চিকিৎসার নামে প্রতারণা,চুনারুঘাটে ভূয়া ডাক্তার আটক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ জুন ২০২২, ৪:৩০ অপরাহ্ণ

নুর উদ্দিন সুমন, হবিগঞ্জ : চিকিৎসার নামে চলছে প্রতারণা। ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা হাসপাতাল বা ক্লিনিকগুলো এখন ভুয়া ডিগ্রিধারী ডাক্তারের ছড়াছড়ি। নানা নামের বাহারি ডিগ্রি ব্যবহার করে চকচকে লিফলেট, বিজ্ঞাপন, সাইনবোর্ড সেঁটে নিরীহ ও সাধারণ রোগীদের প্রতারিত করে আসছে তারা। ফলে জনস্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে এক চরম অরাজকতা বিরাজ করছে।
শুক্রবার (২৪ জুন) দুপুরে হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট পৌর শহরের এম.কে ডায়াগনস্টিক এন্ড ক্লিনিকের ভূয়া ডাক্তার জাফরুল হাসান (২৮) কে আটক করেছে ভ্রাম্যমান আদালত। আটক জাফরুল হাসান টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর উপজেলার আলমনগর এলাকার মো: আতর আলীর ছেলে। জানা যায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চুনারুঘাট এম.কে ডায়গনস্টিক এন্ড ক্লিনিকে জেলা প্রশাসনের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিষ্ট্রেট রিফাত আনজুম পিয়া এবং হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালের সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডাঃ ওমর ফারুক অভিযান পরিচালনা করে ভূয়া ডাক্তারকে আটক করেন। হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালের সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডাঃ ওমর ফারুক জানান, প্রতারক জাফরুল হাসান দীর্ঘদিন ধরে চুনারুঘাট এমকে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সার্টিফিকেট ছাড়া নওগাঁ জেলার ডা: মোহাম্মদ তামীমের বিএমডিসি কোড ব্যবহার করে নিজেই ডাক্তার সেজে ভুয়া চিকিৎসা দিচ্ছে এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জাফরুল হাসানকে আটক করা হয় ।
এর আগে ভোলা জেলায়, শায়েস্তাগঞ্জের সুতাং আলমদিনা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে তার চেহারার সাথে মিল থাকায় ডাক্তার মোহাম্মদ তামীমের বিএমডিসি কোড ব্যবহার করে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছিলেন তিনি। এ রকম ভুয়া ডাক্তারদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে এসময় জানানো হয়। আটক জাফরুল হাসান প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। পরে মামলা দিয়ে চুনারুঘাট থানায় হস্তান্তর করা হয়। ভ্রাম্যমান আদালতকে সহযোগিতা করেন চুনারুঘাট থানার এএসআই মনির হোসেনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ। এদিকে ভূয়া ডাক্তার জাফরুল হাসান আটকের পর বেড়িয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। প্রতারক জাফরুল হাসান এরআগে ভোলা জেলায় নওগাঁ জেলার ডাঃ মোহাম্মদ তামিম এর এমবিবিএস, সিএমইউ, ডিএমইউ (আল্ট্রা) পিজিটি (মেডিসিন) বিএমডিসি কোড ব্যবহার করে চর্ম, যৌন ও এলার্জি, হ্নদরোগ, মাও, শিশু রোগ ইত্যাদী বিশেষজ্ঞ দাবী করে রোগীদের সাথে প্রতারণা করে হাতিয়ে নেন মোটা অংকের টাকা। শুধু তাই নয় তার প্রতারনা থেকে রেহাই পায়নি এক তরুণী রুগী। ২০২১ সালে ভোলায় তার চেম্বারে ডাক্তার দেখাতে এসে পরিচয় হয় ইশরাত জাহান নামের এক রুগিনীর। সে ওই রুগিনীর সাথে এমবিবিএস পরিচয় দিয়ে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে প্রতারক জাফরুল হাসান। একপর্যায়ে ওই তরুণী রুগীনিকে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে প্রতারক । বিষয়টি ইসরাতের পরিবারে জানাজানি হলে বেড়িয়ে আসে তার গোপন তথ্য। তাদের প্রেমের বিষয়টি মেনে নেয়নি ইসরাতের পরিবারের লোকজন।
পরবর্তীতে ভোলা থেকে পালিয়ে এক ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধির মাধ্যমে হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে আলমদিনা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চেম্বার করেন। তার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ আসে হবিগঞ্জ সিভিল সার্জন বরাবরে। অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নামেন সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডা: ওমর ফারুক । গত বৃহস্পতিবার প্রতারক জাফরুল হাসানের ভূয়া এবং জ্বাল সকল কাগজপত্র বিএমডিসিতে পাঠানো হয়। বিএমডিসি তার সকল কাগজপত্র যাচাইয়ে দেখা যায়, নওগাঁ জেলার ডা: মোহাম্মদ তামিমের। এর পর অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়। সম্প্রতি গেল বছর ভূয়া ডাক্তার জয়ন্তী রানী, মাসুদ করিম, নবীগঞ্জে মোস্তাফিজুর রহমানসহ একাধিক ভুয়া ডাক্তারকে আটক করেছে জেলা প্রশাসন। জেলা জুড়ে এই অবস্থা এখন উদ্বেগজনক। ভুয়া ডাক্তারের পাশাপাশি জাল ডিগ্রিধারী ‘বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের’ সংখ্যাও কম নয়। তারা এমবিবিএস পাসের পর নামের আগে-পরে দেশ-বিদেশের ভুয়া উচ্চতর ডিগ্রি ব্যবহার করে বছরের পর বছর রোগী দেখছেন, হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অঙ্কের ফি। ভুয়া ডাক্তার-দালালদের দৌরাত্ম্য, ভুল চিকিৎসা, অবহেলা আর চিকিৎসা-বাণিজ্যের নির্মমতায় একের পর এক রোগী মারা যাচ্ছেন।
বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে হাতুড়েরা এখন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হিসেবে নিজেদের জাহির করছে। অভিযুক্ত জাফরুল হাসান জানায়, সে ২০০৯ সালে এসএসসি পাস করে ২০১১ সালে এইচএসসি পাস করে চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি হয়। এর পর অর্থাভাবে লেখাপড়া করতে পারেনি। লেখাপড়া তেমন না করলেও অন্যে ডাক্তারের সনদ ব্যবহার করে আসছিল। অবশেষে প্রতারণা থেকে রেহাই পায়নি। তবে তার সকল অপকর্মের বিষয়টি স্বীকার করে । এবিষয়ে চুনারুঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ মো: আলী আশরাফ জানান, সন্ধ্যা ৬টার পর মোবাইল কোর্টের আদেশসহ ভূয়া ডাক্তার জাফরুলকে থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। শনিবার সকালে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন