সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি, আশ্রয়কেন্দ্রেও ঢুকছে পানি

দৈনিক সিলেট ডট কম
দৈনিকসিলেট ডটকম : সিলেটের কয়েকটি অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলেও অধিকাংশ উপজেলায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সিলেট নগরেও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৯ মে) সকাল থেকে সিলেটে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এতে দুর্ভোগ বেড়েছে বন্যা কবলিত এলাকার বাসিন্দাদের।
এছাড়া সীমান্তবর্তী জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কোম্পানিগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলায় আরও নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এসব এলাকার বাসিন্দাদের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। বিশুদ্ধ পানি এবং খাবার তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
গতরাতে (বুধবার) সিলেটে প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড় বয়ে গেছে। সীমান্তের ওপারে ভারতের মেঘালয়ে বৃষ্টিপাত বেড়ে যাওয়ায় ঢলের প্রভাবও বেড়েছে। যার ফলে সুরমা, কুশিয়ারা, সারিসহ বিভিন্ন নদ নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে সিলেট শহরের শাহজালাল উপশহর, ঘাসিটুলা, মাছিমপুর, ছড়ারপার, তালতলা, কুয়ারপার, মেন্দিবাগ, কামালগড়, চালিবন্দর, যতরপুর, সোবহানিঘাট, কালীঘাট, শেখঘাট, তালতলা, জামতলা, মাছুদীঘিরপার, রামের দীঘিরপারসহ বিভিন্ন এলাকায় বাসাবাড়িতে পানি উঠেছে। এসব এলাকায় বাসাবাড়িতে কোমরপানি। পানিবন্দী মানুষজন বড় কষ্টে দিনাতিপাত করছে।
বন্ধ ৭’শ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সিলেটের অন্তত সাড়ে ৫০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া ২০০-এর মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খোলা হয়েছে আশ্রয় কেন্দ্র। এরফলে জেলার অন্তত সাড়ে ৭০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
সিলেট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ১ হাজার ৪৭৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। এর মধ্যে বুধবার দুপুর পর্যন্ত ৪০০টি পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ফলে এসব বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর, জকিগঞ্জ ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় সবচেয়ে বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে।
আশ্রয়কেন্দ্রেও বন্যার পানি:
বন্যার পানিতে বাড়িঘর প্লাবিত হওয়ায় আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছে মানুষজন। সেখানেও পানিবন্দি অবস্থায় দিন কাটছে তাদের। একতলা বিশিষ্ট অনেক আশ্রয়কেন্দ্রের ভেতরেও বন্যার পানি উঠে গেছে। সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাটে এমন চিত্র দেখা গেছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, অনেকগুলো আশ্রয়কেন্দ্রের নিচতলায় পানি উঠেছে। আর একতলা আশ্রয়কেন্দ্রগুলো থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে পানিবন্দি থাকায় জরুরি প্রয়োজনে নৌকা ব্যবহার করে অন্যত্র ঝুঁকি নিয়ে আসা-যাওয়া করতে হচ্ছে।সময় যত গড়াচ্ছে ততই বাড়ছে বানবাসী মানুষের সংখ্যা। বিভিন্ন উপজেলায় কয়েক লাখ মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সিলেট জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাঈদ চৌধুরী বলেন, ‘এই মুহূর্তে প্রকৃতি খুবই বিরূপ আচরণ করছে। একদিকে অবিরাম বর্ষণ আর আরেকদিকে পাহাড়ি ঢল, এই দুইয়ে মিলে সিলেট অঞ্চলকে বিস্বাদে পরিণত করে দিয়েছে। সহসাই এই পরিস্থিতির উন্নতি হবে না’ বলেও জানান তিনি।
সিলেট জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমদ বলেন, ‘সিলেটের নদ-নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। গত দুদিন আগে থেকেই সবগুলো নদ-নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। বিভিন্ন জায়গায় নদ-নদীর পানি পাড় উপচে শহর-গ্রামকে প্লাবিত করে দিয়েছে। সিলেট জেলার প্রতিটি জায়গায় পানি গত ২৪ ঘণ্টায় এক থেকে দেড় ফিট বেড়েছে’ বলেও জানান তিনি।
সিলেট জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, জেলায় ২৭৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এর মধ্যে ৭৮টিতে মানুষ অবস্থান করছে। এছাড়া বন্যার্তদের জন্য এ যাবত ১৪৯ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এরসঙ্গে ১ হাজার বস্তা শুকনো খাবারও বরাদ্দ করা হয়েছে।
ডিএস