করোনায় ওষধ ব্যবহারে সতর্কতা

দৈনিক সিলেট ডট কম
ডা. এসএম সহিদুল ইসলাম: বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমিত কোভিড-১৯ এর সর্বপ্রথম খোঁজ মিলেছিল ৮ মার্চ। আর আজ বুধবার পর্যন্ত সরকারি হিসেবে এ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৭১ হাজার ৬৭৫ জন। কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বেড়েই চলেছে দিনের পর দিন। কোভিড ১৯ থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র উপায়, বাসায় যত বেশি সম্ভব অবস্থান করা। আর জীবিকার তাগিদে যদি বাইরে বের হতেই হয় তাহলে মাস্ক, গ্লাভস, ফুলহাতা জামা পরিধান করতে হবে এবং নূন্যতম ২০-৪০ সেকেন্ডের জন্য সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত পরিষ্কার করা অথবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করে নিতে হবে।
সাম্প্রতিক ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে করোনা রোগের জন্য বিভিন্ন ওষধ সেবনের জন্য বলা হচ্ছে। তার কিছু দিক আমি তুলে ধরছি।
আইভারমেকটিন নামক একটি ওষধের কথা ইদানিং বলা হচ্ছে—যেন করোনার কোনো উপসর্গ দেখা যাওয়া মাত্রই তা সেবন করে ফেলা উচিত। অথচ আইভারমেকটিন করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করে কি না তা নিয়ে গবেষণা চলছে। বিজ্ঞানীরা গবেষণায় যে মাত্রায় ব্যবহার করে দেখেছেন সেই মাত্রা মানবদেহে ব্যবহার করা একেবারেই নিরাপদ নয় এবং তা শরীরের জন্য মারাত্মক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে।
হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন করোনা চিকিৎসায় প্রথম দিকে ব্যবহার করা হলেও এখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থ্যাসহ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এফ ডি এ এই ওষধ ব্যবহারের ওপর পূর্ণাঙ্গ ভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। গবেষণায় দেখা যায়, হৃদরোগসহ অনেক ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায় তা ছাড়া এটি প্রয়োগে মৃত্যু হারও অনেক বেশি।
অনেকে জ্বর, সর্দি, কাশি এলেই প্রথম দিন থেকেই বিভিন্ন ধরনের এন্টিবায়োটিক যেমন এজিথ্রোমাইসিন, ডক্সিসাইক্লিনসহ অন্যান্য এন্টিবায়োটিক সেবন করছেন যা একেবারেই কাম্য নয়। ভাইরাসকে কখনও এন্টিবায়োটিক দিয়ে শেষ করা যায় না। ভাইরাসকে দমন করার জন্য সর্বপ্রথম হাতিয়ার হলো—আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা, তার সাথে প্রয়োজন হলে এন্টি ভাইরাল ওষধ সেবন করা। আর কোনো কারণে যদি সেকেন্ডারি ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয় কেবলমাত্র সেই সময়ে এন্টিবায়োটিক গ্রহণ করা উচিত এবং তা অবশ্যই রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী।
ভয় পাবেন না, ভয় ছড়াবেন না। নিজে সতর্ক হোন, অন্যকেও সতর্ক করতে সাহায্য করুন। করোনা চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক জাতীয় নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে যার দ্বারা কোভিড আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা প্রদান করার জন্য বলা হয়েছে।। দয়া করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন, তাতেই আমরা মুক্ত হবো করোনার এই ভয়াল থাবা থেকে। সবার সর্বোচ্চ সুস্বাস্থ্য কামনা করছি।
লেখক : ডা. এস এম সহিদুল ইসলাম, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ।