গোতাবায়ার গদির লড়াইয়ে তিন প্রতিদ্বন্দ্বী
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ জুলাই ২০২২, ৯:৩৭ পূর্বাহ্ণ
দৈনিকসিলেট ডেস্ক : দেশ ছেড়ে পালানো শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের পদত্যাগের পর দেশটির ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন রনিল বিক্রমাসিংহে। গতকাল শুক্রবার শ্রীলংকার প্রধান বিচারপতি জয়ন্থা জয়াসুরিয়ার কাছে শপথ নেন তিনি। এরপর এক ভাষণে আর্থিক সংকটে জর্জরিত দেশে আবার শৃঙ্খলা ও আইনের শাসন ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন রনিল। সেই সঙ্গে দেশকে সংকট থেকে উদ্ধারে একটি সর্বদলীয় সরকার গঠনের জন্য ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করতে আইনপ্রণেতাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের বরাত দিয়ে রয়টার্স এ খবর জানায়।
ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির (ইউএনপি) চেয়ারম্যান ৭৩ বছর বয়সী রনিল এবারসহ ছয়বার শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করলেও আগের পাঁচবারই মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি। ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ায় এবারও প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ পূর্ণ করতে পারবেন না তিনি।
এর মধ্যে দেশটির স্পিকার মাহিন্দা ইয়াপা আবেবর্ধনে জানিয়েছেন, সিঙ্গাপুরে পালিয়ে যাওয়া প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার পদত্যাগপত্র আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করেছেন তিনি। আগামী সাত দিনের মধ্যে দেশ একজন নতুন প্রেসিডেন্ট পাবে। স্পিকারের এই ঘোষণার পর গোতাবায়ার স্থলাভিষিক্ত কে হতে যাচ্ছেন তা নিয়ে শ্রীলংকাজুড়ে আলোচনা চলছে। রয়টার্স জানিয়েছে, ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়া ঝানু রাজনীতিবিদ রনিলের এই পদে নির্বাচন করার ইচ্ছা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে তার সুবিধা হলো পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে রনিলের রয়েছে গ্রহণযোগ্যতা। আবার প্রভাবশালী প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গেও তার সুসম্পর্ক রয়েছে। যদিও জনমত তার পক্ষে নেই। এরই মধ্যে বিক্ষোভকারীরা রনিলকে গোতাবায়ার সহযোগী হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। তবু রনিল আশাবাদী হচ্ছেন, একটি বিশেষ কারণে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের নিয়ম বদল হয়েছে শ্রীলংকায়। এখন থেকে সাধারণ নাগরিকদের সমর্থনে (পপুলার ভোট) নয়, বরং পার্লামেন্ট সদস্যদের ভোটেই আগামী ২০ জুলাই নির্বাচিত হবেন পরবর্তী প্রেসিডেন্ট। সে জন্যে রনিল এখন চেষ্টা করছেন এমপিদের মন যোগাতে।
ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, রনিল ছাড়াও পলাতক গোতাবায়ার ছেড়ে যাওয়া প্রেসিডেন্টের কুর্সি দখলের লড়াইয়ে রয়েছেন আরও দুই জন। তারা হলেন- পার্লামেন্টের বিরোধীদলীয় নেতা সাজিথ প্রেমদাসা এবং প্রবীণ সাংবাদিক তথা পার্লামেন্ট সদস্য ডলাস অলহাপেরুমনা। ২২৫ সদস্যের শ্রীলংকা পার্লামেন্টে রাজাপাকসের দল পড়ুজনা পেরমুনার (এসএলপিপি) সদস্য সংখ্যা ১০০। এ ছাড়া রনিলের দল ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির (ইউএনপি) ১ এবং তালিম সংগঠন ইপিডিপির ২ সদস্য রয়েছেন। ছয়বারের প্রধানমন্ত্রী রনিল ভোটে লড়লে এদের বড় অংশের সমর্থন পেতে পারেন। অন্যদিকে, সাজিথের দল সমগি জন বলবেগয়ার (এসজেবি) ৫৪ জন পার্লামেন্ট সদস্য রয়েছেন। বৃহত্তম তামিল দল টিএনএর ১০ সদস্যের সমর্থনও তার পাশে রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে অন্য ছোট দল এবং ৪৫ জন নির্দলীয় সদস্যের সমর্থন নির্ণায়ক হতে পারে। তবে শাসক শিবিরে অন্তর্কলহের জেরে এসজেবি নেতা সাজিথ প্রেসিডেন্ট হওয়ার লড়াইয়ে এগিয়ে যেতে পারেন বলে অনেকে মনে করছেন।
রনিল এবং সাজিথ দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহযোগী। রনিলের সরকারে স্বাস্থ্যমন্ত্রীও হয়েছিলেন সাজিথ। ২০১৯ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রনিলের দল ইউএনপির প্রার্থী হিসেবে লড়ে গোতাবায়ার কাছে হেরে যান তিনি। সে নির্বাচনে ৫২.২৫ শতাংশ ভোট পেয়ে জেতেন গোতাবায়া। প্রতিদ্বন্দ্বী সাজিথ ৪১.৯৯ শতাংশ ভোট পেয়ে হন দ্বিতীয়। গত বছরের পার্লামেন্ট নির্বাচনের আগে ইউএনপি ছেড়ে নতুন দল এসজেবি গড়েন সাজিথ। যা হয়ে যায় পার্লামেন্টের দ্বিতীয় বৃহত্তম দল। অন্যদিকে, মাত্র একটি আসনে জেতে রনিলের ইউএনপি।
নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকট ও ব্যাপক বিক্ষোভের জেরে গত মঙ্গলবার দেশ ছেড়ে প্রথমে মালদ্বীপে পালিয়ে যান প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া। সেখান থেকে গত বৃহস্পতিবার যান সিঙ্গাপুর। টানা টালবাহানার পর সিঙ্গাপুর পৌঁছে গোতাবায়া ই-মেইলের মাধ্যমে তার পদত্যাগপত্র পাঠান স্পিকারের কাছে। এর মাধ্যমে শ্রীলংকায় অবসান ঘটে রাজাপাকসে পরিবারের প্রায় দুই দশকের শাসনের। এখন দেখার বিষয়, কত দ্রুত দেশটি একজন নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে পারে এবং নতুন সরকার সংকট উত্তরণে কী ভূমিকা নেয়।