দেখার হাওরে পানি নেই, বোরো জমি নিয়ে বিপাকে কৃষকেরা

দৈনিকসিলেট ডটকম :
সুনামগঞ্জের দেখার হাওর থেকে পানি দ্রুত নেমে যাওয়ায় এই হাওরে প্রায় ৫০০ হেক্টর জমিতে এবার বোরো আবাদ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা। সেচ করতে না পারলে এসব জমিতে বোরো আবাদ সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন তাঁরা। কৃষকদের অভিযোগ, জলমহালে মাছ ধরার সুবিধার্থে পানিনিষ্কাশন করায় এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত নেমে গেছে হাওরের পানি। যেসব জমিতে এখন বোরো আবাদ করার কথা, সেসব জমি পানির অভাবে ফেটে চৌচির হয়ে আছে। পানি সেচ করা ছাড়া এসব জমিতে বোরো আবাদ কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
হাওরপাড়ের কৃষকেরা জানান, হাওরে বোরো আবাদ চলছে। অনেকেই বীজতলা তৈরি করেছেন। চারা নিয়ে বসে আছেন। দ্রুত এসব চারা লাগাতে হবে। পানির সংকটে বোরো আবাদ না করতে পারলে এলাকার সহস্রাধিক কৃষক পরিবার সমস্যায় পড়বে। এসব কৃষকের অন্তত ৫০০ হেক্টর জমি অনাবাদি থাকবে।
এলাকাবাসী এসব জমিতে বোরো আবাদের জন্য সেচের ব্যবস্থা করতে জেলা কৃষি বিভাগ ও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) কর্মকর্তাদের কাছে দাবি জানিয়েছেন। এই দুই বিভাগের কর্মকর্তারা সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার আশ্বাস দিলেও এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
স্থানীয় কৃষকেরা জানান, জেলার দেখার হাওরটি চারটি উপজেলাজুড়ে বিস্তৃত। এই হাওরে সদর, শান্তিগঞ্জ, দেয়ারাবাজার ও ছাতক উপজেলার বেশ কিছু এলাকার কৃষকদের জমি আছে। এসব জমিতে এখন বোরো ধান আবাদ করার কথা। কিন্তু এবার নভেম্বর মাসে স্থানীয় একটি জলমহালে মাছ ধরার সুবিধার জন্য ইজারাদারের লোকজন বাঁধ কেটে দেন। এতে হাওর থেকে দ্রুত পানি নেমে গিয়ে জমি শুকিয়ে যায়। এখন পানি না থাকায় জমি ফেটে চৌচির হয়ে আছে। এ কারণে জমি আবাদ করা যাচ্ছে না। বোরো আবাদ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তাঁরা।
মোল্লাপাড়া ইউনিয়নের দুর্লভপুর গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য ওলিউর রহমান বলেন, তাঁদের পরিবার হাওরে প্রতিবছর ১৫ থেকে ২০ একর জমিতে বোরো আবাদ করে। কিন্তু এবার তাঁদের জমি থেকে নভেম্বর মাসেই পানি নেমে গেছে। পানিসংকটের কারণে কোনো জমিতে বোরো ধান লাগাতে পারছেন না। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে তাঁরা কৃষি বিভাগ, বিএডিসির কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেছেন।
একই গ্রামের বাসিন্দা ফেদাউর রহমান বলেন, এলাকার কৃষকেরা এর আগে কখনো এভাবে সমস্যায় পড়েননি। এখন চারা নিয়ে বসে আছেন। সেচের ব্যবস্থা হলেই ধান লাগানো শুরু করবেন। এক সপ্তাহ আগে বলা হয়েছে সেচপাম্পের ব্যবস্থা হয়েছে। কিন্তু এখনো এলাকায় পাম্প আসেনি। কৃষকেরা কী করবেন, এ নিয়ে চিন্তিত।
একই ইউনিয়নের মোল্লাপাড়া গ্রামের প্রবীণ কৃষক আবদুল মুকিত বলেন, ‘বন্যায় এমনিতেই নিঃস্ব হয়ে গেছি। এখন জমিত ধান লাগাইতে পাররাম না। ধান না লাগাইলে চলতাম কিলা, খাইতাম কিতা।’ এলাকার ভবানীপুর গ্রামের কৃষক মো. মোশাহিদ আলী বলেন, বোরো ধানের ওপরই এলাকার কৃষকেরা নির্ভরশীল। এই ধান না পেলে পুরা বছর কষ্টে যায়। সরকার সেচের উদ্যোগ না নিলে কৃষকেরা জমিতে ধান লাগাতে পারবেন না।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, ‘মূলত জলমহালের পানি শুকানোর ফলেই এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। বিএডিসির সঙ্গে কথা বলে পাঁচটি সেচপাম্পের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দ্রুত সেগুলো ওই এলাকায় নেওয়া হবে। আশা করি কৃষকেরা তাঁদের জমি আবাদ করতে পারবেন।’
সুনামগঞ্জে এবার ২ লাখ ২২ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে জানিয়ে বিমল চন্দ্র সোম বলেন, এ পর্যন্ত ৩০ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। কৃষকেরা বোরো আবাদে ব্যস্ত আছেন। হাওরে সর্বোচ্চ পরিমাণ জমিতে বোরো আবাদ নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে।