বাংলাদেশের নৃগোষ্ঠী ভাষার ডিজিটাইজেশন নিয়ে সিলেটে আলোচনা সভা
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ এপ্রিল ২০২২, ৭:৩০ অপরাহ্ণ
দৈনিকসিলেটডটকম: বাংলাদেশের ৪০টি নৃগোষ্ঠী ভাষার ডিজিটাইজেশন প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ১১ এপ্রিল, ২০২২, সোমবার সিলেটে একটি কমিউনিটি এওয়ারনেস সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল ও ইবিএল-আইসিটির সহযোগিতা এবং ড্রিম-৭১ এর আয়োজনে হোটেল মিরা গার্ডেনের সেমিনার কক্ষে আয়োজিত এই সভায় বিষ্ণুপ্রিয়া মনিপুরী, মৈতৈ মণিপুরি, খাসিয়া, সাদরি, দেশওয়ালী, ওড়িয়া, কুর্মালী/ কুর্মী, তেলেগু, কন্দ, মুন্ডা, মৈতৈ পাঙ্গান ও পাত্রদের নিজ নিজ ভাষার প্রতিনিধিবৃন্দ, ভাষা-সম্প্রদায়ের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ, ভাষা বিশেষজ্ঞ, কথাসাহিত্যিক ও গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। ইবিএল-আইসিটি’র টেকনোলজি ম্যানেজমেন্ট স্পেশালিষ্ট ও বাংলাদেশের নৃগোষ্ঠী ভাষার ডিজিটাইজেশন প্রকল্পের সমন্বয়ক হেলাল হেযাজীর সঞ্চালনায় এই সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিসিসি’র সিলেট আঞ্চলের পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান।
প্রকল্পের কারিগরি বিষয়বস্তু উপস্থাপন করেন ভাষাপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক মামুন অর রশীদ। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত আয়োজিত এই সভায় অংশ নিয়ে আলোচনা করেছেন তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষা সমৃদ্ধকরণ প্রকল্প (ইবিএলআইসিটি)’র প্রকল্প পরিচালক মাহবুব করিম, আদিবাসী ভাষা দশক উদযাপন কমিটির আহবায়ক, মণিপুরি সাহিত্য সংসদের সভাপতি, মণিপুরি ভাষা গবেষক, কবি ও সংস্কৃতি কর্মী এ কে শেরাম, ভাষাপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, সিলেটি ভাষা গবেষক ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক জফির সেতু, প্রকল্পের ব্যবস্থাপক নাজমুল গণি, কবি ও সাংবাদিক মুহিত চৌধুরী প্রমুখ।
সভায় আমন্ত্রিত ১১টি নৃগোষ্ঠী ভাষার প্রতিনিধিবৃন্দ তাদের নিজ নিজ ভাষার গুরুত্ব, ভাষাগুলোর বর্তমান পরিস্থিতি এবং কী কারণে ভাষাগুলোর ডিজিটাইজেশন জরুরি তা উল্লেখ পূর্বক আলোচনা করেন। এ সময় তারা ভাষা সংরক্ষণ ও ডিজিটাইজেশনের পাশাপাশি কীভাবে ভাষাগুলোর অর্থনৈতিক গুরুত্ব বাড়ানো যায় এবং সেই ভাষা ব্যবহারে বর্তমান প্রজন্মকে আকৃষ্ট করা যায় তার কৌশল বের করতে আহবান জানান। একইসাথে, তারা সরকারি উদ্যোগে ৫টি নৃগোষ্ঠী ভাষায় রচিত শিশুদের পাঠ্যপুস্তক প্রকল্প সফল করার জন্য উক্ত ভাষাগুলোতে শিক্ষিত জনবল তৈরির ওপর গুরুত্ব আরোপ করে সরকারকে এ লক্ষ্যে সঠিক পদক্ষেপ নিতে আহবান করেন।
আলোচনাসভায় দেয়া বক্তৃতায় আদিবাসী ভাষা দশক উদযাপন কমিটির আহবায়ক, মণিপুরি সাহিত্য সংসদের সভাপতি, মণিপুরি ভাষা গবেষক, কবি ও সংস্কৃতি কর্মী এ কে শেরাম বলেন, “বাংলাদেশের নৃগোষ্ঠী ভাষার ডিজিটাইজেশন একটা অত্যন্ত সুন্দর ও মহতী উদ্যোগ। বাংলাদেশে আমাদের নৃগোষ্ঠী মানুষের সংখ্যা অনেক কম এবং তাদের ভাষাগুলোও বিপন্ন হবার পথে। ভাষা যেহেতু আমাদের আত্মপরিচয় ধরে রাখে, আমাদের সংস্কৃতির শিকড়, তাই আমরা চাই আমাদের ভাষাগুলো জীবিত থাকুক। এ অন্য সকল নৃগোষ্ঠী ভাষায় যাতে তাদের শিশুরা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে সরকারকে সেই পদক্ষেপ নিতে আহবান জানাই। বর্তমানে দেশের ১৬টি ভাষায় নিয়মিত সাহিত্য চর্চা করা হচ্ছে। এই চর্চা যাতে অব্যাহত রাখা যায় এই চেষ্টাও থাকা দরকার, এই কাজে সরকারের সহযোগিতা দরকার। এই লক্ষ্যে আমরা সরকারের এই ডিজিটাইজেশন প্রচেষ্টায় সমস্ত ভাষা-জাতি সর্বাত্মক চেষ্টা করবো যাতে প্রকল্পটি সফল হয় এবং ভাষাগুলো সংরক্ষিত থাকার সুযোগ পায়।”
তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষা সমৃদ্ধকরণ প্রকল্প (ইবিএলআইসিটি)’র প্রকল্প পরিচালক মাহবুব করিম বলেন, “বাংলা ভাষাকে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির পরিসরে প্রয়োগের জন্য যেসমস্ত ক্ষেত্রে উন্নয়ন প্রয়োজন সেগুলোকে চিহ্নিত করে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া ছিল আমাদের প্রাথমিক উদ্দেশ্য। এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমরা ১৬টি কম্পোনেন্ট চিহ্নিত করেছি। বাংলাদেশের নৃগোষ্ঠী ভাষার ডিজিটাইজেশন সেই কম্পোনেন্টের অন্যতম। এই প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশের নৃগোষ্ঠী ভাষাগুলোর একটি ডিজিটাল আর্কাইভ তৈরি করবো, প্রতিটি ভাষার জন্য একটি করে ত্রৈভাষিক অভিধান প্রণয়ন করবো এবং যেসমস্ত ভাষার লিখিত রূপ রয়েছে সেগুলোর জন্য কিবোর্ড তৈরি করবো। একইসাথে আমরা নৃগোষ্ঠীর ভাষাগুলো সংগ্রহ ও সংরক্ষণের পাশাপাশি তাদের জীবনধারা ও সংস্কৃতির কথা তুলে ধরার চেষ্টা করবো।” এ সময় সভায় উপস্থিত বিভিন্ন ভাষার প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্য করে তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশের নৃগোষ্ঠী ভাষাগুলোর সংরক্ষণ ও উন্নয়নের লক্ষ্যে আমাদের প্রকল্প বাস্তবায়নকারী দল আপনাদের কাছে যাবেন, আপনাদের সাথে সময় অবস্থান করবেন। আশা করি, আপনারা আপনাদের স্বার্থেই তাদেরকে দরকারি তথ্য ও সহায়তা দিয়ে এই প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখবেন”।