সুরমা নদীতে ড্রেজিং: সমীক্ষা আর নিরীক্ষায় বছরের পর বছর পার

দৈনিক সিলেট ডট কম
মুহিত চৌধুরী: সিলেটবাসীর দু:খের অন্যতম কারণ এখন সুরমা-কুশিয়ারা। এই নদী দু’টি এতোই ভরাট হয়েছে যে শুষ্ক মওসুমে নদীর বুকে ছেলেরা খেলা-ধুলা করে। কোথাও পানি থাকলে সেখানে হাঁটু জল, নেই সেই খরস্রোতও। নদীর পানি ধারণ ক্ষমতা হ্রাস পাবার কারণে বর্ষা মওসুমে সিলেট শহর এবং অন্যান্য অঞ্চলে বন্যা দেখা দেয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সুরমা নদী ড্রেজিং করার ব্যপারে একমত থাকলেও সমীক্ষা আর নিরীক্ষায় বছরের পর বছর পার করছে। ঝুলে আছে সিলেটের ৭৬টি ছোট-বড় নদী ও খাল খননের প্রকল্প।
সিলেটবাসীর মধ্যে বিষয়টি নিয়ে এক ধরনের ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা বলছেন সিলেটের প্রায় প্রতিটি উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে একটি মহল সময় ক্ষেপন করতে সক্রিয় রয়েছেন।
বুধবার (১৮ মে) সিলেটের বন্যা দুর্গত মানুষের পাশে এসে দাঁড়ান সিলেট ১ আসনের সংসদসদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। সিলেটের বিভিন্ন অঞ্চলে তিনি বন্যাদুর্গতদের মাঝে ত্রান বিতরণ করেন। এসময় অনেকেই সুরমা নদী ভরাট হয়ে যাবার বিষয়টি মন্ত্রীকে জানান। জবাবে ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘সিলেটের প্রধান দুই নদী সুরমা ও কুশিয়ারার তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। এই দুই নদী খনন করতে হবে। এ ব্যাপারে আমাদের সরকার ও প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক। আগামী বর্ষার আগেই সুরমরাসহ সিলেটের নদীগুলো খনন করা হবে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সুরমা নদীর উৎসমুখ সিলেটের জকিগঞ্জের আমলশীদেও এখন বালুর চরে ভরাট হয়ে গেছে। বরাক-সুরমা-কুশিয়ারার তিন নদীর মোহনায় এখন বিশাল বালির বাঁধ । এই বালির বাঁধ একেবারে বন্ধ করে দিয়েছে সুরমা-কুশিয়ারার পানি প্রবাহ। যে কারণে জকিগঞ্জের আমলশীদে থেকে কানাইঘাট উপজেলার লোভাছড়া পর্যন্ত সুরমা নদীর ৩২ কিলোমিটার এলাকায় ৩২টিরও বেশি চর জেগেছে।
বরাক নদী থেকে উৎপত্তি হয়ে সুরমা নদী বাংলাদেশে মোট ৬৬৯ কিলোমিটার ভ্রমণ করেছে। ভারতের আসাম থেকে বরাক ডানদিকে ইংরেজি বর্ণ ইউ এর মতো বাঁক নিয়ে নাম ধরেছে সুরমা। সোজা পশ্চিম দিকে চলে যাওয়া প্রবাহটি কুশিয়ারা। সুরমা নদী সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মেঘনায় মিশেছে।
জানা গেছে, ২০০৬ সালের ৬ অক্টোবর জকিগঞ্জে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) মতামতের ভিত্তিতে সীমান্তবর্তী সুরমা-কুশিয়ারা নদীর সার্ভে ও মডেল স্টাডির ড্রেজিং করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পাশাপশি বরাকের ভারত অংশে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করার কথা ছিল।
সুরমা নদীতে এখন ড্রেজিং করা ছাড়া উপায় নেই। এ বিষয়ে জয়েন্ট রিভার কমিশনে বেশ কিছু বৈঠক হলেও কার্যকরী উদ্যোগ পিছিয়ে পড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলছেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে সুরমা-কুশিয়ারার বিস্তৃত এলাকা শুষ্ক মওসুমে মরুভূমিতে পরিণত হবে আর বর্ষাকালে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে সিলেট বিভাগে মহাপ্লাবন হবে। ভাসিয়ে নেবে এই জনপদের মানুষকে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, ‘আগামী বর্ষার আগেই সুরমরাসহ সিলেটের নদীগুলো খনন করা হবে’ । তার এই আশ্বাসে সিলেটবাসী আনন্দিত। তবে তারা বলছেন সিলেটের অন্যান্য প্রকল্পের মতো সমীক্ষা আর নিরীক্ষার নামে এ ক্ষেত্রে যাতে সময় ক্ষেপন না হয় সে দিকে সর্তক দৃষ্টি রাখতে হবে।