’শেষটা রাঙাতে মেসি-রোনালদো সর্বোচ্চটা দেবে’

দৈনিকসিলেট ডেস্ক :
একজনের বয়স ৩৭, অন্যজনের ৩৫। কাতারের আসরই হয়তো তাদের শেষ বিশ্বকাপ। একই মত জামাল ভূঁইয়ারও। আলাপচারিতায় বাংলাদেশ অধিনায়ক জানালেন, তার মনে হচ্ছে এবারের বিশ্বকাপেই এই দুই মহাতারকার শেষ। আর শেষটা রাঙিয়ে রাখতে, নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে যে সবটুকু নিংড়ে দেবেন, তা নিয়ে একবিন্দুও সংশয় নেই জামালের।
চার বছরেরও বেশি সময়ের অপেক্ষার প্রহর পেরিয়ে আগামী ২০ নভেম্বর পর্দা উঠবে কাতার বিশ্বকাপের। বৈশ্বিক ফুটবলের সবচেয়ে বড় আসরে আরও একবার পা পড়বে মেসি ও রোনালদোর। ফুটবলের সবুজে যাদের ব্যক্তিগত দ্বৈরথ চলছে বছরের পর বছর ধরে। যাদের শ্রেষ্ঠত্বের প্রশ্নে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যান ফুটবলপ্রেমীরা।
ক্লাব ফুটবলে দুজনের দলীয় ও ব্যক্তিগত প্রাপ্তির অন্ত নেই। মেসি সাতবারের বর্ষসেরা তো রোনালদো পাঁচবার। পর্তুগিজ তারকার ঝুলিতে পাঁচটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ট্রফি তো মেসির চারটি। এতসব প্রাপ্তির ভিড়ে না পাওয়ার একটি পাতায় দুজনে হাঁটছেন একেবারে পাশাপাশি; বিশ্বকাপের ট্রফি আজও ছুঁয়ে দেখা হয়নি কারো। মেসি একবার গিয়েছিলেন খুব কাছে, ২০১৪ সালে। কিন্তু জার্মানির কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গ। রোনালদো ধারেকাছেই যেতে পারেননি আজও।
২০২১ সালে কোপা আমেরিকার শিরোপা জেতা আর্জেন্টিনার জার্সিতে এখন পর্যন্ত সেরা অর্জন মেসির। দীর্ঘদিন ধরে আর্জেন্টাইন সমর্থকদের তোপের মুখে থাকা এই ফরোয়ার্ড কোপা জিতে কাঁধের ভার কিছুটা কমিয়েছেন। রোনালদোকে অবশ্য পর্তুগিজ সমর্থকদের তোপের মুখে পড়তে হয়নি। ২০১৬ সালের ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ ও ২০১৮-১৯ মৌসুমের উয়েফা নেশন্স লিগের শিরোপা এনে দিয়ে তিনি দেশের ফুটবলপ্রেমীদের নয়নমণি। কিন্তু প্রাপ্তির আনন্দ যে বাড়িয়ে দেয় প্রত্যাশাও। দুজনের কাছে তাই দুই দেশের সমর্থকরা এবার চান বিশ্বকাপ।
সম্প্রতি দুজনের সময়টা যাচ্ছে দুরকম। পিএসজিতে আলো ছড়াচ্ছেন মেসি। যদিও পায়ে আগের মতো গোলের ফুল ফুটছে না শতদলে, কিন্তু সুযোগের সদ্ব্যবহার এবং গোলের সুযোগ তৈরি করে দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি এখনও আগের মতোই কার্যকরী এবং ধারাল। বিস্ময়কর হলেও সত্যি, এর ঠিক উল্টো মেরুতে রোনালদো। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে নিয়মিত নন। পর্তুগালের হয়ে গোলের গোল খরায় ভুগছেন ইদানিং।
বাংলাদেশ অধিনায়ক জামালের মনে হচ্ছে, এবারের বিশ্বকাপে শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে মরিয়া থাকবেন দুজনেই।
“এটা রোনালদো ও মেসি দুজনের শেষ বিশ্বকাপ হবে। তাই আমি মনে করি, এখন তারা দুজনে কেন বিশ্বসেরা, তার প্রমাণ দিতে নিজেদের সেরাটা উজাড় করে দিবে।”
ফেভারিট দল কোনটি, এ প্রশ্নে জামালের উত্তর শুনে বিস্মিত হতে পারেন যে কেউ। রেকর্ড পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল, কিংবা মেসির আর্জেন্টিনা, এমবাপে-বেনজেমাদের ফ্রান্স এবং জার্মানিকে যেখানে এগিয়ে রাখছেন অনেকে, সেখানে বাংলাদেশ অধিনায়কের ফেভারিট ডেনমার্ক!
এবারের আসরে ‘ডি’ গ্রুপে ফ্রান্সে, অস্ট্রেলিয়া ও তিউনিসিয়ার সঙ্গে আছে ডেনমার্ক। বিশ্বকাপে ডেনিশদের সেরা সাফল্য ১৯৯৮ সালে কোয়ার্টার-ফাইনালে ওঠা। এবারও তাদের পক্ষে বাজি ধরার লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না খুব একটা। কিন্তু জামালের বেড়ে ওঠা ডেনমার্কের আলো-বাতাসে বলে দলটি তার ফেভারিট।
“বিশ্বকাপের আমার ফেভারিট ডেনমার্ক। এবং এর বাইরে আমার ফেভারিট দল বাংলাদেশ।”
বাংলাদেশ দলের মাঝমাঠের নির্ভরতা জামাল, এবারের বিশ্বকাপের সম্ভাব্য উদীয়মান তারকা হিসেবে তিনি বেছে নিয়েছেন ইংল্যান্ডের মিডফিল্ডার জুড বেলিংহ্যামকে। অবশ্য ১৯ বছর তরুণ সাম্প্রতিক সময়ের আলো ঝলমলে পারফরম্যান্স দিয়ে উঠে এসেছেন পাদপ্রদীপের আলোয়। কেবল জামাল নয়, বেলিংহ্যামকে মনে ধরেছে ইউরোপের বড় বড় ক্লাবগুলোরও। তারাও চাইছে এই তরুণকে দলে ভেড়াতে।
ক্লাব ফুটবলে বেলিংহ্যাম বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের হয়ে ৯১ ম্যাচ খেলে ১১ গোল করেছেন, সতীর্থদের দিয়ে গোল করিয়েছেন ১৯টি। ২০২০ সালে ইংল্যান্ডের জার্সিতে অভিষিক্ত হওয়া এই ছয় ফুট এক ইঞ্চি লম্বা তরুণ কাতার বিশ্বকাপেও কোচ গ্যারেথ সাউথগেটের মাঝমাঠের সেরা অস্ত্রের একটি। জামালেরও মনে হচ্ছে, বেলিংহ্যামের জন্য সামনে অপেক্ষা করছে দারুণ ভবিষ্যৎ।
“ইংল্যান্ডের বেলিংহ্যামকে আমার পছন্দের। আমি মনে করে চমৎকার একজন খেলোয়াড় এবং বিশ্বের সেরাদের একজন হওয়ার গুণ তার মধ্যে আছে।”