মৌলভীবাজারে লোডশেডিংয়ে সংকটের মুখে চা শিল্প
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ জুলাই ২০২২, ১২:০০ অপরাহ্ণ
দৈনিকসিলেট ডেস্ক : চায়ের এই ভরা মৌসুমে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে চায়ের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। চাহিদা অনুযায়ী জ্বালানি না পাওয়ায় জেনারেটর চালিয়েও চায়ের কারখানাগুলোকে সচল রাখা যাচ্ছে না। শঙ্কা দেখা দিয়েছে চায়ের গুণগতমান নিয়েও। যার প্রভাব পড়বে চায়ের রপ্তানি বাজারেও।
জানা গেছে, সারা দেশে মোট ১৬৩টি চা বাগানের মধ্যে শুধু মৌলভীবাজার জেলাতেই রয়েছে ৯২টি। এরমধ্যে অধিকাংশই শ্রীমঙ্গলেই রয়েছে। দেশের অভ্যন্তরীণ চায়ের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও চা রপ্তানি করা হয় এখানকার চা। চা শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হঠাৎ করে লোডশেডিং তীব্র হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উৎপাদন প্রক্রিয়া। জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চা উৎপাদনের মৌসুম। এই পিক সিজনে প্রতিটি বাগানের ফ্যাক্টরিতে ক্ষেত্রভেদে ৫ হাজার থেকে ৭০ হাজার কেজি চা পাতা আসে প্রক্রিয়াজাতের জন্য। কিন্তু বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ফলে এই কাঁচা পাতা প্রক্রিয়াজাত করতে সমস্যায় পড়ছেন বাগান মালিকরা।
দিনে একাধিকবার লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ার কারণে ব্যবহার করতে হচ্ছে জেনারেটর, আর তাতে বেড়ে যাচ্ছে উৎপাদন খরচ।
পাশাপাশি সরকার জ্বালানি তেলের কৃচ্ছ্যতা সাধনের নীতি প্রয়োগ করায় জেনারেটর চালানোর জন্য পর্যাপ্ত ডিজেলেরও সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় চা বাগানের কারখানাগুলো ২৪ ঘণ্টা চালু রাখা যাচ্ছে না। এতে করে নষ্ট হচ্ছে চায়ের গুণগতমান।
স্কয়ার গ্রুপের মালিকানাধীন শাহবাজপুর চা বাগানের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম বলেন, লোডশেডিংয়ের কারণে আমাদের মারাত্মক সমস্যা হচ্ছে, খরচ বেড়ে গেছে। বিদ্যুৎ যখন চলে যায় তখন আমাদের জেনারেটর চালাতে হয়। জেনারেটর চালানোর জন্য প্রয়োজন হয় ডিজেল। ডিজেলের লিটার ৮৫ টাকা করে। কিন্তু সেই ডিজেলও আমরা চাহিদামত পাচ্ছি না। তারপর সরকার আবার বলেছে পেট্রোল পাম্প সপ্তাহে একদিন বন্ধ থাকবে। যে কারণে জেনারেটর চালিয়েও উৎপাদন ঠিক রাখতে পারছি না আমরা। তাই লোডশেডিংয়ের জন্য সামগ্রিকভাবে আমাদের বেশ ক্ষতি হচ্ছে।
ন্যাশনাল টি কোম্পানি (এনটিসি) কুরমা চা বাগানের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আক্তার শহীদ বলেন, একটানা দুই ঘণ্টা ফ্যাক্টরি চালাতে পারছি না। এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকলে পরের দুই ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। একটানা যদি ফ্যাক্টরি না চলে তাহলে চায়ের গুণগতমান নষ্ট হয়। ইস্পাহানী জেরিন চা বাগানের ব্যবস্থাপক সেলিম রেজা জানান, আমরা প্রতিদিন চার থেকে সাড়ে চার হাজার কেজি কাঁচা চা পাতা প্রক্রিয়াজাত করি। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় আমরা গ্যাসচালিত জেনারেটর দিয়ে কারখানা চালু রেখেছি। এতে আমাদের উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে।
বাংলাদেশ টি এসোসিয়েশন সিলেট শাখার চেয়ারম্যান জিএম শিবলী জানান, বিদ্যুৎ সমস্যার কারণে আমাদের সবগুলো বাগানেই চা উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। চা উৎপাদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত সকল যন্ত্রপাতি আবার অনেক সময় জেনারেটরে চালানো সম্ভব হয় না। তা ছাড়া সবকিছুর দাম বাড়লেও চায়ের দাম কিন্তু সেভাবে বাড়েনি। এখন এই সমস্যার জন্য গুণগতমান যদি কমে যায় তাহলে চায়ের দামও কমে যাবে।
বিদেশে চা রপ্তানিকারী প্রতিষ্ঠান মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের বিপণন কর্মকর্তা মো শাহজালাল বলেন, চায়ের গুণগতমান খারাপ হলে রপ্তানিবাজারে এর ব্যাপক প্রভাব পড়বে। খারাপ মানের কোনো চা বিশ্ববাজারে বিক্রয় করা সম্ভব না। আর বিক্রয় করলেও সেটি ফেরত আসবে। যার ফলে দেশের চায়ের রপ্তানি বাজার ও চা শিল্প দুটোই মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেন জানান, বিশ্ববাজারে যদি পরিস্থিতি স্থিতিশীল হয় তাহলে এটার একটা সুরাহা হবে। একটি বা দু’টি চা কারখানা হলে আমরা তাদের আলাদা গুরুত্ব দিতে পারতাম। কিন্তু এখানে একাধিক চা কারখানা হওয়ায় আমাদের পক্ষে কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না।