সিলেটে লেপ-তোষক তৈরিতে ব্যস্ত কারিগর

শাহীন আহমেদ :
শিশির ভেজা সকাল শীতের আগমনী বার্তা নিয়ে হাজির হয়। রাতে ও সকালে ঠান্ডা লাগলেও দুপুরের দিকে এখনো খানিকটা গরম লাগে। এই সময়টায় একই দিনে দুইরকম আবহাওয়া পাওয়া যায়।
শীতের এই সময়ে সিলেটে লেপ-তোষক তৈরিতে ব্যস্ত কারিগররা। শীত নিবারণের আগাম প্রস্তুতি হিসেবে লেপ তোষক বানাতে ক্রেতারাও ভিড় করছেন দোকানগুলোতে। অনেকেই ব্যস্ত নিজের পুরনো লেপ-তোষক মেরামতে।
পৌষ ও মাঘ এ দুই মাস শীতকাল। তবে বাংলাদেশে কার্তিক মাসের মাঝামাঝি দিক থেকেই শীত শুরু হয়ে যায়। তাই শীত মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি হিসাবে ব্যবসায়ীরা গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী লেপ-তোষক তৈরি করে দোকানে মজুদ করে রাখছেন।
শীত মৌসুমে গ্রাম অঞ্চলে বিয়ের ধুম পড়ে যায়। গ্রাম্য সংস্কৃতি অনুযায়ী নতুন কনের সঙ্গে লেপ, তোষক, জাজিম, বালিশ, কোল বালিশসহ বিভিন্ন সামগ্রী উপহার হিসেবে দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। যার ফলে সব মিলিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন সিলেটের কারিগররা। শীত মৌসুমে এ অঞ্চলে তুলনামূলক শীতের প্রভাব বেশি থাকে। শীত মোকাবেলায় আগাম প্রস্তুতি হিসেবে লেপ তোষক বানানোর কাজ শুরু হয় সেপ্টেম্বর-অক্টোবর থেকেই।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ও কারিগররা জানান, করোনা পরিস্থিতির কারণে গত বছরের তুলনায় এবারের শীতে লেপ-তোষকের চাহিদা কম। তাছাড়াও এই অঞ্চলে এখনো ধান কাটা পুরোপুরি শেষ হয়নি। তাই গ্রামাঞ্চল থেকে লেপ-তোষকের চাহিদা তেমন আসছে না। তবে শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চাহিদা বাড়তে পারে- এমনটাই আশা করছেন ব্যবসায়ীরা।
বিভাগীয় শহরের বিভিন্ন দোকানে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, শীতের আগাম প্রস্তুতির জন্য লেপ-তোষক বানাতে দোকানে ভিড় করছেন ক্রেতারা। কারিগররাও এসব তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
সিলেটের বিভিন্ন অঞ্চলে লেপ–তোষক বানানোর প্রায় শতাধিক কারিগর রয়েছেন। এ বছর একটি লেপ তৈরি করতে ৮শ টাকা থেকে ১৫শ টাকা পর্যন্ত খরচ হচ্ছে। তোষক বানাতে খরচ পড়ছে ১ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩ হাজার টাকা। এক্ষেত্রে একটি লেপ বা তোষক তৈরিতে একজন কারিগর ১৫০-২০০ টাকা, সিঙ্গেল লেপ ১৫০ টাকা ও ডাবল ২০০ টাকা এবং জাজিম তৈরিতে ৫০০ টাকা করে মজুরি পান।
রহমান ক্লথ স্টোর এন্ড বোর্ডিং সেন্টার এর স্বত্বাধিকারী সুয়েব আহমদ জানান, একটি লেপ তৈরিতে সময় ব্যয় হয় ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা। আকার ও মানভেদে সিঙ্গেল লেপ ৮০০ থেকে ২২০০ টাকা পর্যন্ত দাম হয়ে থাকে এবং ডাবল মান ও প্রকারভেদে ১২০০ থেকে ২২০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। ঝুটের তৈরি সিঙ্গেল তোষকের দাম ৭০০ থেকে শুরু করে ৯৫০ টাকা পর্যন্ত এবং ডাবল ১১০০ টাকা থেকে শুরু করে ১৯০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
বর্তমানে কেজিপ্রতি শিমুল তুলা বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা। এবছর জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রতিটি জিনিসের উপর গড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা বেশি লাগছে। একটি ৬০ থেকে ৭০ কেজি ওজনের জাজিম তৈরি করতে গড়ে সময় প্রয়োজন হয় পাঁচ ঘণ্টা। তুলার তৈরি জাজিম সর্বনিম্ন মূল্য তিন থেকে চার হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে এবং নারিকেলের ছোপার তৈরি চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম পড়ে থাকে।
লেপ তৈরি করতে দোকানে এসেছেন শহরের এক বাসিন্দা মাহিন আহমদ জানান, শীতকে প্রাধান্য দিয়ে আগেই এসেছেন লেপ তৈরি করাতে। তার ধারণা, শীত জেঁকে বসলে কারিগররা আরও বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়বেন। এজন্য তিনি আগেই এসেছেন লেপ তৈরি করাতে।
সিলেট নগরীর বন্দরবাজার, তলতলা, কাজিরবাজার, জিন্দাবাজার, মদিনা মার্কেট, সুবিদবাজার, নাইরপুল পয়েন্টে ঘুরে একই অবস্থা দেখা যায়।