মতপার্থক্য যেন উগ্রতা উসকে না দেয়
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১১:৫৫ পূর্বাহ্ণ
মুফতি তাজুল ইসলাম: ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমার প্রতিপালক ইচ্ছা করলে সব মানুষকে এক জাতি করতে পারতেন। কিন্তু তারা মতভেদ করতেই থাকবে।’ (সুরা : হুদ, আয়াত : ১১৮)
বিশেষ হিকমতের কারণে নানা রং, শ্রেণি, পেশা, বিশ্বাস ও আদর্শের মানুষ সৃষ্টি করা হয়েছে। যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন, তাহলে সব মানুষকে এক জাতি বা মুসলমান হতে বাধ্য করতে পারতেন। আল্লাহ সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান। তিনি ইচ্ছা করলে সবাই এক জাতিতে পরিণত হতো। তখন কোনো মতভেদও থাকত না। কিন্তু আল্লাহ নানা পথ ও মতের মানুষ সৃষ্টি করেছেন। তিনি মানুষকে বিবেক-বুদ্ধি ও জ্ঞান দিয়েছেন। চিন্তার স্বাধীনতা দিয়েছেন। যুগে যুগে সত্য ও সরল পথ প্রদর্শনের জন্য নবী-রাসুলদের পাঠিয়েছেন। তাই মানুষ স্বাধীনভাবে তাঁর পথ নির্বাচন করবে—এটাই আল্লাহর ইচ্ছা। তিনি মানুষের কৃতকর্মের জন্য শাস্তি ও পুরস্কারের বিধান রেখেছেন। যারা নিজেদের জ্ঞান ও প্রজ্ঞা কাজে লাগিয়ে সৎ পথ অবলম্বন করবে, তারা পুরস্কৃত হবে, আর যারা তা করবে না, তারা শাস্তি পাবে। কাজেই সৃষ্টিগত নিয়মেই মানুষের মধ্যে মত-দ্বিমত বিদ্যমান। কোনো কিছুর বিনিময়ে এ বিরোধ রোধ করা যাবে না। এ বিরোধের চূড়ান্ত মীমাংসা হবে পরকালে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমার প্রতিপালক ইচ্ছা করলে সব মানুষকে এক জাতি করতে পারতেন। কিন্তু তারা মতভেদ করতেই থাকবে।’ (সুরা : হুদ, আয়াত : ১১৮)
ইসলাম উদারতা, কোমল মানসিকতা ও প্রসন্নচিত্ততার নির্দেশ দেয়। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোনো দায়িত্ব চাপিয়ে দেন না।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৬৮)
ইসলাম পরমতসহিষ্ণুতার শিক্ষা দেয়, পরধর্মের বা মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে নির্দেশ দেয় এবং পারস্পরিক সম্প্রীতির সঙ্গে সবার সহাবস্থান সুনিশ্চিত করে।
অন্যের ধর্ম-মতাদর্শকে অবজ্ঞা ও অশ্রদ্ধা করতে ইসলামে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘তারা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ডাকে, তাদের তোমরা গালি দিয়ো না, নইলে তারাও শত্রুতার কারণে না জেনে আল্লাহকেও গালি দেবে।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ১০৮)
মানবসমাজে কোনো রকম অশান্তি সৃষ্টি, নাশকতা, নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলা, সংঘাত, হানাহানি, উগ্রতা, বর্বরতা, প্রতিহিংসাপরায়ণতা ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ইসলামে নিষিদ্ধ। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘দুনিয়ায় শান্তি স্থাপনের পর এর মধ্যে বিপর্যয় ঘটাবে না।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৫৬)
ইসলামে মুক্তচিন্তার অবারিত সুযোগ থাকার কারণেই এ ধর্মে বহু দল-উপদলের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘বনি ইসরাইল ৭২ দলে বিভক্ত হয়েছিল, আর আমার উম্মত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে।’ তাই আদর্শিক বিরোধের ক্ষেত্রে সহনশীলতা ও সহিষ্ণুতার বিকল্প নেই। ইসলামের মূলনীতি চারটি—কোরআন, হাদিস, ইজমা ও কিয়াস। এর মধ্যে ইজমা ও কিয়াস হলো যুক্তি ও গবেষণানির্ভর। মহানবী (সা.)-এর ইন্তেকালের মধ্য দিয়ে কোরআন ও হাদিস অবতীর্ণ হওয়ার পথ রুদ্ধ হয়ে যায়; কিন্তু নিত্যনতুন যুগজিজ্ঞাসার জবাবে ইজমা ও কিয়াস তথা চিন্তা ও গবেষণার দরজা কিয়ামত পর্যন্ত খোলা। তাই মতপার্থক্য যেন উগ্রতা ও হিস্রতার দিকে নিয়ে না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।