পররাষ্ট্রমন্ত্রীর শিলচর বিজয়

মুহিত চৌধুরী
ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপনে ‘শিলচর-সিলেট উৎসব ২০২২’ গত ২,৩ ডিসেম্বর ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের শিলচর শহরে অনুষ্ঠিত হয়েছে। যার আয়োজনে ছিলো ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন।
বর্নাঢ্য এই উৎসবে বাংলাদেশের সফল পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এমপির নেতৃত্বে বাংলাদেশ থেকে সংসদ সদস্য,রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, কবি-সাহিত্যিক,সাংবাদিক শিল্পী, ব্যবসায়ীসহ প্রায় দেড় শতাধিক প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন।
অন্যদিকে দিল্লির কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধিসহ আসাম, মনিপুর ও মেঘালয়ের মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্য, কবি-সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবিগন উপস্থিত ছিলেন।
দুই দিন ব্যাপী এই উৎসবে সিলেট এবং আসামের ভাষা, সংস্কৃতি,স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য,পর্যটন, নদী, পানি ও জলবায়ু নিয়ে নানাভাবে আলোচনা হয়। যা ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ককে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
শিলচর-সিলেট উৎসবে সকলের আগ্রহের কেন্দ্র বিন্দুতে ছিলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এমপি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বক্তব্য রাখছিলেন তখন অনুষ্ঠানস্থলে চলে পিন পতন নিরবতা। সবাই মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনছিলো তাঁর বক্তব্য। এমন জ্ঞানগর্ব বক্তব্য যেন তারা আগে শুনেনি।
তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা প্রতিটি রাষ্ট্রের উন্নয়নের সোপান। তাই স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে আমাদেরকে আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে।আমাদের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করেছেন। তিনি বলেছিলেন বাংলাদেশের ভূমি সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত করতে দেয়া হবে না। প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগের ফলে ভারত এবং বাংলাদেশ উভয়ই লাভবান হচ্ছে। বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ছে এবং দেশ উন্নত হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, শিলচর এবং আসামের সাথে সিলেটের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। ভাষা সংস্কৃতি এবং পিঠাপুলি খাবারদাবার সব এক এবং অভিন্ন। এই ফেস্টিভাগের মাধ্যমে সিলেট এবং শিলচর তথা আসামের সাথে সিলেটবাসীর আরো যোগাযোগ বৃদ্ধি পাবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ইংরেজি বক্তব্যের কপি সংগ্রহ করতে ভারতের সাংবাদিক, সুধী এবং কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে তৎপরতা চালাতে দেখা যায়।
দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত এই উৎসবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এমপি অত্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করেন।
৩ ডিসেম্বর সকালে ভারতের আসামে অবস্থিত ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি (এন আই টি), শিলচরে ভারত রত্ন ড. এ পি জে আব্দুল কালাম লার্নিং অ্যান্ড রিসোর্স সেন্টারে ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ এবং লাইব্রেরি প্রাঙ্গনে বঙ্গবন্ধু গার্ডেন উদ্বোধন করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন, এনআইটি শিলচরের ডাইরেক্টর প্রফেসর রজত গুপ্ত মহিবুর রহমান মানিক, এমপি, ইকবালুর রহিম, এমপি, গাজী মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ, এমপি, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী, ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মুস্তাফিজুর রহমান, এনআইটি শিলচরে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীবৃন্দ।
সফরকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রাজ কুমার রঞ্জন সিংহ এবং আসাম রাজ্যের মন্ত্রীদের সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন।
ড. মোমেন সিলেট-শিলচর বাস চলাচল শুরু করতে আসাম সরকারের সাথে আলোচনা করেছেন।
গুহাটি-সিলেট ফ্লাইট চালু নিয়েও কথা বলেছেন। তিনি মনে করেন আসাম-গুহাটির যাত্রীরা গুহাটি টু সিলেট হয়ে সরাসরি লন্ডন-দুবাই-জেদ্দা যেতে পারবেন। যার ফলে দু দেশের পারষ্পরিক সম্পর্ক এবং ব্যবসা-বানিজ্য আরও বৃদ্ধি পাবে। বিষয়টি নিয়ে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে আসাম রাজ্য সরকার।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড.মোমেনের বক্তব্যের জবাবে আসাম রাজ্য সরকারের, বন পরিবেশ ও মৎস্যবিষয়ক মন্ত্রী চন্দ্র মোহন পাটোয়ারী বলেন- বাংলাদেশের সাথে ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্ক সদৃঢ়। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে আমদানি-রপ্তানি বিষয়ে কথা হয়েছে। শিলচর-সিলেট বাস চলাচল এবং গুহাটি-সিলেট-ঢাকা বিমান চলাচল শিগগিরই চালু করতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে চিঠি পাঠাবে আসাম রাজ্য সরকার। যা বাস্তবায়িত হলে ব্যাবসা-বাণিজ্যে দুই দেশ উপকৃত হবে।
অন্যদিকে শিলচরের স্থানীয় সংসদ সদস্য ড. রাজদিপ রায় বলেন- গুহাটি টু ঢাকা ফ্লাইট না করে গুহাটি টু সিলেট-ঢাকা করলে সেখানে বেশি যাত্রী হবে। যার ফলে দুই দেশ নয়, তিন দেশের সম্পর্ক সৃষ্টি হবে। শিলচরের গ্রীণফিল্ড এয়ারপোর্ট চালু হলে ভবিষ্যতে শিলচর-সিলেট এবং শিলচর-ঢাকা ফ্লাইট চালু হতে পারে।
এসব বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম, সাংসদ গাজী মোহাম্মদ শাহ নেওয়াজ ও সাবেক পররাষ্ট্রসচিব শমসের মবিন চৌধুরী।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনকে দেখা এবং তাঁর সাথে ছবি তোলা নিয়ে ভারতের শিক্ষার্থী, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ এবং সুধীজনের হুড়োহুড়ি লেগে যেতে দেখা যায়।
শিলচর থেকে সড়ক পথে যখন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর গাড়ি বহর সিলেট আসছিলো তখন রাস্তার পাশে ফুল হাতে দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থীরা তাকে স্বাগত জানায়। করিমগঞ্জ এলাকায় মন্ত্রী গাড়ি বহর থামিয়ে শিক্ষার্থীদের ভালোবাসা গ্রহন করেন।
সর্বশেষ করিমগঞ্জ চেম্বার এবং আমদানী রপ্তানীকারকরা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এমপি সাথে এক বৈঠক করেন রবিবার সকাল সাড়ে ৯টায়। এসময় তারা ভিসা, আমদানী-রপ্তানীসহ নানা সমস্যার কথা তোলে ধরেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মনোযোগ সহকারে তাদের বক্তব্য শুনেন এবং সমাধানের আশ্বাস দেন।
অনুষ্ঠানস্থলে থাকা করিমগঞ্জের এক সাংবাদিকের সাথে পরিচয় হয়। তাঁর নাম অভিব্রত রায়। তিনি স্থানীয় একটি প্রিন্ট পত্রিকায় কাজ করেন আবার ফেইসবুক পেইজে নিউজ চ্যানেল চালান।
অভিব্রত রায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, গত দুইদিন আমি মোমেনজির সাথে ছিলাম, উনার সব বক্তব্য আমি শুনেছি, খুব মেধাবী লোক। উনিতো শিলচর জয় করে ফেলেছেন। সবাই তাঁর কথা বলাবলি করছে।আপনাদের প্রধানমন্ত্রীর সাথে এরকম একজন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আছেন বলে বাংলাদেশ এতো উন্নতি করছে।