পীর হাবিবুর রহমান: সিলেটপ্রেমিক এক সাংবাদিকের চিরবিদায়

দৈনিক সিলেট ডট কম
আবদুল কাদের তাপাদার : সকালেই ফেইসবুকে তাঁর ভাই এমপি ফজলুর রহমান মিসবাহর পোস্ট পড়ে আমার মাঝে এক অজানা উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল। আরো অনেকেই তাঁর আইসিইউ তে চিকিৎসার কথা লিখেছেন।
এর আগে করোনার দকল সামলিয়ে তিনি সুস্থ স্বাভাবিক হয়ে উঠেছিলেন। সাংবাদিক একটু আগেই জানলাম সুনামগঞ্জের কৃতি সন্তান দেশের আলোচিত সাংবাদিক পীর হাবিবুর রহমান চিরবিদায় হয়ে গেছেন।
ইন্নালিল্লাহী ওয়া ইন্না ইলাইহী রাজিউন। ছাত্র লীগের একসময়ের তুখোড় নেতা পরবর্তীতে একজন পেশাদার ও জাঁদরেল সাংবাদিক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।
আমার সাথে পীর হাবিবুর রহমান ভাইয়ের তেমন ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠেনি কখনো। তবে তাঁর লেখার সাথে আমার একটা ঘনিষ্ঠতা ছিলো তা বলতেই হবে। দূর থেকে আমার লেখারও মনোযোগি একজন পাঠক ছিলেন হাবিব ভাই।
২০০৪ সালে জাতীয় প্রেসক্লাবে আমার সাথে তাঁর দেখা। আমি জাতীয় প্রেসক্লাবের তৎকালিন সাধারণ সম্পাদক শওকত মাহমুদ ভাইয়ের সাথে চা খাচ্ছিলাম।
পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন হাবিব ভাই। সালাম দিতেই শক্ত হাতে হাত মিলিয়ে বললেন, আপনাকে চিনি।
দৈনিক জালালাবাদের বার্তা সম্পাদক, তাপাদার সাব।
আমি বললাম, আপনার ছোট ভাই। বললেন, বার্তা সম্পাদক অনেক বড় পদবি রে ভাই!
মুহাম্মদ জুবায়ের(বর্তমানে লন্ডন প্রবাসী সুপরিচিত সাংবাদিক আমার প্রিয়ভাজন) আপনার অনেক প্রশংসা করেছে। আমি বললাম, জুবায়েরও সেদিন আপনার অনেক প্রশংসা করেছে। ঢাকায় আপনার আথিয়েতায় সে মুগ্ধ।
হাবিব ভাই আমাকে নিয়ে গেলেন আরেক টেবিলে। বললেন, আপনাকে নিয়ে চারটা ডালভাত খাবো।
খেতে খেতে দৈনিক জালালাবাদে আমার সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চল নিয়ে প্রতিবেদনের কথা বললেন। তার খুব ভালো লেগেছে বলে জানালেন।
এর আগে ১৯৯৭ সালে সুনামগঞ্জের বিডি হলে পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবদুস সামাদ আজাদের আয়োজনে ৫/৭ জন মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী ও ভিভিআইপিদের নিয়ে এ যাবতকালের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক এক অনুষ্ঠানে আমিও সিলেট থেকে শরীক হয়েছিলাম একজন রিপোর্টার হিসেবে। সেদিনও পীর হাবিবুর রহমান ভাইকে দেখেছি।
সেদিনের খাবার দাবারের আয়োজনে ছিলেন
সুনামগঞ্জের সুপরিচিত সাংবাদিক, বর্তমানে দৈনিক ইত্তেফাকের সিলেট ব্যুরোচীফ হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীসহ
কয়েকজন। সেই ঐতিহাসিক খাবারের কথা আমি প্রায়ই হুমায়ুন ভাইকে বলি। সে কী খানাপিনার ঐতিহাসিক আয়োজন। আজো যেনো মুখে লেগে আছে।
পীর হাবিবুর রহমান ঢাকার একজন প্রভাবশালী সাংবাদিক হিসেবে নিজেকে গৌরবান্বিত করতে পেরেছেন। বিএনপির সময়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া কিংবা সিলেটী অর্থমন্ত্রী,পরবর্তীতে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এম,সাইফুর রহমানের ঘনিষ্ঠ হতে পেরেছেন। এর আগে এরশাদ আমলে তাঁর কৃতিত্বপূূণ
সাংবাদিকতার নামডাক ছড়িয়ে পড়ে নানা ভাবে, নানা পরিমন্ডলে। স্বৈরশাসক বলে অনেকের কাছে নিন্দিত হলেও জাঁদরেল সাংবাদিক পীর হাবিবুর রহমান তাঁর পক্ষেই লিখেছেন অনেক। বিরুদ্ধেও লিখেছেন মাঝে মধ্যেই। তবে নিন্দুকেরা তাঁকে জেনারেল এরশাদের খুব কাছের সাংবাদিক হিসেবেই বলেই প্রচার করতেন।
আওয়ামী লীগের আদর্শে মনেপ্রাণে বিশ্বাসী পীর হাবিবুর রহমান আওয়ামী লীগের আমলে
সাংবাদিকতায় দু’হাতে লিখেছেন। তিনি বঙ্গুবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনেক কাছাকাছি ছিলেন বলে শোনা যায়। সরকারের পক্ষে লিখেছেন বেশিরভাগ সময়ই। গুনগান গেয়েছেন। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তিনি সমালোচনামুখরও হয়েছেন।
সমালোচনার কারণে কখনো কখনো তিনি সরকারের প্রভাবশালী মহলের বিরাগভাজনও হয়েছেন ।
তবুও তাঁর লিখনি থেমে থাকেনি। এটাই তাঁর স্বার্থকতা।
যাই হোক,আমি হাবিব ভাইকে একজন প্রতিবাদী ও জাঁদরেল সাংবাদিক হিসেবেই গণ্য করি। তাঁর নিজের রাজনৈতিক আদর্শ ছাপিয়ে একজন পেশাদার সাংবাদিক হিসেবেই আমি তাঁকে মূল্যায়ন করি।
কেননা আমিও একজন পেশাদার সাংবাদিক হিসেবেই নিজেকে গৌরবান্বিত মনে করি।
আমি হাবিব ভাইকে ভালোবাসতাম একজন সিলেট প্রেমিক ঢাকার প্রভাবশালী সাংবাদিক হিসেবে।
যখনই সরকারে ঢাকার প্রভাবশালীরা সিলেটের বিরুদ্ধে লেগেছে তিনি বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন।
যখনই আবদুস সামাদ আজাদের বিরুদ্ধে , যখনই এম সাইফুর রহমানের বিরুদ্ধে, যখনই স্পীকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করা হয়েছে তখনই সাংবাদিক পীর হাবিবুর রহমানের কলম
গর্জে উঠেছে। ঢাকার সিনিয়র সাংবাদিক মানবজমিন সম্পাদক ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মতিউর রহমান চৌধুরীও সিলেটের পক্ষে এভাবেই
কলম ধরেছেন। বৃহত্তর সিলেটের এই দুই সিনিয়র সাংবাদিককে তাই আমি মন থেকে ঠিক একারণেই ভালোবাসি।
পীর হাবিবুর রহমানের সাংবাদিকতা জীবন অনেক বর্ণাঢ্য। নানাভাবে তিনি আমাদের সাংবাদিকতাকে
সমৃদ্ধ করেছেন।
দোষে গুনে মানুষ। আমরা কেউই ভুলের উর্দ্ধে নয়।
আল্লাহ তায়ালা পীর হাবিবুর রহমানের দোষ ত্রুটি
ক্ষমা করে দিয়ে তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌসের বাসিন্দা বানিয়ে নিন আমি এই দোয়া করি।