বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা ঝুঁকিমুক্ত নয়: ড. মনসুর
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ জুন ২০২২, ৪:৫৯ অপরাহ্ণ
দৈনিকসিলেট ডেস্ক : পেট্রোবাংলার সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. হোসেন মনসুর বলেছেন, দেশে অবৈধ গ্যাস সংযোগ রয়েছে ৫ লাখ। গ্যাসের অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা খুবই চ্যালেঞ্জের কাজ। তবে স্বদিচ্ছা থাকলে জ্বালানি খাতে সুশাসন নিশ্চিত করা সম্ভব। বাংলাদেশে জ্বালানি নিরাপত্তা ঝুঁকিমুক্ত নয়। এ দেশের উচ্চ বিত্তরাই দুর্নীতির সাথে বেশি জড়িত। আমার সময়ে একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের অবৈধ গ্যাসের লাইন বন্ধ করতে গিয়ে একজন জেনারেল ম্যানেজারকে প্রতিষ্ঠানের লোকদের হাতে মার খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল। অবৈধ গ্যাস সংযোগ বৈধ করার সুযোগ দিলে দেখা যাবে দেশে প্রায় ৫ লাখ অবৈধ সংযোগ বৈধ করার আবেদন জমা পড়বে।
শুক্রবার (১০ জুন ২০২২) এফডিসিতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত এক ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পেট্রোবাংলার সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. হোসেন মনসুর এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
পেট্রোবাংলার সাবেক এই চেয়ারম্যান আরো বলেন, ভর্তুকি দীর্ঘমেয়াদি কোন সমাধান নয়, তবে আর্ন্তজাতিক বাজারের সাথে সমন্বয় করার প্রয়োজনে তেল-গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়। বাংলাদেশে জ্বালানি নিরাপত্তা ঝুঁকিমুক্ত নয়। তবে এ মুহুর্তে বড় ধরনের কোন শংকা নেই। গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি ব্যবসায়ীদের ওপর তেমন চাপ তৈরি না হলেও জনগণের ওপর চাপ সৃষ্টি হবে। দেশের কল্যাণে মূল্য বৃদ্ধির এই চাপ সহ্য করতে হবে।
তিনি বলেন, দুর্নীতিবাজ পেট্রোল পাম্প মালিকরা যানবাহনে তেল দেয়ার সময় সুকৌশলে ২০ শতাংশ কম দেয়। গাড়িতে ১০০ টাকার গ্যাস কিনলে ৮০ টাকার গ্যাস পাওয়া যায়, বাকিটা বাতাস ঢুকিয়ে দেয়। জ্বালানি খাতে স্বনির্ভরতা অর্জন করতে হলে তেল-গ্যাস ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়া, সিস্টেম লস হ্রাস করা এবং দুর্নীতির সাথে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে বলে তিনি মনে করেন।
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, বাংলাদেশে মাসে প্রায় ৬ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস চুরি হচ্ছে। যার আমদানি মূল্য প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। গ্যাস চুরির পরিমাণ এক তৃতীয়াংশ কমানো গেলেও স্পট মার্কেট থেকে এত টাকা দিয়ে এলএনজি কিনতে হতো না। চুরিকৃত এই গ্যাসের দায় সিস্টেম লসের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আর্ন্তজাতিক মান অনুসারে সিস্টেম লসের পরিমাণ ০.২০ থেকে ০.৩০ শতাংশ থাকার কথা। কিন্তু আমাদের গ্যাসে সিস্টেম লস দেখানো হচ্ছে ২ শতাংশেরও বেশি। চলতি বাজেটে গ্যাসের ভর্তুকি পূরণে পেট্রোবাংলা সরকারের কাছে ৪০ হাজার ২৬৫ কোটি টাকা চেয়েছে। সে কারণে সরকারকে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করতে হয়েছে। দেশে ৫১ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় গ্যাস পুড়িয়ে। ফলে গ্যাসের দাম বাড়াতে আবারো বিদ্যুতের দামও বাড়াতে হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রতিযোগিতায় যৌথভাবে বিজয়ী হয় ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজ ও ঢাকার সরকারি বাঙলা কলেজ। ছায়া সংসদের বিষয় ছিল- বর্তমান বাস্তবতায় তেল-গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি যৌক্তিক কিনা। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন ড. এস এম মোর্শেদ, সাংবাদিক সবুজ ইউনুস, ফজলে রাব্বি ও মোজাহেরুল হক রুমেল। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলের মাঝে ট্রফি ও সনদপত্র বিতরণ করা হয়।