যালয় থেকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে নাঈমের মা নাজমা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে প্রিন্টিং কারখানায় কাজ করে। ৩১ ডিসেম্বর রাতুলের সঙ্গে নাঈমকেও ধরে নিয়ে যায় আলাউদ্দিন মেম্বার। বাড়ি থেকে মারতে মারতে নিয়ে যাওয়া হয় ছেলেকে। এরপর আলাউদ্দিন মেম্বারের অফিসে বেঁধেও মারধর করা হয়। কুকুরকেও এমনভাবে পেটায় না মানুষ। অথচ আমার ছেলেকে নির্মম নির্যাতন করেছে তারা। আমার ছেলে অন্যায় করলে আমাকে জানাতে পারতেন মেম্বার, পুলিশে দিতে পারতেন। কিন্তু এমন অমানবিক নির্যাতন করে আমার বুকটা ভেঙে দিয়েছে তারা। আমি এর বিচার চাই।’
দুই যুবককে মারধরের কথা স্বীকার করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা আলাউদ্দিন মেম্বার। তিনি বলেন, ‘তারা ছাগল চুরি করেছিল। সিসিটিভির ফুটেজে ধরা পড়েছিল ঘটনা। ছাগলের মালিক থানায় অভিযোগ দেওয়ার পাশাপাশি বিষয়টি মীমাংসার জন্য আমাকে দায়িত্ব দেয়। পরে রাতুলকে ধরে আনার পর চুরির কথা স্বীকার করছিল না। এরপর পিটুনি দিলে ছাগল চুরির কথা স্বীকার করে রাতুল। সেই সঙ্গে রাতুল জানায় তার সঙ্গে নাঈমও ছিল।’
আলাউদ্দিন মেম্বার আরও বলেন, ‘নাঈমকে ধরে আনার পর প্রথমে চুরির কথা স্বীকার করেনি। এরপর তাকেও পিটুনি দেওয়া হয়। পিটুনি খেয়ে ছাগল চুরির কথা স্বীকার করে নাঈমও। এরপর পুলিশকে খবর দেয়া হয়। পরে ছাগলসহ তাদেরকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।’
জনপ্রতিনিধি হয়ে দুই যুবককে এভাবে মারধরের অধিকার আছে কি না জানতে চাইলে মেম্বার আলাউদ্দিন বলেন, ‘আসলে এভাবে মারধর করা অন্যায় হয়েছে। কিন্তু নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনি। তাই মাইরটা একটু বেশি হয়ে গেছে। তবুও তো আমি ছাগল উদ্ধার করতে পেরেছি।’
এ বিষয়ে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসলাম হোসেন জানান, নাঈম ও রাতুল নামে দুই যুবককে ছাগল চুরির মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে চুরি হওয়া ছাগল উদ্ধার করা হয়েছে। ছাগল চুরির মামলায় তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
ওসি বলেন, ‘গ্রেপ্তারের আগে ওই দুই যুবককে আলাউদ্দিন মেম্বারের অফিসে মারপিটের বিষয়টি আমি জানতাম না। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে মারপিটের ওই ভিডিও দেখেছি। ছাগল চুরি করলেও এভাবে তাদের মারধর করা ঠিক হয়নি। কেউ আইন হাতে তুলে নিতে পারে না। এটা অবশ্যই অপরাধ। মারধরের শিকার যুবকদের পরিবারের কেউ অভিযোগ দেয়নি। এ ঘটনায় তাদের পরিবার অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’https://www.facebook.com/amadersomoy/videos/735171850340925/?t=47
-আমাদেরসময়