দিরাইয়ে আ’ লীগের সম্মেলনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত ১

দৈনিকসিলেট ডটকম :
সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত দলীয় এক কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। নিহত আজমল হোসেন চৌধুরী উপজেলার কুলঞ্জ গ্রামের আব্দুল হান্নানের ছেলে ও দিরাই পৌরসভার সাবেক মেয়র মোশাররফ মিয়ার সমর্থক।
এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন আওয়ামী লীগ কর্মী ও নিহতের নিকটাত্মীয় রহমত আলী। তিনি বলেন, ‘আমি ও আজমল মামা একসাথে সম্মেলনে ছিলাম। সংঘর্ষ শুরু হলে আমরা দুজনেই ইটের ঢিলের আঘাতে আহত হই। মামাকে নিয়ে উপজেলা হাসপাতালে গেলে সেখানে তার অবস্থার অবনতি ঘটে। চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় বিকেলে তিনি মারা যান।’
এ দিকে নিহত আজমল হোসেন চৌধুরীকে আওয়ামী লীগকর্মী ও তাঁর সমর্থক বলে দাবি করেছেন আহত উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক পৌর মেয়র মোশাররফ মিয়া। তিনি বলেন, ‘সংঘর্ষের সময় তার সামনেই প্রতিপক্ষের ইটের আঘাতে আহত হয়ে হাসপাতালে যাওয়ার পর আজমলের মৃত্যু হয়েছে।’
তবে, দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপসহকারী মেডিকেল অফিসার বেলায়েত হোসেন বলেন, আজমল হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
একই তথ্য নিশ্চিত করেছেন দিরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল আলম। তিনি বলেন, সংঘর্ষ চলাকালে আজমল হোসেন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগের কর্মী কি না তা নিশ্চিত নন বলে জানান ওসি।
এর আগে সোমবার (১৪ নভেম্বর) দুপুর ১টায় দিরাই বিএডিসি মাঠে আয়োজিত উপজেলায় আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে দলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ২০ নেতাকর্মী আহত হন।
আহতদের মধ্যে রয়েছেন দিরাই পৌরসভার সাবেক মেয়র মোশাররফ মিয়া, সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক কামরুল হাসান চৌধুরী, জেলা যুবলীগ নেতা আসাদুজ্জামান সেন্টু, জেলা মুক্তিযোদ্ধা যুব কমান্ডের সভাপতি কুবাদ আলী, পৌর কাউন্সিলর এবিএম মাসুম প্রদীপ।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের জন্য সকাল ১০টা থেকে দিরাই বিএডিসি মাঠে জড়ো হতে থাকেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায় গ্রæপের নেতাকর্মীরা। দুপুর ১টার দিকে কেন্দ্রীয় নেতারা মঞ্চে পৌঁছানোর পরপর সাবেক পৌর মেয়র ও সভাপতি প্রার্থী মোশাররফ মিয়া বিপুল সমর্থক নিয়ে সমাবেশস্থলে আসেন।
এ সময় মোশাররফ মিয়া মঞ্চে উঠতে চাইলে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। দুই গ্রুপ বেপরোয়া ইট-পাথর ছুঁড়তে থাকলে সমাবেশস্থল রণক্ষেত্রে রূপ নেয়। মঞ্চে থাকা আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, কেন্দ্রীয় সদস্য আজিজুস সামাদ ডন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান, সহসভাপতি নোমান বখত পলিন, সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এনামুল কবীর ইমন, স্থানীয় সংসদ সদস্য ড. জয়া সেনগুপ্তা, সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শামীমা আক্তার খানমসহ নেতারা বসার চেয়ারকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে আত্মরক্ষা করেন। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নেতাকর্মীদের বেষ্টনীতে মঞ্চ ত্যাগ করেন। আধঘন্টার মধ্যে পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিলে ফের সম্মেলন শুরু হয়। তবে সমাবেশ শেষে কমিটি ঘোষণা না করেই নেতারা ফিরে যান।
সভায় সভাপতিত্ব করেন দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট সোহেল আহমদ ও সঞ্চালনা করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায়।
দিরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুল আলম বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত। তবে এ ঘটনায় কয়েকজন আহত হয়েছেন।