সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি, বাড়ছে নদীর পানি
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ জুন ২০২২, ১২:৪৯ অপরাহ্ণ
দৈনিকসিলেট ডটকম : সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ব্যাপক বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে জেলার নদ-নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে নদীর তীর উপচে নতুন করে বিভিন্ন বাড়িঘরে পানি ঢুকছে। এমন অবস্থায় বন্যাকবলিত পরিববারগুলো দীর্ঘস্থায়ী দুর্ভোগের আশঙ্কা করছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আজ বৃহস্পতিবার সকাল নয়টা পর্যন্ত জেলার প্রধান দুই নদী সুরমা ও কুশিয়ারার বিভিন্ন পয়েন্টে পানি বেড়েছে। সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ৯৯ সেন্টিমিটার ও সিলেট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ৩ সেন্টিমিটার এবং সারি নদের সারিঘাট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ৩২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর বাইরে জেলার ছোট ছোট অন্যান্য নদ-নদীর পানিও ক্রমশ বাড়ছে।
পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ বলেন, পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় পানি ক্রমশ বাড়ছে। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, সিলেট নগরের ৮ থেকে ১০টি এলাকা ছাড়াও জেলার কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও সদর উপজেলার অন্তত ৫০০ গ্রাম এরই মধ্যে বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি-বেসরকারি কার্যালয়ের ভেতরে পানি ঢুকে পড়ায় স্বাভাবিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়েছে।
বন্যাকবলিত মানুষেরা জানিয়েছেন, দ্বিতীয় দফায় আবার বন্যাকবলিত হওয়ায় অনেকেই চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। অধিকাংশ এলাকায় বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে পড়ছে। রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় অনেকে যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও গ্রামের সংযোগসড়ক দুদিন ধরে পানিতে তলিয়ে আছে। এসব রাস্তা দিয়ে যানবাহনের বদলে মানুষজন নৌকায় চলাচল করছেন। নগর ও পাঁচটি উপজেলায় অন্তত চার থেকে সাড়ে চার লাখ মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় আছেন বলে বানভাসিরা জানিয়েছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সিলেট নগরের তালতলা, জামতলা, সোবহানীঘাট, তেরোরতন, উপশহর, কালীঘাটসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় পাশের সুরমা নদীর পানি উপচে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। এসব এলাকার রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মানুষজন ভোগান্তি নিয়ে পথ চলছেন। অনেক বাসাবাড়ি ও দোকানে পানি উঠেছে। এরই মধ্যে কোথাও কোথাও দেখা দিয়েছে হাঁটুপানি। ঘরের ভেতরে পানি ওঠায় অনেকে নিরাপদে সরে যাচ্ছেন। সিলেটের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার কালীঘাটের বিভিন্ন দোকান তলিয়ে যাওয়ায় সেখানে ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
জামতলা এলাকার বাসিন্দা রজতকান্তি গুপ্ত বলেন, দ্বিতীয় দফায় তাঁর ঘরে বন্যার পানি ওঠায় ঘরের আসবাব আবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গতকাল থেকে পানি ক্রমশ বাড়ছে। এখনো তা অব্যাহত আছে। বন্যার পানির কারণে দুই দিনেই জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সুপেয় বিশুদ্ধ পানিরও তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আনোয়ার সাদাত গতকাল বুধবার রাতে জানান, স্থানীয় প্রশাসন বন্যা পরিস্থিতির দিকে সার্বিক নজরদারি রাখছেন। প্রয়োজনীয় স্থানে আশ্রয়কেন্দ্র চালুর জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।