পানি নামার পর পানিবাহিত রোগবালাই বাড়তে পারে, সর্তকতা জরুরী
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ জুন ২০২২, ১০:৩০ পূর্বাহ্ণ
দৈনিকসিলেটডেস্ক: এবারের ভয়াবহ বন্যায় সিলেট বিভাগেই কেবল ১৮ জন প্রাণ হারিয়েছে।সারা দেশে এ পর্যন্ত ৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। বানের জলে নানা ধরনের জটিলতায় আক্রান্ত হয়েছেন দুই হাজার ৯৩৪ জন। পানি নামার পর সেই পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন- চর্মরোগ ও ডায়রিয়াসহ নানা ধরনের পানিবাহিত রোগবালাই বাড়তে শুরু করবে বন্যাদুর্গত এলাকায়। এখনই প্রস্তুতি না নিলে তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অবশ্য বলছে, স্বাস্থ্যসেবা স্বাভাবিক রাখতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। দুর্গত এলাকায় এক হাজার ৯৭৬টি মেডিক্যাল টিম কাজ করছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম জানায়, বন্যাকবলিত চার বিভাগের ১৮৫টির মধ্যে ৬১টি উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে ৩৮৬টি ইউনিয়ন সম্পূর্ণ বন্যাকবলিত। এসব এলাকার ক্ষতিগ্রস্তরা ৬৯৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। জলমগ্ন হয়ে পড়েছে সিলেট বিভাগের ৯০ শতাংশ স্বাস্থ্যকেন্দ্র। বেড়েই চলেছে পানিবাহিত রোগের প্রকোপ। আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৯৩৪ জন। এর মধ্যে ১৭ মে থেকে ২০ জুনের মধ্যে ডায়রিয়ায় ২ হাজার ১৭৯, আরটিআইতে (রেসপারেটরি ট্রাক ইনফেকশন) ৮৭, বজ্রপাতে ১৩, সাপের কামড়ে ৪, পানিতে ডুবে ১৯, চর্মরোগে ১৪০, চোখের প্রদাহে ৪৬, নানা আঘাতে ২৫ ও অন্যান্য সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪৪২ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন এলাকায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩১৫ জন, আরটিআইতে ১১, সাপের কামড়ে তিন, পানিতে ডুবে তিন, চর্মরোগে ২২, চোখের প্রদাহে ১৮ ও অন্যান্যভাবে আঘাত পেয়েছেন ১০ জন। আর বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে ডায়রিয়া, সাপের কামড়, পানিতে ডুবে, ভ‚মিধসে এবং নানা আঘাতজনিত কারণে এ পর্যন্ত ৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সিলেট বিভাগে ১৮ ও ময়মনসিংহে প্রাণ হারিয়েছে ১৫ জন।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আহমদ পারভেজ জাবীন বলেন, ‘বন্যাদুর্গত অঞ্চলে স্বাস্থ্যব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে। স্বাস্থ্য অবকাঠামোগুলো থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। তবে স্বাভাবিক হতে আরও সময়ের প্রয়োজন।’ তিনি বলেন, ‘এসব এলাকায় পানিবাহিত রোগের সংক্রমণ অনেক বেশি ছড়িয়ে পড়ছে। জেলা ও উপজেলা সদরে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও স্বাস্থ্য উপকরণের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও প্রত্যন্ত অঞ্চলে ওষুধ, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যবলেট পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। পানি কমতে শুরু করলে এসব এলাকায় বিশুদ্ধ পানির তীব্র অভাবে দেখা দেবে। এমনকি চোখের প্রদাহ এবং বিভিন্ন চর্মরোগে আক্রান্ত হবে বিপুলসংখ্যক মানুষ। তাই প্রত্যন্ত অঞ্চলে ওষুধ ও স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানো নিশ্চিত করা সম্ভব না হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেত পারে।’
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘বন্যকবলিত এলাকাগুলোতে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে, এ সময়ে নিরাপদ পানির জন্য বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, ডায়রিয়ার রোগীদের চিকিৎসায় বিপুল পরিমাণ আইভি ফ্লুইড ও খাবার স্যালাইন, সাপে কাটা রোগীদের জন্য এন্টিভেনম এবং অন্যান্য রোগের পর্যাপ্ত পরিমাণে ওষুধ পাঠানো হয়েছে দুর্গত এলাকায়।’ পানি নামতে শুরু করলে পানিবাহিত রোগব্যাধি আরও বাড়তে পারে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘সিলেট ও সুনামগঞ্জের সব স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের নিচতলায় পানি ঢোকায় স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। তবে স্বাস্থ্যসেবা স্বাভাবিক রাখতে জরুরি সেবা ও বহির্বিভাগ সেবা দ্বিতীয় তলায় স্থানান্তর করা হয়। ওষুধের প্রাপ্যতা নিশ্চিতে ইডিসিএলের (অ্যাসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লি.) মাধ্যমে আরও ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে শুধু সিলেট বিভাগেই ২৯টি দুর্গত উপজেলায় ৪২৯টি মেডিক্যাল টিম কাজ করে যাচ্ছে। নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। এমনকি বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইল ফোনের লাইট জ্বালিয়েও অপারেশন করা হয়েছে।’
সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে গত সপ্তাহে প্রতিবেশী দেশ ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পূর্ব খাসি পাহাড়ের চেরাপুঞ্জিতে ১২২ বছরের মধ্যে তৃতীয়বারের মতো রেকর্ড বৃষ্টিপাত হয়। গত ১৫ থেকে ১৭ জুন বাংলাদেশের উজানে আসাম ও মেঘালয়ে তিন দিনের টানা বৃষ্টির পানি পাহাড় গড়িয়ে ঢল হয়ে নামে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে। প্লাবিত হয়েছে সিলেট সদরসহ সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলা। বন্যার পানি এবার আছড়ে পড়ছে দেশের মধ্যাঞ্চলীয় জেলাগুলোতেও।সূত্র:আমাদেরসময়