যেভাবে চতুর্থ বার সিলেট পাসপোর্ট অফিসে মাজহারুল ইসলাম
দৈনিক সিলেট ডট কম
দৈনিকসিলেট ডটকম : সিলেট বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসে চতুর্থ বারের মতো দায়িত্ব পালন করছেন এ কে এম মাজহারুল ইসলাম। বর্তমানে তিনি পরিচালক পদে রয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় এ নিয়ে প্রতিদিনই প্রতিবেদন প্রকাশ হচ্ছে। বিষয়টি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এমপি’র নজরে পড়ায় তিনি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে হুশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেছেন, সিলেট পাসপোর্ট অফিসে কোন দুর্নীতি বরদাস্ত করা হবেনা। তিনি অপরাধীদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন।
সিলেট পাসপোর্ট অফিসের বর্তমান পরিচালক এ কে এম মাজহারুল ইসলাম এর আগে আরো তিন বার সিলেট পাসপোর্ট অফিসে দায়িত্ব পালন করেন। প্রতিবারই তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আসে। তিনি ১৯৯১-১৯৯২ সালে শেখঘাটস্থ সিলেট পাসপোর্ট অফিসে প্রথম কাজ করেন। ২০১১ সালে নগরীর উপশহরে এমআরপি পাসপোর্ট চালু হলে তিনি আবার সিলেট আসেন। এসময় তাঁর বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে তিন মাসের মধ্যে তাকে সিলেট থেকে বদলী করা হয়। কিন্তু তিনি এ বদলী মেনে নিতে পারেননি। ব্যাপক তদবীর এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা দিয়ে লবিং করে ২০১৭ সালে আবার সিলেট চলে আসেন। তবে দুনীর্তির জন্য বেশিদিন টিকতে পারেননি। এসময় তৎকালীন পরিচালক সেলিনা বানুকে প্রধান করে তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্তে দুর্নীতির অভিযোগের সত্যতা পেয়ে তাকে আবার ঢাকায় বদলী করা হয়।
এতো কিছুর পরও তিনি ২০১৯ সালের সেপটেম্বর মাসে চতুর্থ বারের মতো সিলেট বিভাগী পাসপোর্ট অফিসে পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। এ বিষয়টি শুরু থেকে মেনে নিতে পারেনি সিলেটের সাধারণ মানুষ।
বিষয়টি নিয়ে দৈনিকসিলেটডটকম অনুসন্ধানে নামে।
একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, সিলেটে ই- পাসপোর্ট চালু করার উদ্যোগ নেয়ার পর একজন অভিজ্ঞ পরিচালক নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। এ খবরে তৎপর হয়ে উঠেন এ কে এম মাজহারুল ইসলাম । শুরু করেন ব্যাপক তদবির। এসময় তিনি ঢাকায় ই- পাসপোর্ট কার্য়ক্রমের সাথে যুক্ত ছিলেন।
সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দায়িত্ব প্রাপ্ত সরকারের একজন প্রভাবশালী মন্ত্রীর সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক থাকায় তিনি তাকে দিয়ে লবিং শুরু করেন। অন্যদিকে সিলেট বিভাগের একজন মন্ত্রীর এনআরবি উপদেষ্টাকেও কাজে লাগান এ কে এম মাজহারুল ইসলাম। যুক্তরাজ্যে বসবাসরত ঐ ‘এনআরবি উপদেষ্টা’ মন্ত্রীকে জানান সিলেটে ই-পাসপোর্ট চালু করতে হলে এ কে এম মাজহারুল ইসলাম-এর বিকল্প নেই। তিনি এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অভিজ্ঞ। এ কে এম মাজহারুল ইসলাম অত্যন্ত সৎ এবং দক্ষ কর্মকর্তা হিসেবেও মন্ত্রীর কাছে উপস্থাপনা করেন। সিলেটের মানুষের কল্যাণ হবে এবং ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম সিলেটে সঠিকভাবে পরিচালিত হবে মন্ত্রীকে এসব বলে এই চক্রটি একটি ডিও লেটারও সংগ্রহ করে ।
তার পর যা হবার তাই হলো। বার বার দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত সেই কে এম মাজহারুল ইসলাম সিলেট বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের পরিচালক হয়ে চতুর্থবারের মতো সিলেট এলেন। এবং শুরু করলেন তাঁর পুরোনো কার্যক্রম।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি নাকি সিলেট পাসপোর্ট অফিসে গড়ে তুলেছেন শক্তিশালী এক সিন্ডিকেট। যারা মানুষের কাছ থেকে আইনের নানা অজুহাত দেখিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা।
ইমিগ্রেন্ট, ভিজিট, স্টুডেন্টসহ বিভিন্ন পদ্ধতিতে এখান থেকে লোকজন বাইরে যাচ্ছেন। সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যে কর্মী ও ইউরোপ-আমেরিকায় স্টুডেন্ট ভিসায় শিক্ষার্থীদের যাওয়া বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই পাসপোর্ট তৈরীর হারও বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতি দিন ছয়শতাধিক পাসপোর্টের ফাইল জমা হয়।
সুত্র আরো জানায়, সিলেট পাসপোর্ট অফিস থেকে প্রতিমাসে যে ঘুষের টাকা সংগ্রহ করা হয় সে টাকার ভাগ নাকি প্রভাবশালী মহলও পেয়ে থাকেন। আর এ কারণে এতোসব অপকর্মের পরও বহাল তবিয়তে টিকে আছেন, এ কে এম মাজহারুল ইসলাম।