প্রেমের ফাঁদে ফেলে ভারতে পাচার তরুণী, দেশে ফেরার আকুতি
দৈনিক সিলেট ডট কম
দৈনিকসিলেট ডেস্ক : লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা উপজেলায় এক কলেজছাত্রীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ভারতে পাচার করা হয়েছে। বেঁচে থাকা ও বাড়িতে ফেরার আকুতি নিয়ে ওই কলেজছাত্রীর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
৪ মিনিট ২৮ সেকেন্ডের ভিডিওতে কলেজছাত্রী কান্নাজনিত কণ্ঠে বলেন, আমি বাঁচতে চাই, আমাকে বাঁচান। আমাকে ভারতের শিলিগুঁড়িতে একটি বাড়িতে আটকে রাখা হয়েছে। আমার ওপর অমানবিক নির্যাতন করা হচ্ছে। আমি বাড়িতে ফিরতে চাই।
কলেজছাত্রী ভিডিওতে বলছিলেন, আমাকে মিথ্যা প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে ভারতে পাচার করা হয়েছে। আমাকে প্রথমে ঢাকায় নিয়ে বিয়ে করেছিল। পরে ঢাকা থেকে ভারতে পাচার করা হয়।
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার মধ্য গড্ডিমারী গ্রামের একাদশ শ্রেণির ওই কলেজছাত্রীর বাবা নেই। তিনি ভাইয়ের সংসারে থেকে পড়াশোনা করছিলেন। গত ৫ আগস্ট ওই কলেজছাত্রী গোপনে ভারত থেকে একটি ভিডিও তৈরি করে তার ভাইয়ের কাছে পাঠিয়ে দেন। ৯ আগস্টে কলেজছাত্রীর ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
কলেজছাত্রীর ভাই বলেন, আমি এক ব্যক্তি মারফত ভিডিওটি পাই। বোনের ভিডিওটি দেখে কান্নায় ভেঙে পড়ি। আমি পুলিশকে ভিডিওটি দিয়েছি। আমি বোনের সঙ্গে এখনো যোগাযোগ করা হয়নি। জানি না আমার বোন কি অবস্থায় আছে। আমার বোনকে ভারত থেকে উদ্ধার করার জন্য প্রশাসনের কাছে বিনীত প্রার্থনা করছি।
তিনি বলেন, তার বোন প্রেমের জালে আটকিয়ে গত বছর ৫ ডিসেম্বর তাকে অপহরণ করা হয়। এ ঘটনায় তিনি ৫ জনকে অভিযুক্ত করে হাতীবান্ধা থানায় গেল ৬ জানুয়ারী একটি মামলা করেন। গত ২৭ মে পুলিশ ৫ জনের মধ্যে ২ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। পুলিশ আমার বোনকে উদ্ধার করতে কোন তৎপর ছিলো না। আমার বোনকে ভারতে পাচার করা হয়েছে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সুকুমার রায় বিষয়টি জানতেন।
চার্জশিটে অভিযুক্ত আসামিরা হলেন- হাতীবান্ধা উপজেলার গেন্দুকুড়ি গ্রামের ধনঞ্জয় চন্দ্রের ছেলে তিলক চন্দ্র (২০) ও মধ্য গড্ডিমারী গ্রামের ফজলুল রহমান খলিলের ছেলে হামিদুল ইসলাম হৃদয় (১৯)।
চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়া অভিযুক্তরা হলেন, গেন্দুকড়ি গ্রামের মৃত প্রাণকৃষ্ণ চন্দ্রের ছেলে ধনঞ্জয় চন্দ্র (৫০) ও প্রফুল্য চন্দ্রের ছেলে গোপাল চন্দ্র (৩২) এবং মধ্য গড্ডিমারী গ্রামের ফজায়েল হোসেন তারেকের ছেলে মনিরুজ্জামান তান্না (১৯)।
কলেকজছাত্রী ভিডিওতে জানায়, তিলক চন্দ্র ওরফে শুভ ওরফে নীরব ইসলাম গ্রহণ করে তাকে বিয়ে করে। ঢাকায় কিছুদিন অবস্থান করার পর তাকে ভারতে পাচার করা হয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হাতীবান্ধা থানার এসআই সুকুমার রায় বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে তিলক ও হামিদুলের সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। অপর তিন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ঘটনার পর থেকে আসামি ও ভিকটিমের মোবাইল বন্ধ রাখায় তাদের লোকেশন জানা যায়নি। এ কারণে ভিকটিমকে উদ্ধার করতে পারিনি। ভিকটিমকে উদ্ধার করতে পুলিশের আন্তরিকতার কোন ঘাটতি ছিলো না।
হাতীবান্ধা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহা আলম বলেন, আমরা জানতে পেরেছি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি পুলিশ ইতোমধ্যে কলেজছাত্রীকে উদ্ধার ও আসামিকে আটক করেছে। কলেজছাত্রী ও আসামিকে বাংলাদেশে ফেরত আনতে আমরা আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেছি। আশা করছি দ্রুত দেশে ফেরত আনা সম্ভব হবে।