ভাষা আন্দোলনে সিলেট: এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১১:০০ অপরাহ্ণ
নুরুল ইসলাম,টরন্টো, কানাডা: ১৯৪০ দশকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে পাকিস্তান সৃষ্টির আগ থেকে সর্বপ্রথম সিলেটে নারী-পুরুষ মিলে জনসমাবেশ, বাংলা ভাষার আন্দোলনে সিলেটের তরুণ শিক্ষার্থীরা চরম ভাবে নির্যাতন বরণ,সিলেট শহরে কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ (বর্তমানে শহীদ সুলেমান হল) হলে বার বার সভা সমিতির আয়োজন, সিলেট থেকে প্রকাশিত পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকীগুলো বাংলাভাষার দাবিকে জনগনের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করণ, সিলেটের প্রাণকেন্দ্র গোবিন্দচরণ পার্কে (বর্তমানে হাসান মার্কেট) উত্তাল জনসভা,মিছিলে মিছিলে উত্তাল সিলেটের রাজপথ- এই ভাবে নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে সিলেটবাসীরা বাংলা ভাষার দাবিকে বাংলা ভাষা আন্দোলনের রূপান্তরিত করার দুর্দান্ত সাহসী ও ঐতিহাসিক ভুমিকারেখেছেন। ভাষাআন্দোলনের সময় সিলেটের বাহিরে বিশেষ করে ঢাকায় সিলেটের অনেক কৃতি সন্তান উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। বিশেষ করে সিলেটের মহীয়সী নারীরা বাংলা ভাষা আন্দোলনে ব্যতিক্রমধর্মী অদমনীয় বলিষ্ট সাহসী ভুমিকা রেখেদৃষ্টান্তস্থাপনকরেছেন। ইতিহাসের পাতায় সিলেটের এই গৌরব উজ্জ্বল ইতিহাস স্বর্ণালীঅক্ষরেলিপিব্দ্ধ থাকবে।
জাতির বিভিন্ন সংকটময় সময়ে শাহজালালের পুণ্যভুমি সিলেটের মানুষ বার বার উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে।
১৭৮২ সালেভারতীয় উপমহাদেশে সিলেটের পীরজাদা এবং তার দুই ভাই সৈয়দ মুহাম্মদ হাদি ও সৈয়দ মুহাম্মদ মাহদী নেতৃত্বে সর্বপ্রথম ব্রিটিশবিরোধী সশস্ত্র আন্দোলন থেকে শুরু করে উনিশ শতকে সর্বভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলন, ১৯৪০ দশকে পাকিস্থান আন্দোলন, ১৯৫০ দশকে বাংলা ভাষা আন্দোলন এবং ১৯৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধে দেশে বিদেশে বসবাসরত সিলেটবাসীদের অবদান অবিস্মরণীয় হয়ে ইতিহসেলিখা থাকবে।
এখন ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারী মাস- বাংলা ভাষারমাস। আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা উদযাপনের মাস। তাই আজ সংক্ষিপ্ত ভাবে দুই পর্বে আলোচনা করবো বাংলা ভাষা আন্দোলনে সিলেটের নারী পুরুষের কি গৌরবোজ্জ্বল অবদান ছিল। প্রথম পর্বে ভাষা আন্দোলনে সিলেটের নারীদের অবদান এবং দ্বিতীয় পর্বে সিলেটের পুরুষদের অবদান নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করবো।
১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের সময় সিলেট ভারতের সাথে থাকবে না প্রস্তাবিত পাকিস্থানে যোগ দেবে এই প্রশ্নের সমাধানের জন্য গণভোটের ব্যবস্থা করা হয়ে ছিল। উল্লেখ্য সিলেট তখন আসামের সাথে সংযুক্ত ছিল।
সিলেটে গণভোটের প্রচারণা চলাকালীন সময়ে; মুসলিম লীগের উচ্চ পর্যায়ের একজন নেতা পাকিস্তানসরকারেরযানবাহনওযোগাযোগমন্ত্রীআব্দুর রব নিশতার নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী প্রতিনিধি দল সিলেটকে পাকিস্থানে যোগ দেয়ার পক্ষে প্রচারণার জন্য ১৯৪৭ সালের জানুয়ারী মাসে সিলেট সফর করে ছিলেন।
১৯৪৭ সালের ১১ জানুয়ারী সিলেটের একটি মহিলা প্রতিনিধি দল পাকিস্থানি প্রতিনিধি দলের সাথে সাক্ষাত করে তৎকালীনপ্রধানমন্ত্রীবরাবরেতাদের কিছু দাবি সম্বলিত একটি স্মারকলিপিহস্তান্তর করেন। এই স্মারকলিপির মধ্যে অন্যতম একটি দাবি ছিল পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হতে হবে বাংলা ভাষা। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে স্মারকলিপি আকারে বাংলাভাষাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা দাবি উত্থাপনছিল বাংলা ভাষার দাবির ইতিহাসে প্রথম পদক্ষেপ এবং ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে উজ্জ্বলতর মাইল ফলক।
১৯৪০ দশকে সারা দেশে ভাষা আন্দোলন গড়ে ওঠার অনেক আগেই সিলেটের মহিলারা বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় রাজপথে নেমে এসে আন্দোলন শুরু করে ছিলেন। তখন থেকে সিলেটের মহিলারা ভাষার দাবিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে গিয়ে অনেক ত্যাগ ও নির্যাতন মোকাবেলা করেছেন। তারা সবাই মুসলিমলীগের নেতৃত্ব দানকারি পরিবারের সদস্য এবং তারা নিজেও সবাই মুসলিম লীগের নেত্রী ছিলেন, তাসত্বেওতারা মুসলিম লীগের কেনন্দ্রীয় নেতাদের সাথে বাংলা ভাষার প্রশ্নে কোন প্রকার আপোস করেননি। তারা মুসলিম লীগের ভাষানীতির তীব্র বিরোধীতা ও সমালোচনা করে ভাষা আন্দোলনকে জনপ্রিয় করে গতিবান করে তুলেছিলেন।।
বাংলা ভাষা দাবির পক্ষে সিলেটের নারী-পুরুষের এই আন্দোলন বাধাবিঘ্ন ছাড়া বিনা প্রতিবন্ধকতা ও প্রতিরোধে এগোয়নি। এ আন্দোলনের জের ধরে সে সময় সিলেটে উর্দু সমর্থক কিছু পথভ্রষ্ট লোক বাংলা ভাষার দাবির পক্ষের সভা সমিতি ও মিছিলে বাধা দেয় এবং উর্দু সমর্থক পত্রিকা ইস্টার্ণ হেরাল্ড (পরিবর্তিত নাম আসাম হেরাল্ডে) মহিলানেত্রী জোবেদা রহিমের নেতৃত্ত্বে বাংলা ভাষার দাবি করে পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি প্রদানের বিরোধিতা করে একটি সম্পাদকীয়তে অশোভন মন্তব্য প্রকাশ করে। এই অশোভন বক্তব্যের প্রতিবাদ করেন মহিলানেত্রী জোবেদা রহিম সহ স্মারকলিপিতে স্বাক্ষরদানকারী মহিলা নেত্রীরা। মাহমুদ আলি সম্পাদিত সাপ্তাহিক নওবেলালের ১২ মার্চ সংখ্যায় প্রকাশিত এক প্রতিবাদ লিপিতে তিনি বলেন, “যাহারা পুর্ব পাকিস্তানের বাংলা ভাষাভাষী হইয়া মাতৃভাষার বিরুদ্ধাচরণ করে তাহারা মাতৃভাষার বিশ্বাসঘাতক কু-পুত্রতুল্য।”
সিলেটের যে সব মহীয়সী মহিলারা এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে ছিলেন তাঁরা সবাই ছিলেন উচ্চবংসভুত সম্ভ্রান্ত রাজনৈতিক সচেতন পরিবারের সদস্য। তাদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি হচ্ছে- সেই সময়ে সিলেট জেলা মহিলা মুসলিম লীগের সভানেত্রী জোবেদা রহীম, তিনিবাংলাদেশেরমহিলাদেররাজনীতিরঅন্যতমপথিকৃত।তিনি ছিলেন সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকা দক্ষিণ শিলঘাট নিবাসী খান বাহাদুর শরাফত আলী চৌধুরীর কন্যা,হবিগঞ্জেরখানবাহাদুরআবদুররহিমের স্ত্রী এবং সেইসময়েরমন্ত্রীসভারপ্রভাবশালীমন্ত্রীতফজ্জুলআলীরশাশুড়ী।
বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী, (হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর মা), তিনি ছিলেনপাকিস্তানজাতীয়পরিষদেরসদস্য। স্বামী আব্দুররশিদচৌধুরীছিলেনঅবিভক্তভারতেরকেন্দ্রীয়বিধানসভারসদস্য।
সহ-সভানেত্রী সৈয়দা শাহার বানু চৌধুরী (অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের জননী), তিনি ছিলেনআসামপার্লামেন্টেপ্রথমমুসলমানমহিলাএমপি।সিলেটেরনারীজাগরণেরঅগ্রদূত,ঐতিহাসিকগণভোট এবং ভাষা আন্দোলনে তারঅবদানছিলোঅপরিসীম। তার স্বামীএডভোকেটআবুআহমদআব্দুলহাফিজছিলেনএকজনবলিষ্ঠআইনজীবিএবংমুসলিম লীগের প্রথম সাড়ির রাজনীতিবিদ।
আরো যারা ছিলেন তারা হচ্ছেন, সিলেটজেলামহিলামুসলিমলীগেরসম্পাদিকা সৈয়দা লুৎফুন্নেছা খাতুন, সিলেট সরকারী অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মিসেস রাবেয়া খাতুন বিএবিটি, মিসেস জাহানারা মতিন, মিসেস রোকেয়া বেগম, মিসেস শাম্মী কাইসার রশীদ এমএ,বিটি, নূরজাহান বেগম, মিসেস সুফিয়া খাতুন, মিসেস মাহমুদা খাতুন, মিসেস শামসুন্নেছা খাতুন, সৈয়দা নজিবুন্নেছা খাতুন (শেখঘাটের এহিয়াভিলার গৃহবধূ)।
বাংলা ভাষার দাবিতে সিলেটে মহিলাদের অগ্রণী ভূমিকার প্রশংসা করে ভাষা আন্দোলনে স্থপতি সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনতমদ্দুন মজলিসের সম্পাদক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক আবুল কাশেম চিঠি লিখে ভাষা আন্দোলনে সাহসী ভূমিকার জন্যে জোবেদা রহিম চৌধুরীসহ সিলেটের নারী নেত্রীদেরকে অভিনন্দন জানান। তিনি লেখেন, “আজ সত্যিই আমরা অভূতপূর্ব আনন্দ এবং অশেষ গৌরব অনুভব করছি। সিলেটের পুরুষরা যা পারেনি তা আপনারা করেছেন। বাংলা ভাষার জন্য আপনারা যে সংগ্রাম করছেন তা দেখে মনে হচ্ছে আমাদের ভয়ের কোন কারণ নেই।…তমদ্দুন মজলিশ আজ আপনাদের অকৃত্রিম ধন্যবাদ জানাচ্ছে।“ উল্লেখ্য যে ভাষা আন্দোলনের সময় তমদ্দুন মজলিসের সভাপতি ছিলেন সিলেটের কৃতি সন্তান জাতীয় অধ্যাপক দেয়ান মোহাম্মদ আজরফ এবং সাহিত্য সম্পাদক ছিলেন সিলেটের আরেক কৃতি সন্তান অধ্যাপক শাহেদ আলী। ঢাকা থেকে প্রকাশিত ভাষা আন্দোলনের মুখপত্র সাপ্তাহিক সৈনিক প্রত্রিকার সম্পাদকও ছিলেন অধ্যাপক শাহেদ আলী।
১৯৪৭ সালের ৮ মার্চের গোবিন্দ চরণ পার্কে (বর্তমানে হাসান মার্কেট) ভাষা দাবির জনসভায় উর্দুর পক্ষের লোক ও সরকারী হামলার কারণে সভা করা যায়নি, এই হামলার প্রতিবাদে সিলেটের মহিলারা ১৯৪৭ সালের ১০ মার্চ গোবিন্দ পার্কে একটি সভা আহবান করেন। কিন্তু এই সভা আয়োজনের আগের রাতে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এম. ইসলাম চৌধুরী সমগ্র সিলেটে সভা সমাবেশ আয়োজনে ১৪৪ ধারা জারি করেন। এত সব বাধা বিপত্তি মোকাবেলা করে সিলেটর মহিলারা ভাষা আন্দোলন অব্যহত রেখেছিলেন।
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ১৯ মার্চ পূর্ব পাকিস্তান সফরে আসেন। তিনি ২১ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে তাকে দেয়া সংবর্ধনা সভায় ও ২৪ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানের বক্তৃতায় উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার ব্যাপারে তার অভিমতকে পুনর্ব্যক্ত করেন। তখন সিলেটের মহিলারা জিন্নাহকে তারবার্তা পাঠিয়ে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার জোরালো দাবী জানান।
১৯৫২ সালে ২১ ফেব্রুয়ারী ঢাকায় পুলিশের গুলিতে ছাত্র, জনতা হত্যার প্রতিবাদে সিলেটের নারী সমাজ আবারো প্রতিবাদে ফেটে পড়েন এবং ২২ ফেব্রুয়ারি প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে ঢাকায় পুলিসের গুলিতে নিহত ভাষা শহীদরের প্রতি শ্রদ্ধা জনান। পরের দিন ২৩ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত মিছিলে সিলেটের মহিলারা স্বতস্ফুর্তভাবে অংশ নিয়ে বেলা ১১টায় শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। মিছিলটি গোবিন্দ চরণ পার্কে এসে একটি জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তৃতা করেন সিলেচের মাহিলা ও ছাত্রী নেত্রীবৃন্দ। পর দিন’ই মুসলিম সাহিত্য সংসদ হলে (বর্তমানে শহীদ সুলেমান হল) এক মহিলা সমাবেশ করেন এবং বিকালে গোবিন্দচরণ পার্কে সিলেট মহিলা কলেজের ছাত্রী-শিক্ষকদের আয়োজনে কলেজের অধ্যাপক আবদুল মালেকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় বাংলা ভাষার দাবিতে বিরাট জনসভা।
ভাষা আন্দোলনে মহিলাদের মধ্যে সিলেটে আরো ভূমিকা রাখেন যারা তারা হচ্ছেন বেগম রাবেয়া আলী, ছালেহা বেগম, লুৎফুন্নেছা বেগম। নওবেলাল পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদ আলীর স্ত্রী হাজেরা মাহমুদ, সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলীর স্ত্রী মিসেস রাবেয়া আলী, অধ্যাপক শাহেদ আলীর স্ত্রী বেগম চমন আরা, সরকারি চাকুরে হয়েও স্বামীর মতো ভাষা আন্দোলনের পক্ষে ১৯৪৮ ও ১৯৫২ সালে তিনিও উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। মিসেস লুৎফুন্নেছা বেগমের স্বামী সেনা বিভাগের কর্মকর্তা হওয়া স্বত্ত্বেও তিনি ভাষা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।
সিলেটের কুলাউড়ার মেয়ে সালেহা বেগম ময়মনসিংহ মুসলিম গার্লস স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্রী থাকাকালীন ভাষা শহীদ দের স্মরণে১৯৫২ সালের ২২শে ফেব্রুয়ারী স্কুলের সামনেকালোপতাকাউত্তোলণকরেন। ছাত্রী সালেহা বেগমের এই সাহসী উদ্যোগকে রাষ্ট্রীয়অপরাধ আখ্যা দিয়েপাকিস্থান কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ময়মনসিংহের ডিসিডিকেপাওয়ারেরআদেশেস্কুলথেকেতাঁকেতিনবছরেরজন্যবহিষ্কারকরাহয়।সালেহাবেগমেরপক্ষেআরপড়ালেখাচালিয়ে যাওয়াসম্ভবহয়েওঠেনি। তিনি হচ্ছেন ভাষা আন্দোলনের ‘শিক্ষাজীবন’ শাহাদতকারী একমাত্র ছাত্রী।
সিলেটের আরেক ভাষা সৈনিক কন্যা রওশন আরা বাচ্চু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী থাকা কালে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ছাত্রী ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের সংগঠিত করা ছাড়াও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হলের ছাত্রীদের ভাষা আন্দোলনের পক্ষে সুসংগঠিত করেন। একুশে ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গকারী প্রথম ছাত্রীদলের অন্যতম অদমনীয়নেত্রী ছিলেন রওশন আরা বাচ্চু। তিনি ১৯৩২ সালের ১৭ ডিসেম্বর সিলেটের কুলাউড়ার উছলাপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবা এএম আরেফ আলী, মা মনিরুন্নেসা খাতুন। রওশন আরা বাচ্চু ‘গণতান্ত্রিক প্রোগ্রেসিভ ফ্রন্ট’ এ যোগ দিয়ে ছাত্র রাজনীতি শুরু করেন। তিনি সলিমুল্লাহ মুসলিম হল এবং উইম্যান স্টুডেন্টস্ রেসিডেন্স এর সদস্য নির্বাচিত হন।
সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বানে ২০ ফেব্রুয়ারি হরতাল আহ্বান করা হলে সরকার পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে। এ সময় যেসব ছাত্রছাত্রী ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করাই আন্দোলনের জন্য প্রয়োজন বলে মনে করেন রওশন আরা বাচ্চু তাদের অগ্রভাগে ছিলেন। ২১ফেব্রুয়ারি সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় আহূত ছাত্রজনতার সমাবেশে ইডেন কলেজ ও বাংলাবাজার বালিকা বিদ্যালয় সহ অন্যান্য স্থান থেকে ছাত্রীদের সংগঠিত করে সমাবেশস্থলে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে যারা কাজ করেছেন রওশন আরা বাচ্চু ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম। ।
রওশন আরা বাচ্চু সাহসী নেতৃত্বে এখান থেকেই ছাত্র নেতারা ১৪৪ ধারা ভঙ্গের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তনেন।তারা পুলিশের কাটাতারের ব্যারিকেডটপকিয়েমিছিলনিয়েএগুনোরচেষ্টাকরেন।কিন্তুপুলিশেরবাধারমুখেকাটাতারের ব্যরিকেডটপকানোঅসম্ভবহয়ে পড়ে। এই সংকটময় সময়ে বজ্রকণ্ঠে স্বপথ নিয়ে রওশনআরাবাচ্চুতারদলেরসবাইকেনিয়েপুলিশেরতৈরি এই অতিক্রম-অসাধ্যব্যারিকেডভেঙ্গেফেলে এগিয়ে যেতে থাকেন।।এরপরপুলিশ প্রথমে লাঠিচার্জ ও পরে গুলি বর্ষণ শুরুকরেদেয়।এতে আব্দুস সালাম, আবুল বরকত, রফিক উদ্দিন আহমদ, আব্দুল জব্বারওশফিউর রহমান শাহাদাত বরণ করেন এবং রওশনআরাবাচ্চু সহ অনেক ছাত্রী গুরুতর আহতহন।
সে দিনের ঘটনা সম্পর্কে একটি স্মৃতিচারণে সিলেটের এই ভাষাসৈনিক নারী নেত্রী রওশন আরা বাচ্চু বলেন, “সকাল দশটার দিকে দেখি একটি জিপ এবং ৩/৪টি ট্রাক এসে দাড়ালো এবং পুলিশ বাহিনী ইউনিভার্সিটির গেটটা ঘেরাও করলো। পুলিশ আমাদের মিছিলে লাঠিচার্জ করলো। অনেক মেয়ে আঘাত পেলো, আমিও আঘাত পেয়েছিলাম। আমরা দৌড়ে যাচ্ছিলাম, আমাদের উদ্দেশ্য ছিলো স্মারকলিপি পৌছে দেয়া। কিন্তু আমাদের পথে মেডিকেলের মোড়েই তখন শেল পড়ছে, চারদিক কাদুনে গ্যাসে অন্ধকার। তখন আবার গুলির শব্দ পেলাম। এরপর তার কাটার বেড়া পার হয়ে ওসমান গনি সাহেবের বাড়িতে গেলাম। গিয়ে দেখি সারা তৈফুর, সুফিয়া ইব্রাহিম, বোরখা শামসুন। তারা আমার এ রক্তাক্ত অবস্থা দেখে এগিয়ে এল। ”
সিলেটের সুনাম গঞ্জের অধ্যাপক শাহেদ আলীর সহধর্মীনি বেগম চেমন আরা প্রথম সারির একজনমহিলাভাষাসৈনিক।১৯৫২সালেরভাষাআন্দোলনেরসময়ইডেনকলেজেরদ্বিতীয়বর্ষেরছাত্রীথাকাবস্থায় স্বামী অধ্যাপক শাহেদ আলীর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভাষা আন্দোলনে যোগ দেন। ১৯৫২ এর ২১শে ফেব্রুয়ারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা শহীদ বরকতের রক্তাক্ত শার্ট নিয়ে যে মিছিল বের করে ছিলেন তাতে তিনিও সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।
এভাবে অন্যান্য জেলার তুলনায় সিলেট শহরে এবং ঢাকায় অবস্থানরত সিলেটের নারীরা ভাষা আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে ছিলেন, যা ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল মাইল
ফলক।
ভাষাআন্দোলনেসিলেট: একগৌরবোজ্জ্বলঅধ্যায়
(২)
১৯৪০ এবং ১৯৫০ দশকে বাংলা ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলের জাতীয় এবং আন্তর্জাতির ভাবে খ্যাতিমান সিলেটের অনেক বিশিষ্টজনেরা।
রাষ্ট্র চিন্তুক হিসাবে পরিচিত সিলেট সুনামগঞ্জের জনাব মাহমুদ আলী বাংলা ভাষা আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ছিলেন। তিনি সভা সমিতি করে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম জাতীয় ভাষা হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি করে আসছিলেন এবং বাংলা ভাষার দাবিকে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে এগিয়ে নিতে এবং কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণীর নানা দাবির প্রচারের জন্য ‘নাও বেলাল ‘ নামে একটি বহুল প্রচারিত সাপ্তাহিক পত্রিকা চালু করেছিলেন।
ভাষা সৈনিক কমরেড আসাদ্দর আলী (সিলেট) এবং ভাষা সৈনিক কমরেড বরুণরায় (সুনামগঞ্জ)ভাষা আন্দোলনের সময় দীর্ঘ দিন কারাভোগ করেছন।
জাতীয় ড. অধ্যাপক দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ,(সিলেট,সুনামগঞ্জ) ড.সৈয়দ মুজতবা আলী, (সিলেট, মৌলভীবাজার)অধ্যাপক শাহেদ আলী (সিলেট, সুনামগঞ্জ)ভাষা আন্দোলনে গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা রেখেছিলেন। ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য অধ্যাপক দেওয়ান আজরফ এবং সৈয়দ মুজতবা আলীকে সরকারী কলেজের অধ্যাপনার চাকরি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল।
অধ্যাপক শাহেদ আলী ভাষা আন্দোলনের স্থপতি সংগঠন তামাদ্দুন মজলিসের সাহিত্য সম্পাদক এবং ভাষা আন্দোলনের মুখপত্র সাপ্তাহিক সৈনিকের সম্পাদক ছিলেন। তিনিভাষা আন্দোলনের একজন ভাষাসৈনিক হিসেবে গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা রেখেছিলেন। তাঁর সম্পাদনায় সাপ্তাহিকসৈনিকভাষাআন্দোলন সহপূর্ববাংলারস্বায়ত্ত্বশাসনআন্দোলন, শ্রমিক-কর্মচারীদেরআন্দোলনএবংনির্যাতিতমানুষদেরদাবীদাওয়ারপ্রশ্নেআগাগোড়াই সুচ্চারছিল। সাপ্তাহিক সৈনিকতাদেরপাকিস্তানআন্দোলনেরভিত্তিরূপীলাহোরপ্রস্তাবেরমর্মবাণীরকথাস্মরণকরিয়েদিয়েবলতো, লাহোরপ্রস্তাবেইউপমহাদেশেরমুসলিমঅধ্যুষিতপূর্বওপশ্চিমাঞ্চলেএকাধিকস্বাধীনসার্বভৌমরাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠারকথাছিল।কারণদেড়মাইলেরব্যবধানেঅবস্থিতভৌগোলিকভাবেবিচ্ছিন্নএকাধিকভূখন্ডনিয়েএকটিরাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠারদৃষ্টান্তইতিহাসেপ্রায়নেইবললেইচলে।
১৯৪৭ সালের ৯ই সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রভাষা নিয়ে আলোচনার জন্য প্রথম বৈঠকের ব্যবস্থা করা হয়েছিল সিলেট আলীয়া মাদ্রাসা ময়দানে। বিশিষ্ট সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলী, এবং স্থানীয় আইনজীবী, আমলা এবং প্রখ্যাত লেখক মতিন উদ্দিন আহমেদ এই আলোচনা সভায় রাষ্ট্রভাষা বাংলার পক্ষে জোড়ালো দাবি রেখেছিলেন।
এইকই বছরের ৩০ আগষ্ট আলীয়া মাদ্রাসা ময়দানে আবার রাষ্ট্র ভাষা বাংলার দাবিতে একটি বিরাট জনসভা হয়ে ছিল এই সভায় সভাপতিত্ব করে ছিলেন মতিন উদ্দিন আহমদ। এই দুটি সভা পূর্ব পাকিস্তানের যে কোনও জায়গায় রাষ্ট্রভাষার দাবিতেসভা-সমিতির তোলনায় বিরাট ওবং প্রথম জন সভা ছিল।
ড. অধ্যাপকদেওয়ানআজরফ, ড.সৈয়দমুজতবাআলী, অধ্যাপকশাহেদআলী এই তিন জনের সবাই ভাষা আন্দোলনে তাদের অবদানের জন্য একুশের পদক সহ জাতীয় পর্যায়ে উচ্চ সম্মানে ভুষীত হয়েছিলেন।
শিক্ষাবিদ সাহিত্যিক বিশ্বের বিশিষ্ট ১৪টি ভাষায় পাদর্শী খ্যাত ড. সৈয়দ মুজতবা আলী এবং জাতীয় অধ্যাপক ড. দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ ১৯৪৭ সালের ৩০ নভেম্বর সিলেট কেন্দ্রিয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ হলে বাংলা ভাষার দাবিতে আয়োজিত সভায় বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা দাবি করে জোরালো বক্তত্য রেছেছিলেন।তখন সৈয়দ মুজতবা আলী পূর্ব পাকিস্তানের জাতীয় ভাষা দাবির সংগ্রামে একজন বিশিষ্ট নেতা ও সমর্থক ছিলেন। ১৯৪৮ সালে, বগুড়ার আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষ পদে আসীন অস্থায় ‘পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ভাষা’ শিরোনামে একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন যা কলকাতারত্রৈমাসিকপত্রিকাচতুরঙ্গএবংসিলেটেরমাসিকআল-ইসলাহপত্রিকায়প্রকাশিতহয়, পরেপ্রবন্ধটি পূর্বপাকিস্তানেররাষ্ট্রভাষাশিরোনামেপুস্তিকাআকারেবেরহয়েছিল।রাষ্ট্রভাষাবাংলারপক্ষেঅবস্থাননেওয়ারকারণেপাকসরকারেররোষানলেপড়ে বগুরার আজিজুল হক্ব কলেজের অধ্যক্ষের পদে ইস্তিফা দিয়ে তিনি দেশছাড়তেবাধ্যহয়েছিলেন। বাংলা ভাষার দাবিতে আন্দোলনে সৈয়দ মুজতবা আলীর সক্রিয় ভুমিকার জন্য তার কাছে পাকিস্তান সরকার ব্যাখ্যা চেয়েছিল। কিন্তু তিনি এর কোন ব্যাখ্যা না দিয়ে পদত্যাগ করে কলকাতায় চলে যান। ভাষা আন্দোলনে তাঁর অবদানের জন্য ২০০৫ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে একুশে পদক প্রদান করেন। এ ছাড়াও তাঁকে ১৯৪৯ সালে নরসিংহ সাহিত্য পুরষ্কার, ১৯৬১ সালে আনন্দ সাহত্য পুরষ্কার প্রদান করা হয়।সৈয়দ মুজতবা আলীর গবেষণা মূলক ‘পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’ নামের গ্রন্থটির জন্য তিনি বাংলা ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবেন।
দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ ভাষা আন্দোলনের এক মহান অগ্রদূত। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের জাতীয় অধ্যাপক, একজন প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ, দার্শনিক., সাহিত্যিক ও সমালোচক। ভাষা আন্দোলনের পক্ষে তার ভূমিকার জন্য পাকিস্থান সরকার তাঁকে সুনামগঞ্জ কলেজের অধ্যক্ষের পদ থেকে অপমানজনকভাবে বরখাস্ত করে ছিল।
পরবর্তীতে ভাষা আন্দোলনে তার অবদানের জন্য ২১শে পদক, জাতীয় অধ্যাপককের মর্যাদা সহ অনেক সম্মাননা ও পুরষ্কারে ভুষিত হয়ে ছিলেন- সম্মামনার মধ্যে ছিল- স্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৮১), ড. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ স্বর্ণপদক (১৯৮৯), আন্তর্জাতিক মুসলিম সংহতি পুরস্কার (১৯৮৫), ইসলামিক ফাউন্ডেশন পুরস্কার (১৯৯১),কবি মোজাম্মেল হক পুরস্কার (১৯৯১), জাতীয় অধ্যাপকরূপে নিযুক্তি (১৯৯৩), মাওলানা আকরাম খাঁ স্বর্ণপদক (১৯৯৩),জালালাবাদ স্বর্ণপদক (১৯৯৪), নাসির উদ্দীন স্বর্ণপদক (১৯৮৪),ভাসানী পুরস্কার (১৯৯৫), শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপংকর পুরস্কার এবং স্বপ্লাবেশ পুরস্কার প্রভৃতি।
অধ্যাপক শাহেদ আলী।(সুনামগঞ্জ সিলেট) তিনি ছিলেন সক্রিয় প্রথম কাতারের একজন ভাষাসৈনিক, তিনি সার্বক্ষণিক ভাষা আন্দোলনের কার্যক্রমে জড়িত ছিলেন। তিনি ছিলেন সাহিত্যিক, সাংবাদিক, সংগঠক, সংস্কৃতিসেবী, রাজনীতিক। তিনি ভাষা বান্দলেনের অগ্রদূত সংঘঠন তমদ্দুন মজলিসের সাধারণ সম্পাদক ও পরে সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। ১৯৪০-১৯৫০ দশকে চলমান ভাষা আন্দোলনের সময় অধ্যাপক শাহেদ আলী বিভিন্ন বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে ভাষাআন্দোলনকে বেগবান করেছেন্। ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা না উর্দু’ নামে বাংলা ভাষার দাবিতে প্রথম পুস্তক তিনি সম্পাদনা করে ছিলেন। বাংলা ভাষা উন্নয়নের লক্ষ্যে বাংলা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে ঢাকার মিরপুর বাঙলা কলেজ প্রতিষ্ঠায় তাঁর যথেষ্ট অবদান রয়েছে। মিরপুর কলেজ প্রতিষ্ঠার পর তিনি মীরপুর বাংলা কলেজে দীর্ঘ দিন অধ্যাপনা করেছেন।
তিনি বেশ ক’টি পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন। ১৯৪৪-৪৬ সালে মাসিক প্রভাতী এবং ১৯৪৮-৫০ সালে সাপ্তাহিক সৈনিক, ১৯৫৫ সালে দৈনিক বুনিয়াদ, ১৯৫৬ সালে দৈনিক মিল্লাতের সহকারী সম্পাদক ছিলেন। ১৯৬৩-৬৪ সালে বাংলা একাডেমি পত্রিকার সম্পাদনা বোর্ডের সদস্য ছিলেন।
অধ্যাপক শাহেদ আলী ১৯৬৪ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ১৯৮১ সালে ভাষা আন্দোলন পদক, ১৯৮৯ সালে একুশে পদক, ১৯৮৬ সালে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ পুরস্কার, কিশোরকণ্ঠ সাহিত্য পুরস্কার (মরণোত্তর ২০০৩), ফররুখ স্মৃতি পুরস্কার, জাসাস স্বর্ণপদক, তমদ্দুন মজলিস, মাতৃভাষা পদক (২০০০) এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি১৯৫৪সালের সাধারণ নির্বচনেসুনামগঞ্জথেকেআইনসভারসদস্যনির্বাচিতহন।
ভাষাসৈনিকশিক্ষাবিদ মুসলিমচৌধুরীর মহানভাষাআন্দোলনেরয়েছেঅসামান্যঅবদান।তিনি রাষ্ট্রভাষাবাংলারপক্ষেসর্বপ্রথমপ্রবন্ধরচনাকরেন।১৯৪৭সালেরনভেম্বরেকেন্দ্রীয়মুসলিমসাহিত্যসংসদেরসাধারণসভায় ‘পাকিস্তানেররাষ্ট্রভাষা’শিরোনামেরএপ্রবন্ধটিতিনিউপস্থাপনকরেন।সফলসংগঠকমুসলিমচৌধুরী১৯৭০সালথেকে ১৯৯৪পর্যন্তসিলেটেরঐতিহ্যবাহীকেন্দ্রীয়মুসলিমসাহিত্যসংসদেরসভাপতিরদায়িত্বপালনকরেন।তারকর্মেরস্বীকৃতিস্বরূপঢাকাস্থজালালাবাদএসোসিয়েশনতাকেমরণোত্তরসম্মাননাওপ্রদানকরে।
ড. আখলাকুর রহমান (সুনামগঞ্জ)ভাষাআন্দোলনেগুরুত্বপূর্ণভূমিকারাখার জন্য স্মরণীয় হয়ে আছেন। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের সময়তিনিছিলেনঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়েরঅর্থনীতিবিভাগেরপ্রভাষক।একটিদেশেরসাহিত্য-সংস্কৃতিগঠনেমাতৃভাষারগুরুত্বতুলেধরেযেসবঅভিমততিনিরেখেছেনতাআজোপ্রণিধানযোগ্য।
১৯৪৭ সালে জানুয়ারী মাসে সিলেটে সফররত পাকিস্থানি প্রতিনিধি দলের সাথে একটি যুব-প্রতিনিধি দল সাক্ষাত করে বাংলা ভাষার দাবিতে একটি স্মারকলিপি দিয়েছিলেন, তাদেরকে সিলেটবাসী এখনও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে। গত বছর ২০২০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারী সিলেট সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে ভাষা আন্দোলনে অবদানের জন্য সিলেটের ভাষাসংগ্রামীদের সম্মাননা দেয়া হয়েছে । সিলেটার হোটেল স্টার প্যাসিফিকের গ্র্যান্ড সেলিব্রেটি হলে এ সম্মাননা প্রদান সভায় যাদেরকে সম্মামনা দেয়া হয় তাঁরা হচ্ছেন সর্বজনাব সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান (মরণোত্তর), সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুস সামাদ আজাদ (মরণোত্তর), শিক্ষাবিদ ড. ছদরুদ্দিন আহমদ চৌধুরী (মরণোত্তর), এডভোকেট মনির উদ্দিন আহমদ (মরণোত্তর), কমরেড আসদ্দর আলী (মরণোত্তর) ও ডা. মো. হারিছ উদ্দিন (মরণোত্তর)।
সিলেটের যে সব কৃতি সন্তান সিলেটের বাহিরে বিশেষ করে ঢাকায় ভাষা আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হ’জন হচ্ছেন, সৈয়দ শাহাদত হোসেন, তাসুদ্দুক আহমদ, ড. আখলাক হোসেন প্রমুখ।
ভাষা আন্দোলনে অবদানের জন্য সিলেটের তিন বারি নামে খ্যাত সিলেট শহরের নয়া সড়কের কালাবারী, চারাদিঘিপারের ধলাবারী, রায় নগরের লালবারী এই তিনজনের নাম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হয়।
সিলেটে ভাষা আন্দোলনে বিশিষ্টজন আরো যারা স্বক্রীয় ছিলেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হচ্ছেন আবদুল আজিজ, , আবু জাফর আবদুল্লাহ, আবদুর রহিম, আবুল বশর, আবদুল মজিদ, আবু নছর মনির বখত মজুমদার, আবদুল হক, আবদুল হাই, আবদুল হামিদ, আবদুল মালিক, আবুল হাসনাত সাদত খান, উবেদ জায়গীরদার, এনামুল হক, ওয়ারিছ আলী, খন্দকার রুহুল
কুদ্দুস, জালাল উদ্দিন আহমেদ খান, তারা মিয়া, তসদ্দুক আহমদ, দেওয়ান আহমদ কবির চৌধুরী, দেওয়ান ফরিদ গাজী, কবি দিলওয়ার, দবির উদ্দিন আহমদ চৌধুরী, নাইয়ার উদ্দিন আহমদ, নূরুল ইসলাম, নূরুল হক, নূরুর রহমান, নির্মল চৌধুরী, পীর হাবিবুর রহমান, প্রসূনকান্তি রায়, ফখরুদ দওলা, ফারুক আহমদ চৌধুরী, বাহাউদ্দিন আহমদ, মকসুদ আহমদ, মতছির আলী, মতিনউদ্দিন আহমদ, মনিরউদ্দিন আহমদ, মনির উদ্দিন, মহিবুর রহমান, মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, রিয়াছদ আলী, রাবেয়া খাতুন, লিয়াকত আলী, শরফ উদ্দীন আহমদ চৌধুরী, শাহেদ আলী, সখাওতুল আম্বিয়া, সাফাত আহমদ চৌধুরী, সৈয়দা নজিবুন্নেছা খাতুন, সৈয়দ মোতাহির আলী, সোনাওর আলী, সিরাজউদ্দিন আহমদ, শামসুদ্দিন আহমদ।
সমাপ্ত