কেমন হবে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ

দৈনিক সিলেট ডট কম
মারজিয়া আক্তার : কিয়ামতের দিন সুনির্দিষ্ট সময়ে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। প্রকৃত ঈমানদার বান্দা অতীব ভীত ও বিনীত স্বরে আল্লাহর সম্মুখে সত্য কথা বলবে। এমনকি অনেক দোষ ও পাপের কথাও স্বীকার করবে এবং অনেক অপরাধের পরও জান্নাতে স্থান পাবে। কিন্তু যারা মিথ্যাবাদী, তারা মিথ্যা কথা দ্বারা নিজেদের অপরাধ ঢাকতে চাইবে, এতে অসন্তুষ্ট হয়ে আল্লাহ তাআলা তাদের চরম শাস্তি দেবেন।
পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আল্লাহকে ভয় করো। জেনে রেখো, তোমাদের সবাইকে তাঁর সম্মুখে হাজির হতে হবে। আর তুমি বিশ্বাসীদের সুসংবাদ দাও। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২২৩)
অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন, ‘নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলে এমন কেউ নেই, যে দয়াময়ের কাছে উপস্থিত হবে না দাসরূপে। তিনি তাদের গণনা করেছেন এবং তাদের ভালোভাবে গুনে রেখেছেন। আর কিয়ামত দিবসে তাদের সবাই তাঁর কাছে আসবে একাকী অবস্থায়। ’ (সুরা মারিয়াম, আয়াত : ৯৩-৯৫)
এ বিষয়ের প্রতি আরো বেশি দৃষ্টি আকর্ষণের লক্ষ্যে আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ তিনি, যিনি ঊর্ধ্বদেশে স্তম্ভ ছাড়াই আকাশমণ্ডলী স্থাপন করেছেন, যা তোমরা দেখছ। অতঃপর তিনি আরশে সমুন্নীত হন এবং সূর্য ও চন্দ্রকে অনুগামী করেন। প্রতিটি নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত সন্তরণ করবে। তিনি সব বিষয় নিয়ন্ত্রণ করেন। তিনি নিদর্শন ব্যাখ্যা করেন, যাতে তোমরা তোমাদের রবের সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাসী হতে পারো। ’ (সুরা রাদ, আয়াত : ২)
তিনি আরো বলেন, ‘মানুষ কি মনে করে যে তারা এ কথা বলেই অব্যাহতি পেয়ে যাবে যে আমরা বিশ্বাস করি এবং তাদের পরীক্ষা করা হবে না? আমি তাদেরও পরীক্ষা করেছি, যারা তাদের আগে ছিল। আল্লাহ অবশ্যই জেনে নেবেন যারা সত্যবাদী এবং নিশ্চয়ই জেনে নেবেন মিথ্যুকদের। যারা মন্দ কাজ করে, তারা কি মনে করে যে তারা আমার হাত থেকে বেঁচে যাবে? তাদের ফয়সালা খুবই মন্দ। যে আল্লাহর সাক্ষাৎ কামনা করে, আল্লাহর সেই নির্ধারিতকাল অবশ্যই আসবে। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী। ’ (সুরা আনকাবুত, আয়াত : ১-৫)
শয়তান বান্দার সঙ্গে আল্লাহর সাক্ষােক মিথ্যা বলে তার অনুগত লোকদের নিয়ন্ত্রণ করছে। এ অবস্থায় আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় নবীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘তুমি বলো, আমি তোমাদের মতো একজন মানুষ। আমার কাছে অহি পাঠানো হয় যে তোমাদের ইলাহ মাত্র একজন। অতএব যে ব্যক্তি তার রবের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তার পালনকর্তার ইবাদতে কাউকে শরিক না করে। ’ (সুরা কাহফ, আয়াত : ১১০)
পার্থিব জীবনে বিভিন্ন প্রতিকূলতা, প্রতিবন্ধকতা প্রতিটি মানুষের সঙ্গে নিবিড়ভাবে মিশে আছে। এরই মধ্য দিয়ে আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় বান্দাদের প্রতিযোগিতায় জয়যুক্ত করে তাঁর সান্নিধ্যে তুলে নেবেন। আল্লাহ বলেন, ‘হে মানুষ, তোমাকে তোমার রব পর্যন্ত পৌঁছতে কষ্ট স্বীকার করতে হবে, অতঃপর তাঁর সাক্ষাৎ ঘটবে। ’ (সুরা ইনশিকাক, আয়াত : ৬)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মনে রেখো, নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর। মনে রেখো, আল্লাহর ওয়াদা সত্য। কিন্তু তাদের বেশির ভাগ তা জানে না। তিনিই জীবন ও মৃত্যু দান করেন এবং তাঁর কাছেই তোমরা ফিরে যাবে। হে মানবজাতি, তোমাদের কাছে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে এসে গেছে উপদেশবাণী (কোরআন) এবং অন্তরের রোগসমূহের নিরাময়কারী এবং বিশ্বাসীদের জন্য পথ প্রদর্শক ও রহমত। ’ (সুরা ইউনুস, আয়াত : ৫৫-৫৭)
যারা আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাসী, তারা আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতেও দৃঢ় বিশ্বাসী। এই কারণে ঈমানদার বান্দারা ইহজগতে যথাসাধ্য সৎকাজ করে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর সাহায্য কামনা করো ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে। আর তা অবশ্যই কঠিন কাজ, তবে বিনীত বান্দারা ছাড়া। যারা দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করে যে তারা তাদের রবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে এবং তারা তাঁর কাছেই ফিরে যাবে। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ৪৫-৪৬)
মুমিন বান্দারা অকৃত্রিম বিশ্বাস ও শিরকমুক্তভাবে বিশুদ্ধ অন্তরে সৎ আমল সম্পাদন করে এবং সর্বোপরি আল্লাহভীতির মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে সদা সচেষ্ট থাকে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা তাদের রবের ভয়ে সন্ত্রস্ত, যারা তাদের পালনকর্তার আয়াতসমূহে বিশ্বাস স্থাপন করে, যারা তাদের রবের সঙ্গে কাউকে শরিক করে না, আর যারা তাদের যা দেওয়া হয়েছে সেখান থেকে ভীত-কম্পিত হৃদয়ে (আল্লাহর পথে) দান করে এ জন্য যে তারা তাদের রবের কাছে ফিরে যাবে। এরাই দ্রুত কল্যাণ কাজে ধাবিত হয় এবং তারা তার প্রতি অগ্রগামী হয়। ’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত : ৫৭-৬১)
অন্য আয়াতে তিনি বলেন, ‘তিনিই সুউচ্চ মর্যাদার অধিকারী, আরশের মালিক, তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার প্রতি ইচ্ছা তত্ত্বপূর্ণ বিষয়াদি নাজিল করেন, যাতে সে সাক্ষাতের দিন সম্পর্কে সবাইকে সতর্ক করে। ’ (সুরা মুমিন, আয়াত : ১৫)
আল্লাহ তাঁর সাক্ষাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের জন্য আগের নবী-রাসুলদের কাছে অহি প্রেরণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘অতঃপর (ইতিপূর্বে) আমরা মুসাকে দিয়েছিলাম কিতাব (তাওরাত), যা ছিল সৎকর্মশীলদের জন্য পূর্ণাঙ্গ এবং সব বস্তুর বিশদ ব্যাখ্যা, পথনির্দেশ ও অনুগ্রহস্বরূপ। যাতে তারা তাদের রবের সঙ্গে সাক্ষাতে বিশ্বাসী হয়। ’ (সুরা আনআম, আয়াত : ১৫৪)