সুনামগঞ্জে আবারও বন্যা, দিশেহারা হাওরপাড়ের মানুষ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ জুন ২০২২, ৯:৪২ অপরাহ্ণ
শাহীন আহমদ : টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে নদ-নদীর পানি আবারও বেড়ে সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। বুধবার (১৫ জুন) সর্বশেষ বিকেল ৩ টার তথ্য অনুযায়ী, সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রভাবিত হচ্ছে।
এরইমধ্যে প্লাবিত হয়েছে সুনামগঞ্জ সদর, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, ছাতক, দোয়ারা বাজারসহ ৫টি উপজেলার নিম্নাঞ্চল। বিগত ২০ দিনের ব্যবধানে আবার বন্যা দেখা দেওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন সুনামগঞ্জের মানুষ।
সুনামগঞ্জ শহরের বিভিন্ন এলাকায় পানি ঢুকে ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়ে গেছে। শহরের উত্তর আরপিননগর, তেঘরিয়া, বড়পাড়া, মধ্যবাজার, কাজির পয়েন্ট, জগন্নাথবাড়ি রোড, নতুনপাড়া, উকিল পাড়া, ষোলঘর, নবীনগর এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ, স্কুলের শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীরা।
শহরের কিছু এলাকায় পানি প্রবেশ করায় বাসা থেকে বের হতে পারছেন না স্থানীয় বাসিন্দারা। জরুরি প্রয়োজনে বের হতে কোনো এলাকায় কোমর আর কোনো এলাকায় হাটু পানি মাড়িয়ে তারপর বের হতে হচ্ছে।
ফলে, বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। চাকরিজীবী ও স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা দাবি করেছেন, সুনামগঞ্জকে বন্যা দুর্গত এলাকা ঘোষণা করে যেন সাধারণ ছুটি দেওয়া হয়।
ছাতক-দোয়ারা, ছাতক-সুনামগঞ্জ, ছাতক জাউয়া সড়কের বিভিন্ন অংশ বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সরাসরি সড়ক যোগাযোগ অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। গ্রামীণ সড়ক ইসলামপুর ইউনিয়নের ছনবাড়ি-রতনপুর সড়ক, ছনবাড়ি-গাংপাড়-নোয়াকোট সড়ক,কালারুকা ইউনিয়নরে মুক্তিরগাঁও সড়ক, বঙ্গবন্ধু সড়ক, আমেরতল-ধারণ সড়ক,বুড়াইর গাও-আলমপুর.-দাহারগাও-আলমপুর, তাজপুর-নুরুল্লাহপুর, গোবিন্দনগর-দশঘর, পালপুর-সিংচাপইড় সড়ক, ভুইগাঁও, বোকারভাঙ্গা- মানিকগঞ্জ সড়কসহ উপজেলার বিভিন্ন সড়কের একাধিক অংশ বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। শতাধিক স্টোন ক্রাসার মিল, পোল্ট্রি ফার্ম ও মৎস্য খামারে বন্যার পানি ঢুকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। শাক-সবজির বাগানেও পানি ঢুকে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হচ্ছে।
এদিকে বেরাজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান মানিক মিয়া জানান,তার বিদ্যালয় পানি টুকে মুল্যবান কাগজ পত্র বই সহ পানিতে ডুবে গেছে। নৌকা দিয়ে বিদ্যালয়ে কাগজপত্র উপর তোলা হয়।
এদিকে সরকারিভাবে বানভাসি মানুষের মাঝে উপজেলা প্রশাসনের উদ্দ্যোগে বানভাসি আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়া মানুষের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছেন ছাতকের ইউএনও।
গবাদি পশুর খাদ্য সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। উপজেলার বন্যা দুর্গতদের জন্য ৪টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে।দুর্গতদের উপজেলা প্রশাসন থেকে শুকনা খাবার বিতরণ নিয়মিত বিতরন করা হচ্ছে। ছাতক সদর পোষ্টা অফিসে পানি টুকেছে।
এব্যাপারে ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুনুর রহমান জানান, বন্যার্তদের জন্য শহরের ৪টি বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ঘোষনা করা হয়। ইতিমধ্যেই এসব আশ্রয় কেন্দ্র গুলোতে পরিবারগুলো আশ্রয় নিয়েছে। তাদের মধ্যে ত্রান সামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম ব্যাহত চলছে।
এভাবে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হলে সুনামগঞ্জে খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে আশঙ্কা করছেন সাধারণ মানুষ। এ দিকে জেলার বন্যাকবলিত উপজেলায় এখনো জরুরি ত্রাণ না পৌঁছানোর কারণে বানভাসী মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন।
মধ্যবাজারের ব্যবসায়ী সুনীল বণিক বলেন, ‘সকাল থেকে রাস্তায় পানি আর একটানা বৃষ্টিতে কোনো কাস্টমার নেই। এখানে পরিস্থিতি ভয়াবহ।’
উত্তর আরপিন নগর এলাকার বাসিন্দা জামিলা বেগম বলেন, ‘এখনো ঘরে পানি ঢোকেনি। তবে, আর ২-৩ ইঞ্চি পানি বাড়লে আমার ঘরে পানি ওঠে যাবে। টানা বৃষ্টিতে আমরা আগে ক্ষতিগ্রস্ত হই।’
ব্যবসায়ী শামসুল আলম রাজু বলেন, ‘টানা বৃষ্টিতে বাসা থেকে বের হতে পারিনি৷ শহরের সব দিকে পানি। কোনো দিকে যাওয়ার মতো অবস্থা নেই। আমি পাইকারি পণ্য সাপ্লাই দেই। আমার কাজের লোকজনও আসতে পারেনি। একদিনে অনেক ক্ষতি হয়ে গেল।’
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘আবহাওয়া অফিসের দেওয়া তথ্যে সুনামগঞ্জে আরও ২ দিন বৃষ্টিপাত থাকবে, এ সময় বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হতে পারে।’
সুনামগঞ্জের বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল এলাকায় সৃষ্ট বন্যা মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে প্রশাসন। ইতোমধ্যে বন্যাকবলিত এলাকায় জরুরি ত্রাণসহায়তা পাঠাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘সুনামগঞ্জের ১২টি উপজেলায় ইতোমধ্যে ২০ মেট্রিকটন খাদ্যসামগ্রী বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, জরুরি প্রয়োজনে কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।’